ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ জুন ২০২৫, ২০ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

হাতে তৈরি জিপের ফেরিওয়ালা

টিএম মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৮, মে ৮, ২০১২
হাতে তৈরি জিপের ফেরিওয়ালা

বগুড়া : লেখাপড়ায় ছিলেন ভীষণ অমনোযোগী। তাই স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরুনো হয়নি তার।

কিন্তু ১৯৬৮ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সেই খেলনা গাড়ি তৈরি করে জানান দিয়েছিলেন, সার্টিফিকেট থাক বা না থাক অনেক বড় কিছু করার ক্ষমতা তার আছে।

তিন দশক পর সেই সম্ভাবনাই সত্যে পরিণত করেন বেলাল হোসেন (৫৫)। নিজের হাতে তিনি তৈরি করলেন গাড়ি। এর জ্বালানি খরচ আর সব গাড়ির চেয়ে কম তো বটেই, এটি তৈরি করার খরচও একেবারে হাতের নাগালে।

কিন্তু প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে স্বপ্ন পূরণে বারবারই ব্যর্থ বগুড়ার সুলতানগঞ্জ পাড়ার আব্দুল গণি শেখের ছেলে বেলাল এখনো স্বপ্ন দেখেন তার হাতে তৈরি গাড়ি বাণিজ্যিকভাবে মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার।

তিনি মনে করেন, সরকার তাকে গাড়ি তৈরির কারখানা করার অনমুতিসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিলে বগুড়াসহ পাশ্ববর্তী অঞ্চলের কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ হাজার শ্রমিকের আয়ের পথ তৈরি হবে।    

যেভাবে শুরু
২০০০ সালের দিকে একটি বর্ষপঞ্জির (বাৎসরিক ক্যালেন্ডার) পাতায় খেলনা গাড়ির ছবি দেখে আগ্রহ হয় ওইরকম গাড়ি তৈরি করে তার ছেলে সোহাগকে উপহার দেওয়ার। যা ভাবা তাই কাজ, বর্ষপঞ্জির পাতাটি সযত্নে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তার ছেলেকে বলেন, ``এরকম গাড়িই তোকে তৈরি করে দেবো। ``

ধীরে ধীরে গাড়ির রিং, টায়ার, চেসিস ইত্যাদি তৈরি করে ফেলেন তিনি। ২০০২ সালের ১৬ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে বেলাল হোসেন তার বিবি ( BB) নামের জিপ গাড়িটি রাস্তায় বের করেন। কোনো সমস্য ছাড়াই প্রথম দিনেই পেয়ে যান সফলতা।

মানানসই আসন, কম জ্বলানি খরচ
৮৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, ৫৭ ইঞ্চি প্রস্থ এবং ৬৮ ইঞ্চি উচ্চতার এই গাড়ির আসন সংখ্যা চালকসহ ৬। অন্যসব গাড়ির তুলনায় এ গাড়ির জ্বালানি খরচও অনেক কম। ১ লিটার পেট্রোল দিয়ে চলে প্রায় ১৮ কিলোমিটার এবং ১০০ টাকার সিএনজি গ্যাসে চলে প্রায় ৫০ কিলোমিটার। তবে গাড়িটির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য তিনি বিভিন্নভাবে ১২ জন যাত্রী নিয়েও ঘুরে বেড়িয়েছেন।  

তৈরির খরচও খুবই কম
হাতে তৈরি এই গাড়িটিতে যে ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে, তাতে এ ধরনের গাড়ি কিনতে গেলে বর্তমান বাজারে ৯ থেকে ১০ লক্ষ টাকা লাগার কথা। কিন্তু বেলাল হোসেন তার গাড়ি তৈরি করেছেন ২ লাখ টাকারও কম খরচে।

বিভিন্ন আকৃতির গাড়ি
শুধু জিপ আকৃতিরই নয়, বরং ইচ্ছে ও চাহিদা অনুযায়ী কার, মাইক্রোবাস, রেলগাড়িসহ বিভিন্ন আকৃতি বা মডেলে একই গুণ সম্পন্ন গাড়ি তৈরি করা সম্ভব বলে দাবি করেন বেলাল হোসেন।

তৈরি করতে সময় লাগে মাত্র ১৫ দিন
প্রথমে কোন প্রকার মেশিন বা যান্ত্রিক সুবিধা ছাড়াই ৩ জন শ্রমিকের সহযোগিতা নিয়ে BB গাড়ি তৈরি করতে সময় লেগেছে মাত্র ১ মাস। কিন্তু এখন মাত্র ১৫ দিনেই তা তৈরি করার দক্ষমতা অর্জন করেছেন বেলাল। তবে অত্যাধুনিক যান্ত্রিক সুবিধা যেমন বিভিন্ন ধরনের ফর্মা ব্যবহার করলে প্রতিমাসে ৪ টি গাড়িও তৈরি করা সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি।

আবিষ্কারকের দুঃখ
সরকারিভাবে গাড়িটি বাজারজাত করার জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বেলাল। কিন্তু সরকার পক্ষ ও বেলাল হোসেনের মধ্যস্থতা করেন যারা, এর আগে তারা নানা অযৌক্তিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টাসহ নানা টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করেছেন।

গাড়ি তৈরি হওয়ার পরে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় গাড়িটি তোলার হলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তৎকালীন পরিচালক বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বললেও পরে আর কোনো খোঁজই নেননি।  

সে সময় র‌্যাংগস গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তার সঙ্গে যোগাযোগ করে গাড়ি তৈরির স্বত্ব কিনে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশকে ভালবেসে দেশের জন্য তিনি সেই স্বত্ব বিকিয়ে দিতে চাননি।  

আবিষ্কারকের চাওয়া
``দেশের টাকা দেশেই থাক`` এমন আশা করে আবিষ্কারক বেলাল হোসেন চান, বাংলাদেশ সরকার যেন তার আবিষ্কৃত গাড়ি রাস্তায় চলার অনুমতি দেয়। একই সঙ্গে তাকে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন আকৃতির গাড়ি তৈরির অনুমতি যেন দেয়। যাতে তিনি নিজে লাভবান হতে পারেন আর লাভবান হতে পারে দেশও ।

যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, ``সরকার যদি আমাকে গাড়ি তৈরির কারখানা করার অনমুতিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয় তাহলে বগুড়াসহ পাশ্ববর্তী অঞ্চলের কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ হাজার শ্রমিকের আয়ের পথ তৈরি হবে। ``  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১২
সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর;

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর 

[email protected]
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।