ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

দর্শকের মন কেড়েছে যাত্রাপালা ‘জেল থেকে বলছি’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
দর্শকের মন কেড়েছে যাত্রাপালা ‘জেল থেকে বলছি’ নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে ‘জেল থেকে বলছি’ যাত্রাপালার মঞ্চায়ন

ঢাকা: আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য যাত্রাপালা আধুনিকতার বিষবাষ্পে হারিয়ে যাওয়ার পথে। শেকড়ের এই লোক সংস্কৃতির পুনরুদ্ধারে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি।

তারই ধারাবাহিকতায় মঞ্চস্থ হলো নেত্রকোনার টাইগার রুবেল নাট্য সংস্থার যাত্রাপালা ‘জেল থেকে বলছি’।

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে এই যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়। এটির পালাকার উদয় ভানু। পালাটি পরিচালনা করেছেন মহিবুল ইসলাম রুবেল (টাইগার রুবেল)।

সামাজিক শিক্ষা বা লোকশিক্ষার ক্ষেত্রে যাত্রাপালার আছে বলিষ্ঠ ভূমিকা। আদি যাত্রাপালার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় শুরুর দিকের যাত্রাপালাগুলো মূলত কাহিনী নির্ভর। এই পালাটিও ঠিক তেমন বলে মন্তব্য করেন এর পরিচালক।

তিনি বলেন, এটি একেবারেই গ্রামবাংলার একটি সহজ সরল পরিবারের কাহিনী। সাধারণ বাঙালি ঘরের একটি পরিবারের কাহিনী উঠে এসেছে এই পালাটিতে। যদিও লেখক আরও ২০/২৫ বছর আগে লিখেছেন, তবুও এটি এখনকার সময়ের সাথে পুরোপুরি মানানসই। সেদিক থেকে দর্শক এটি খুব ভালোভাবে নিয়েছে। এর আগেও যতগুলো জায়গায় এটা মঞ্চস্থ হয়েছে, সব জায়গাতেই দর্শকপ্রিয় হয়েছে।



টাইগার রুবেল বলেন, আধুনিককালে এসে যাত্রাপালার কথিত যে আধুনিক সংস্করণ বর্তমানে দেখা যায়; ভালো কোনো গল্প নেই, পালার আমেজ নেই, ডিজে বাজিয়ে পালার আসরে নারী-পুরুষের যৌথ উচ্ছৃঙ্খলা যখন যাত্রার উপজীব্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে তখন ‘জেল থেকে বলছি’ যাত্রাপালাটি এসব কিছুর বাইরে গিয়ে আমাদের মূল যাত্রার স্বাদ দেয়। সঙ্গে সামাজিক শিক্ষার কথা বলে। একইসঙ্গে সুস্থ ধারার বিনোদনেরও একটি মাধ্যম।

টাইগার রুবেল নাট্য সংস্থার উপদেষ্টা মো. দিদারুল ইসলাম বলেন, যাত্রা একটি লোকশিক্ষা। এটি মা, মাটির কথা বলে। দেশের ও সমাজের কথা বলে। আদি সংস্কৃতির সেই যাত্রা এইকালে সেই পুরনো স্মৃতিগুলোকে আমরা আবার সামনের দিকে নিয়ে আসতে চাই। তারই একটি প্রয়াস ছিল আমাদের আজকের মঞ্চায়ন।

যাত্রাপালাটির দর্শক সোহানুজ্জামান মোহন বলেন, আধুনিককালে এসে যাত্রাপালার কথিত যে আধুনিক সংস্করণ বর্তমানে দেখা যায়, সেসব দেখা অনেকটা কোনরকমে যাত্রাপালা দেখার সাধ মেটানোর মতো ব্যাপার। ভালো কোনো গল্প নেই, নেই পালার আমেজ। ডিজে বাজিয়ে পালার আসরে নারী-পুরুষের যৌথ উচ্ছৃঙ্খলতা আজকাল যাত্রার উপজীব্য বিষয়। সেসব জায়গা থেকে বের হয়ে এসে ‘জেল থেকে বলছি’ পালাটি একটি অসাধারণ মঞ্চায়ন।



চপল মাহমুদ নামে অপর এক দর্শক বলেন, এই পালাটির শিল্পী ও কলাকুশলীদের অভিনয় মন জয় করে নিয়েছে। বিশেষ করে যাত্রাপালার সঙ্গে পরিবেশ মিলিয়ে যে আবেগ ও সাউন্ড কোয়ালিটি, সেটিও মানিয়েছিল দারুণ। ঠিক যেন ছোটবেলায় গ্রামের মাঠে বসে যে যাত্রাপালা দেখতাম, তার স্বাদ পেলাম। আর কাহিনীও বেশ চমৎকার।

পালাকার উদয় ভানুর ‘জেল থেকে বলছি’ পালাটি গড়ে উঠেছে মূলত একটি পরিবারের দুই ভাইকে কেন্দ্র করে। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর বড় ভাই দায়িত্ব নেন তার ছোট ভাইয়ের দেখাশোনা করার। এভাবেই চলতে থাকে দিন। এরপর একদিন ছোট ভাইয়ের বিয়ে হয়। তখন ছোট ভাই ও তার বউ বাড়ি থেকে বের করে দেন বড় ভাই ও তার পরিবারকে। এমন নানা ঘটন-অঘটনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলে যাত্রার কাহিনী। যেখানে সর্বশেষ প্রধান চরিত্রের স্থান হয় কারাগারে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘জেল থেকে বলছি’ ছাড়াও মঞ্চায়ন হয় আরও পাঁচটি যাত্রাপালা। দুপুর ২টা থেকে ক্রমান্বয়ে বগুড়ার সোনালী নাট্য সংস্থার যাত্রাপালা ‘মিলনমালা’, সিরাজগঞ্জের রাজু অপেরার যাত্রাপালা ‘লাইলি মজনু’, ঝিনাইদহের উদয়ন নাট্যগোষ্ঠীর যাত্রাপালা ‘কুরুক্ষেত্রের কান্না’, ময়মনসিংহের সুইস যাত্রা ইউনিটের যাত্রাপালা ‘নিচু তলার মানুষ’ এবং টাঙ্গাইলের তুরাগ বেহুলা অপেরার যাত্রাপালা ‘গুনাই বিবি’ও মঞ্চায়িত হয় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।