ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

শেরপুরে দু:স্থ নারীদের জন্য ‘গাছ-আলু’ প্রকল্প

আব্দুর রফিক মজিদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১০
শেরপুরে দু:স্থ নারীদের জন্য ‘গাছ-আলু’ প্রকল্প

শেরপুর জেলার গ্রামীণ দু:স্থ নারীদের বেশ আগ্রহী করে তুলেছে কৃষি বিভাগের ‘গাছ-আলু’ প্রকল্প। জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দুস্থ নারীদের কিছুটা হলেও আর্থিক স্বাবলম্বী করতে এবং পুষ্টির অভাব পূরণে গাছ আলু বা মাচা-আলু (স্থানীয় নাম) প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।



গাছ-আলু চাষে কোনও বাড়তি ঝামেলা নেই। এর চারা সার-পানি ছাড়াই বেড়ে ওঠে। একটু বড় হওয়ার পর বাড়ির আঙিনার কোনও গাছে চারাগুলো লতিয়ে দিতে হয়। এরপর গাছ বড় হয়ে ফলন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা। তবে গাছ লাগানোর পর ফলনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে এক বছর। ফুল আসার পর থেকে টানা এক বছর ফলন দেবে গাছগুলো। এক বছর ফলন দেওয়ার পর গাছগুলো মরে যায়। তখন এর মূল থেকে আবার নতুন গাছ জন্মায়।
 
দেখা গেছে, প্রতি মাসে গাছপ্রতি ১০ থেকে ১২ কেজি আলু পাওয়া যায়। সে হিসেবে বছরে ১৪৪ কেজি আলু আসবে একটি গাছ থেকে। কমপক্ষে দশটি গাছও যদি কেউ তার বাড়ির আঙিনায় রাখেন, তাহলে বছরে ১৪৪০ কেজি আলু পাবেন তিনি।

বর্তমান বাজারদর হিসেবে প্রতি কেজি গাছ-আলুর দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা। সে হিসেবে যে কেউ বছরে কোনও রকম প্ররিশ্রম ও অর্থব্যয় না করে অনেকটা ঘরে বসেই মাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বাড়তি আয় করতে পারবেন।

গাছ আলুতে সাধারণ আলুর চেয়ে পুষ্টিগুণ বেশি। ফলে এই গাছ আলু ওইসব দুস্থ নারী ও তাদের পরিবারের জন্য তরকারি হিসেবে পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করবে।

কৃষি বিভাগের নেওয়া প্রকল্পে পরীক্ষামূলকভাবে জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার রূপনারায়ণকূড়া ইউনিয়নের বাগিচাপুর গ্রামের ৭৫ জন দুস্থ নারীকে দুটি করে গাছ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা নকলা উপজেলার বানেশ্বর্দী গ্রামের ৭৫ জন দুস্থ নারীকেও দেওয়া হয়েছে গাছ। নিজের ভিটেটুকু ছাড়া এসব নারীদের সম্পদ বলতে আর কিছুই নেই।

নকলার বানেশ্বর্দী গ্রামের দুস্থ প্রতিবন্ধী রোকেয়া বললেন, ‘প্রথমে গাছের ছোট চারা পাইয়া খুব একটা আগ্রহ আছিল্‌ না। এহন গাছের তরতাজা চেহারা দেইখ্যা খুব ভাল লাগতাছে। যদি আলুর ফলন ভাল হয়, তবে আমি আরো গাছ লাগামু। ’

নালিতাবাড়ির রূপনারায়ণকূড়ার বাগিচাপুর গ্রামের নজিমল বেওয়া বললেন, ‘গাছের আলু দেইখ্যা তো ভালই লাগতাছে, যদি বাজারে বেইচ্যা দাম পাই তাইলে আরো বেশি কইরা গাছ লাগামু। ’

প্রকল্পের উদ্যোক্তা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বানেজ আলী জানান, একসময় আমাদের গ্রামবাংলার বাড়ি-বাড়ি এ আলুর দেখা মিলত। কিন্তু এই গাছ আলু বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। তিনি জানান, গ্রামের পুষ্টিহীন দুস্থ নারীদের পুষ্টির অভাব পূরণে ও তাদের আর্থিক সঙ্গতি বাড়াতে দুটি উপজেলার প্রত্যন্ত দু’টি গ্রামে পরীক্ষামূলক এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

বানেজ আলী বলেন, ‘যাদের চারা দেওয়া হয়েছে তাদের উৎপাদিত আলু বাজারদরে আমরাই কিনে নেব। পরে ওই আলু থেকে আরো চারা তৈরি করে জেলার অন্যান্য গ্রামেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ’

গাছ আলু আবাদ প্রকল্পে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীরও ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে তিনি জানান, এতে একদিকে বিলুপ্ত প্রায় গাছ আলু আবাদ বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে গ্রামের দুস্থ নারীরা নিজেদের পুষ্টির অভাব দূর করাসহ বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে পাবে।

তিনি জানান, গাছ আলুকে অন্য সবজির মতো জমিতে মাচায় চাষ করার জন্য নালিতাবাড়ির নন্নী গ্রামে পরীক্ষামূলক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এ পদ্ধতিতে গাছ আলুর ফলন ৩ গুণ বেশি হয়।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০৫০, অক্টোবর ০৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।