ঢাকা, বুধবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২, ১৮ জুন ২০২৫, ২১ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য এবার ডার্ক ম্যাটার

জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৪৮, জুলাই ৯, ২০১২
বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য এবার ডার্ক ম্যাটার

ঢাকা: হিগস-বোসন কণা বা ঈশ্বরকণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কণা আবিষ্কারের পর এবার বিজ্ঞানীরা ডার্ক ম্যাটারের দিকে নজর দিচ্ছেন। সার্নের (CERN)বিজ্ঞানীরা এখন এই অদৃশ্য বস্তুর অস্তিত্ব অনুসন্ধানে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।



তাত্ত্বিক পদার্থবিদরা বিশ্বাস করেন, মহাবিশ্বের মোট ভরের ৮৪ শতাংশই ডার্ক ম্যাটার। কিন্তু একে সাধারণভাবে দেখা যায় না বা একে গবেষণাগারে সৃষ্টি করাও সম্ভব নয়।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, সার্নের কণাত্বরক যন্ত্র লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে (এলএইচসি) দু’টি প্রোটন বিমের বর্তমান ক্ষমতা  ১০ গুণ বাড়িয়ে ডার্ক ম্যাটার সৃষ্টি এবং শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে এলএইচসিকে আরো ১২০ কোটি পাউন্ড খরচায় আপগ্রেড করা হবে।

এদিকে হিগস-বোসন কণা আবিষ্কারের অনেক কাছাকাছি পৌঁছালেও বিষয়টিতে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরো কাজ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, এখনো অনেক প্রশ্নের জবাব মিলতে হবে। তবে এটা নিয়ে এরই মধ্যে এলএইচসিতে আর পরীক্ষা চালানো হবে না। চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত অবশ্য অন্যান্য গবেষণা অব্যাহত থাকবে। এরপর সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য এলএইচসি ২০ মাস বন্ধ থাকবে।

জেনেভায় ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড সীমান্তে ২৭ কিলোমিটারজুড়ে স্থাপিত ইউরোপিয়ান অরগানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ বা সার্নের এলএইচসি মেশিনে মূলত পরমাণুর মৌলিক গাঠনিক উপাদান প্রোটনের দু’টি শক্তিশালী রশ্মির মধ্যে সংঘর্ষ ঘটানো হয়। ৪ টেরাইলেক্ট্রন ভোল্টের (TeV) দু’টি বিমের মধ্যে সংঘর্ষে ৪ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রা উৎপন্ন হয় যা সূর্যের কেন্দ্রস্থলের তাপমাত্রার আড়াই লাখ গুণ।

সিলিন্ডার আকৃতির এ যন্ত্রের গায়ে অ্যাটলাস এবং সিএমএস নামে দু’টি ডিটেক্টর বসানো আছে। ভেতরে মহাসংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট কণাগুলো সনাক্ত করে এগুলোর বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়। সার্নের বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ২০২০ সালে আপগ্রেডেড এলএইচসি (যাকে সুপার এলএইচসি বলা হচ্ছে)তে তারা অজানা সব অতিপারমাণবিক কণা শনাক্ত করতে সক্ষম হবেন।

প্রসঙ্গত, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং মহাবিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্বে (কসমোলজি) ডার্ক ম্যাটার একটি কাল্পনিক বস্তু যা মহাবিশ্বের মোট গাণিতিক ভরের বেশিরভাগ অংশ গঠন করে বলে ধারণা করা হয়।

এ বস্তু আধুনিক প্রযুক্তির কোনো টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা সম্ভব নয় কারণ এটি কোনো আলো বা শনাক্তযোগ্য মাত্রায় তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ শোষণ বা নির্গমন করে না। এমনকি অন্য বিকিরণের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়াও করে না।

তবে দৃশ্যমান বস্তুতে এর মহাকর্ষীয় প্রভাব, তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ওপর প্রভাব এবং মহাবিশ্বের বস্তুগত আকার ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব জানান দেয়। এসবের ভিত্তিতেই বিজ্ঞানীরা এর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। তত্ত্বগতভাবে, মহাবিশ্বের দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান মোট বস্তুর ৮৪ শতাংশ এবং ভরশক্তির ২৩ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার।

ডার্ক ম্যাটার ধারণাটি জ্যোতিপদার্থবিদদের দৃষ্টিতে প্রথম আসে যখন মহাবিশ্বের বৃহৎ জ্যোতিষ্কের ভর মাপতে গিয়ে দুই পদ্ধতিতে অসামঞ্জস্য পাওয়া যায় (১৯৩২ সালের আগে)।

মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে কক্ষপথে আবর্তনবেগের ওপর ভিত্তি করে প্রকৃত ভর মাপা হয়। এর পাশাপাশি প্রতিটি নক্ষত্র, গ্যাসপিণ্ড এবং ধূলিকণার নিজস্ব ভর যোগ করে সমগ্র ছায়াপথে দৃশ্যমান বা উজ্জ্বল পদার্থের ভর নির্ণয় করা হয়।

দেখা যায়, প্রকৃত ভর দৃশ্যমান ভরের চেয়ে অনেক বেশি। ১৯৩২ সালে ইয়ান ওর্ট আকাশগঙ্গার (মিল্কিওয়ে) মধ্যকার নক্ষত্রগুলোর কক্ষীয় বেগ ব্যাখ্যার জন্য এবং ১৯৩৩ সালে ফ্রিৎস জোয়িকি ছায়াপথ স্তবকে (গ্যালাক্সি ক্লাস্টার) ছায়াপথগুলোর কক্ষীয় বেগ ব্যাখ্যার জন্য এই বাড়তি ভরের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।

এরপর ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতির পক্ষে আরও অনেক ধরনের পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন-- ছায়াপথের ঘূর্ণনবেগ, বুলেট স্তবকের মত ছায়াপথ স্তবকের কারণে পটভূমি বস্তুর মহাকর্ষীয় বলের প্রতিসরণ এবং ছায়াপথ ও ছায়াপথ স্তবকের উত্তপ্ত গ্যাসের তাপমাত্রা বণ্টন।

কসমোলজিস্টদের প্রায় সবাই একমত যে, ডার্ক ম্যাটার এমন বিশেষ ধরনের অতিপারমাণবিক কণায় গঠিত যার বৈশিষ্ট্য অজানা। কণা পদার্থবিজ্ঞানে এই ডার্ক ম্যাটার এখন হিগস-বোসন কণার পাশাপাশি অন্যতম আলোচিত বিষয়।

তবে মূলধারার পদার্থবিদদের অনেকে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বের ব্যাপারে একমত হলেও ভর মাপতে গিয়ে সৃষ্ট ব্যত্যয়গুলো ব্যাখ্যার জন্য বিকল্প তত্ত্বও দাঁড় করিয়েছেন কিছু।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।