ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ভুতুড়ে দ্বীপে দাগি অপরাধীদের সঙ্গে থাকেন যে নারী

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
ভুতুড়ে দ্বীপে দাগি অপরাধীদের সঙ্গে থাকেন যে নারী

নিজের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর জন্য ২০১১ সালে ইতালির পিয়ানোসা নামে এক ভুতুড়ে দ্বীপে কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলেন জিউলিয়া মানকা। দ্বীপে এক মায়ার বাঁধনে নিজেকে জড়িয়ে ফেললেন তিনি।

দ্বীপটি তার হৃদয়কে এতটাই নাড়িয়ে দিয়েছিল যে, সেখান থেকে বাড়ি ফেরার কথা আর চিন্তাই করেননি। পরে সেখানেই বসবাস শুরু করেন তিনি।

জেনে আশ্চর্য হবেন যে, জিউলিয়াই একমাত্র নারী, যিনি ওই দ্বীপে রয়েছেন। সেখানে আর কোনোও নারী বাসিন্দা নেই। পিয়ানোসা এমন একটা দ্বীপ, যেখানে অতীতে ইতালির বন্দীদের রাখা হতো। ওই দ্বীপে একটাই মাত্র হোটেল রয়েছে। নাম ‘হোটেল মিলেনা’। ২০১১ সালে পিয়ানোসা গিয়ে ওই হোটেলেই উঠেছিলেন জিউলিয়া।

ওই হোটেলের সব কর্মীই দাগি অপরাধী। জেলের ওই আসামিরাই হোটেলের দেখভাল করেন। বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর প্রচেষ্টাতেই ওই হোটেলে আসামিদের নানা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চলে তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্র।

বেড়াতে গিয়ে এমন কাণ্ড দেখে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন জিউলিয়া। জীবনে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া হয়েছে ওই অপরাধীদের। এ ভাবনাটা আকৃষ্ট করেছিল জিউলিয়াকে। আর তার পরই সেখানে পাকাপাকিভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি।

দেখতে দেখতে ১২ বছর হয়ে গেল। ওই দ্বীপ আর হোটেলেই এখন জিউলিয়ার সংসার। দ্বীপে যে দু’জন স্থায়ী বাসিন্দা রয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন জিউলিয়া। বেড়াতে গিয়ে যে হোটেলে উঠেছিলেন, সেই হোটেলেরই ম্যানেজার এখন জিউলিয়া।

জিউলিয়া যখন অতিথি হিসেবে ওই হোটেলে ছিলেন, তখন হোটেলের ম্যানেজার তাকে বলেছিলেন যে, হোটেল পরিচালনায় অর্থাভাব রয়েছে। ফলে অর্থাভাবে যে কোনো দিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে হোটেলটি।

অর্থাভাবে যদি সত্যিই হোটেলটি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ওই আসামিদের আবার জেলে ফেরত যেতে হবে। এ হোটেলের দৌলতে সমাজে মূলস্রোতে ফেরার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা, তা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। আর এটাই নাড়িয়ে দিয়েছিল জিউলিয়াকে।

অতীতে ‘ট্যুরিস্ট এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করতেন জিউলিয়া। তার কথায়, ‘হোটেল ম্যানেজারের কথা শুনে আমার মনে হয়েছিল, কিছু একটা করতে হবে। তা না হলে তারা (আসামি) আবার জেলের ছোট্ট কুঠুরিতে দিন কাটাবেন। ’

এর পরই ইতালির টাসকানির বাসিন্দা জিউলিয়া ওই দ্বীপে পাকাপাকিভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ওই হোটেলেরই ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। প্রথম দিকে কোনও পারিশ্রমিকও নিতেন না। তার পরিচালনাতেই হোটেলের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হয়েছে।

ওই হোটেলে রয়েছেন এক জন কারারক্ষী। সেই সঙ্গে রয়েছেন ১০ জন পুরুষ। তারা প্রত্যেকেই অপরাধী। হোটেলের যাবতীয় কাজকর্ম তারাই সারেন। তাদের সঙ্গেই থাকেন জিউলিয়া।

ওই অপরাধীদের মধ্যে কেউ রান্নাঘর সামলান। আবার কেউ হোটেলের বাগানের দায়িত্বে রয়েছেন। কারও ওপর আবার খাবার পরিবেশনের ভার রয়েছে। কেউ আবার সাফাইয়ের কাজ করেন। এ কাজের জন্য তারা পারিশ্রমিকও পান।

হোটেলে রয়েছে ১১টি ঘর। থরে থরে সাজানো রয়েছে কাঠের আসবাবপত্র। হোটেলের ঘর থেকে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্যের দর্শনও পাওয়া যায় ভালো। আসলে দ্বীপটাই এমন একটি জায়গায় অবস্থিত যার আশপাশ দেখে মনে হবে যেন সব রূপরস ঢেলে দিয়েছে প্রকৃতি। হোটেলের চার পাশে রয়েছে পাইন গাছের সারি। সামনে সমুদ্র। হোটেলের বাইরে রয়েছে প্রাঙ্গণ। যেখানে বসার ব্যবস্থাও রয়েছে।

হোটেলে অতিথিদের জন্য রয়েছে রেস্তরাঁ, পানশালাও। অনেকেই ছুটি কাটাতে ওই দ্বীপে ঘুরতে যান। আর একমাত্র আস্তানা হিসেবে ওঠেন ওই হোটেলে। জন্মদিন বা বিয়েবাড়ির পার্টিরও আয়োজন করা হয় সেখানে।

জিউলিয়াকে ‘পিয়ানোসার রানি’ও বলেন কেউ কেউ। হোটেল সামলানোর পাশাপাশি দ্বীপে আসামিদের জন্য যে পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে, তার তদারকিও করেন তিনি।

আসামিদের সঙ্গে থাকতে ভয় করে না? জবাবে জিউলিয়া জানান, ‘অনেকেই বলেন আমি নাকি পাগল। তাই এমন কাজ করছি। কিন্তু আমি এখানে নিজেকে খুবই সুরক্ষিত মনে করি। কখনই আমার ভয় লাগেনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৩
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।