ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

ফিচার

দেশজুড়ে ফুলের সুবাস ছড়াতে প্রস্তুত গদখালী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫
দেশজুড়ে ফুলের সুবাস ছড়াতে প্রস্তুত গদখালী ফুলের সমাহার

যশোর: বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবে দেশেকে উৎসবে রাঙাতে পুরো প্রস্তুত ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী। সেই সাথে রয়েছে মহান মাতৃভাষা দিবস।

এরপরেই আসবে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও পহেলা বৈশাখ। এসব দিবসকে ঘিরে গদখালীর কৃষকের মুখে এবার চওড়া হাসি ফুটে উঠেছে। ভালো ব্যবসা করার আশা তাদের। সেই ব্যবসা ছুঁতে পারে ১শ কোটি টাকা। এরই মাঝে কিছুটা হলেও সংশয় রয়েছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন ও শবে বরাত একই দিনে পড়ে যাওয়ায়। সেই সাথে ফুলের ব্যাপক সরবরাহের কারণে এখনো পর্যন্ত দাম একটু কমও পাওয়া যাচ্ছে।

এই দোলাচলের মধ্যেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে গদখালীর ফুলের রাজ্যে। মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে রজনীগন্ধা, গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা। পানিসারার ‘ফ্লাওয়ার জোন’র ছোট ছোট দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে ফুল দিয়ে তৈরি তোড়া, মালা। যার সৌন্দর্য উপভোগ করতে সকাল-বিকেল দলবেঁধে ছুটে আসছে হাজারো পর্যটক।

পানিসারা ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামের কৃষক শাহ আলম এবার জমিতে জারবেরা আর গোলাপ চাষ করেছেন। জানালেন, এবার ভালো ফুল হয়েছে। বাজারে দাম গত বছরের চেয়ে একটু কম। তা হলেও যে পরিমাণ ফুল হয়েছে তা বিক্রি করে ভালোই লাভ থাকবে বলে আশাবাদী তিনি।

একই ইউনিয়নের পানিসারা গ্রামের রফিকুল ইসলাম এবার প্রায় সব ধরনের ফুলের চাষ করেছেন। তার মধ্যে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস এবং রজনীগন্ধা নিয়ে তিনি এবার একটু বেশিই আশাবাদী। বলেছেন, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি এবং পরশুদিন ১২ ফেব্রুয়ারি মূল ব্যবসা হবে।

তিনি জানান, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকাররা জড়ো হন গদখালীতে। তারা ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফুল কিনে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যান। যশোরসহ আশপাশের কিছু এলাকার পাইকাররা ১৩ ফেব্রুয়ারিতেও কিছু কেনাকাটা করেন। তবে প্রথম দু’দিনেই মূল ব্যবসাটা হয়।

গদখালীর ফুলচাষিরা জানিয়েছেন, এবার দিনে গরম আর রাতে শীত পড়ছে। তুলনামূলক গরম একটু বেশি হওয়ার কারণে আগে থেকেই গোলাপ ফুটে যাচ্ছে। সেই কারণে কৃষক বাধ্য হচ্ছেন ক্ষেত থেকে ফুল কেটে বাজারে তুলতে। সে কারণে দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।

তারা জানাচ্ছেন, মাঝে একটানা বৃষ্টির কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্লাডিওলাস। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার অধিকাংশ কৃষক একসাথে সব ফুল চাষ করছেন। যে কারণে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। দাম কম হওয়ার এটিও একটা কারণ বলে মনে করেন তারা।
সরবরাহ যেহেতু বেশি সেই কারণে আর্থিকভাবে লাভবানই হবেন বলে ফুলচাষিরা আশা করছেন।

চাষিরা বলেন, বছরের শুরু থেকে মার্চ-তিন মাস ফুলের প্রধান সিজন থাকে। এ সময় ইংরেজি নিউ ইয়ার, ফাল্গুন উৎসব, ভালোবাসা দিবস এবং ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সব থেকে বেশি ফুল বিক্রি হয়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসেও ফুলের চাহিদা থাকে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও স্বাধীনতা দিবসে গাঁদাফুলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি।

এই সিজনের বাইরে বাংলা নববর্ষেও ফুলের একটা ব্যবসা হয় বলে জানালেন ফুলচাষিরা।

গদখালী ফুলচাষি ও ফুলব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, ১০ ফেব্রুয়ারি বাজারে অনেক ফুল উঠেছে। গত বছর এদিনে যে দাম ছিল এবার তার থেকে একটু কম মনে হয়েছে।

তিনি জানান, ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতি ১শ পিস রজনীগন্ধা বিক্রি হয়েছে ৪শ থেকে ৫শ টাকায়, গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৮শ থেকে ৯শ টাকায়, গ্লাডিওলাস ৪শ থেকে ৭শ টাকায়, জারবেরা ৭শ থেকে এক হাজার টাক এবং চন্দ্রমল্লিকা ২শ থেকে আড়াইশ’ টাকায়।

আবু জাফরের আশা, ১১ ও  ১২ ফেব্রুয়ারি প্রতিটি ফুলের দাম বাড়বে। তখন গোলাপ ৩০ টাকা পর্যন্ত প্রতি পিস উঠতে পারে। রং ভেদে গ্লাডিওলাসের দাম উঠতে পারে প্রতি পিস আট থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। অন্যান্য ফুলেরও দাম বাড়বে আশা করেন তিনি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, এবার যশোরের ফুল চাষিরা ১শ কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। সে অনুযায়ী চাষও করা হয়েছে। জেলার প্রায় এক হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে এবার ফুলের চাষ করেছেন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কৃষক। তারমধ্যে গদখালীসহ ঝিকরগাছা উপজেলার ৫৫টি গ্রাম এবং যশোর সদর, ঝিকরগাছা, শার্শা ও কেশবপুর উপজেলার ২০টি মোট ৭৫টি গ্রামে ফুলচাষ হয়েছে।

তিনি জানান, গদখালী থেকে সারা দেশেই ফুল নিয়ে যান পাইকাররা। তারমধ্যে ৩০ শতাংশ ফুল যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে। বাকি ৭০ শতাংশ ফুল যায় অন্যান্য জেলায়। এরমধ্যে পার্বত্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভোলা এবং উত্তরবঙ্গ-প্রতিটি জেলাতেই যশোরের ফুলে উৎসবে রাঙেন দেশের মানুষ।  

এদিকে মূল উৎসবের আগেই উৎসবে মেতে উঠেছে গদখালী, পানিসারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই এলাকা পর্যটকদের উপস্থিতিতে সরগরম থাকছে। হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু দলবেঁধে আসছেন ফুলের রাজ্যে। তারা ঘুরছেন, মজা করছেন, ছবি তুলছেন।

পর্যটকদের জন্য রয়েছে আধুনিক আরও নানা আয়োজন। স্থাপিত কয়েকটি পার্কে ফুলের বাগানের মধ্যে রয়েছে নানা রাইড। সবমিলিয়ে জমজমাট গদখালি, পানিসারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।