ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

শুধু স্বাদই নয়, মানবস্বাস্থ্যের উপকারী ‘বোয়াল মাছ’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২২
শুধু স্বাদই নয়, মানবস্বাস্থ্যের উপকারী ‘বোয়াল মাছ’ হাওরের জোড়া বোয়াল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন 

মৌলভীবাজার: অগ্রহায়ণ নিয়ে এসেছে হাওরবিল শুকিয়ে যাওয়ার দিন। বর্ষাপরবর্তী রূপ অর্থাৎ জলাভূমিতে পানির প্রাচুর্যতা আর অবশিষ্ট নেই প্রকৃতিতে।

এতদিনের পানিপূর্ণ জলাশয়গুলো আজ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত বা সম্মিলিত উদ্যোগে বিল শুকিয়ে মাছ ধরার পালা চলছে এখন।
 
একদিকে ধান কাটার দৃশ্য, অন্যদিকে বিল শুকানো পালা। প্রতিবছর এভাবে বিল শুকিয়ে প্রাকৃতিক মাছ ধরা আর খাওয়ার বার্তা নিয়ে আসে হেমন্ত। হাওরপাড়ের মৎস্যনির্ভর মানুষগুলোর তাই অন্যরকম এক আনন্দ। অধিকতর লোকপ্রিয় প্রজাতির কোনো মাছ ধরে শহরের সৌখিন মৎস্যপ্রেমীদের কাছে ভালো দামে বিক্রির সুপ্ত ইচ্ছা। তাতেই অর্থিক সমৃদ্ধি।

মৌলভীবাজারের হাইল হাওর সংলগ্ন বরুনা গ্রামের মৎস্যজীবী সিফিল মিয়া। মধ্য বয়সী ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে মাছবিক্রির সঙ্গে জড়িত।  সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন খুব সকালে স্থানীয় আড়ত থেকে পছন্দসই ভালো জাতের মাছ কিনে শহরের সৌখিন মাছপ্রেমী ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে থাকেন তিনি। তাতেই দুটো বাড়তি টাকা উপার্জন হয়। বাজারে বসে মাছ বিক্রি করা অন্য ব্যবসায়ীদের থেকে একটু ভালো এ আয় তার।

সিফিল মিয়ার ঝুড়িতেই পাওয়া গেল হাওরের এক জোড়া বোয়াল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো সরাসরি হাওরের বোয়াল স্যার। সারাবছর পাওয়া যায় না। হাওরবিল শুকিয়ে যাওয়ার এই সময়টাতে এ মাছগুলো পাওয়া যায়। খুব স্বাদের মাছ। কেজি প্রতি দাম ৬শ টাকা। ’



মৎস্য অধিদপ্তর, ঢাকা এর সহকারী প্রকল্প পরিচালক সুলতান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, বোয়াল মাছ ক্যাটফিশ প্রজাতির। এই মাছ বড় নদী, হ্রদ, এবং জলা জায়গাতে পাওয়া যায়। এই মাছের হিংস্রতার জন্য এই মাছকে ‘মিষ্টিজলের হাঙর’ বলা হয়। বোয়াল মাছের ইংরেজি নাম Helicopter catfish এবং বৈজ্ঞানিক নাম Wallago attu। এই মাছটি ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং আরও অনেক দেশে পাওয়া যায়।

এই মাছের শারীরিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, বোয়াল মাছের শরীর দীর্ঘ হয়, উভয় পাশ চাপা হয় এবং ক্রমশ লেজের দিকে সরু হয়। পেছনের দিক সোজা হয়। মুখ বড় আকারের এবং মুখের মধ্যে কিছু দাঁত আছে। মাথা নরম ত্বক দিয়ে আচ্ছাদিত হয়। নিম্নচোয়াল ওপরের চোয়ালের তুলনায় দীর্ঘ। দুই জোড়া গোফ আছে এবং এক জোড়া খুব দীর্ঘ হয়। তাদেরকে এই গোফের জন্য ক্যাটফিশ বলা হয়। বক্ষের দিকে পাখনায় কাঁটা থাকে। লেজের পাখনা দুই ভাগে বিভক্ত। বোয়ালের শরীরের রং ফ্যাকাশে সাদা। তাদের শরীরের কোনো আঁশ নেই।  

মাছের আকৃতি, খাদ্যতালিকা এবং প্রজনন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘একটি বড় আকারের বোয়াল মাছ ১৩০ সেমিন্টিমিটার দীর্ঘ হতে পারে। বয়স্ক বড় আকারের মাছের ওজন প্রায় ২০-২৫ কেজি। বোয়াল একটি উচ্চ শক্তিসম্পন্ন মাছ। বোয়াল মাছ মাংসাশী হয়। তারা বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র মাছ এবং প্রাণীকে জল থেকে খায়। ছোট বোয়ালগুলো বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র মাছ এবং কীটপতঙ্গ খায়।

বোয়াল মাছ সাধারণত রাতে খেতে পছন্দ করে। তারাও মৃত প্রাণীদের পচা দেহ খায়। তাদের মাংস খাওয়ার প্রবণতার জন্য এদেরকে মিষ্টি জলের হাঙ্গর বলে। তারা সাধারণত জুলাই থেকে আগস্ট মাসে ডিম পাড়ে।  বোয়াল মাছের শরীরে থাকা ‘ওমেগা থ্রি’ ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২২ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।