হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইজম্যান সংরক্ষণকেন্দ্রে ক্ষয়ে যাওয়া কাগজ সংরক্ষণে কাজ করছেন একঝাঁক তরুণ। তাদের প্রধান কাজ হলো ক্ষয়ে যাওয়া কাগজ উদ্ধার করা।
সম্প্রতি তারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শিল্পসৃষ্টির সংরক্ষণ কাজ শেষ করেছেন। তাদের সবসময় হাতে ছোট ছুরি, নরম ব্রাশ, স্টার্চ এবং ভিনাইলের ইরেজার থাকে। এগুলো যেন তাদের যুদ্ধের অস্ত্র। এসব অস্ত্র দিয়েই ছয়টি লা করবুজিয়ের লিথোগ্রাফকে তারা সংরক্ষণ করে ফেলেছেন। প্রথমত ছবিগুলোকে মেরামত এবং পরে ফ্রেমে বন্দীও করেছেন। বলে রাখা ভালো এ শিল্পকর্মগুলো ৫০ বছরের পুরনো।
সুইস আর্কিটেক্ট এবং চিত্রশিল্পী লা করবুজিয়ের উদ্যোগে সংরক্ষণ কেন্দ্রটি স্থাপন করেন আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে। সামনেই জন্মদিন। এ বিশেষ দিনটি সামনে রেখে বেশ কিছু অুনষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।
ছয়টি লিথোগ্রাফ গ্রাউন্ড ফ্লোরে প্রশাসনিক অফিসে ৫০ বছর ধরে পড়ে ছিলো। এ
কটা সময় প্রশাসনিক ভবন থেকে চলে গিয়েছিল গুদামেও। ভবনের ম্যানেজার ড্যান লোপেজ এ প্রসঙ্গে ওয়াইজম্যান কেন্দ্রের পরিচালক ডেভিড রডউইককে অবহিত করেন। এরপরেই রডউইক নিজ উদ্যোগে শিল্পকর্মগুলোকে প্রদর্শনীতে ফেরত পাঠান এবং গত ডিসেম্বরে এই সংরক্ষণ প্রকল্পটি শুরু করেন।
যখন এধরনের কোনো শিল্পকর্ম সংরক্ষণকেন্দ্রে এসে পৌছায় তখন প্রথমেই শুরু হয় গবেষণা। সংরক্ষক মায়ের এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা প্রিন্ট অথবা যাই আসুক সেটাকে নিয়ে গবেষণা করি। কাগজ সংরক্ষক থেরেসা স্মিথ একটি বই খুলে লা ফেম্মে রোজ নামের একটি চিত্রকে তুলে ধরে রঙ এর উপাদান এর দিকে খেয়াল করি। তিনি বলেন একমাত্র রঙয়ের উপাদান এবং কম্বিনেশনের দিকে খেয়াল করলেই বোঝা যায় চিত্রকর্মটি আসল নাকি নকল।
কিছু কিছু প্রিন্টে কয়েকটি রঙ এর স্তর দিয়েছেন লা করবুজিয়ে। তিনি কখনো কখনো ১২টি রঙয়ের আস্তরও ব্যবহার করেছেন। এটি হয়তো পরীক্ষার কোনো অংশ ছিল।
‘লা দে সঁ জেতে’ নামক আরেকটি চিত্রকর্মে সংরক্ষক ক্রিস্তোফার সোকোলোভস্কি বাদামী একটি দাগ ওঠানোর জন্য পানি, ইথানল এবং একটি স্যাকশন ডিভাইস ব্যবহার করেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন ‘এটিকে যথা সম্ভব পরিষ্কার এবং পরিপাটিভাবে দেখা উচিত’। তিনি আরো বলেন, মাঝে মাঝে অসাধ্য সাধনের মতো কাজ আমাদের করতে হয়। তারপরও আমরা করি। সবসময় যে সহজ সংরক্ষণের কাজ আমাদের হাতে আসে তাও নয়। আমাদের ভালো লাগে করতে।
সাতটি আইটেমের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ছিলো মিরোর প্রুফ আইটেমটি। সোকোলোভস্কি অ্যালিসন কাজ করছিলেন দুটো পানির দাগ নিয়ে। এছাড়াও ভাঙ্গা কাচের সঙ্গে ঘষা লেগে লেগে যে ক্ষতি হয়েছে তারা সেটাও ঠিক করছিলেন। তারা একটি গভীর কাটা দাগ ঠিক করছিলেন যা কাগজের মধ্যের সাদা অংশটি বের করে এনেছিলো।
নতুন কিছু শেখার পাশাপাশি কাজ করার আনন্দও অনুভব করেন সংরক্ষণকেন্দ্রের প্রতিটি সদস্য। তারা উল্লেখ করেন, আমরা যেকোন কিছুর সঙ্গেই কাজ করতে পছন্দ করি এবং আমরা খুশী। কারণ, সংরক্ষণ করার মাঝেও আনন্দ আছে।
অবশেষ কাজ শেষে প্রিন্টগুলোকে আবার হার্ভার্ডে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। সংরক্ষণ কেন্দ্রের ব্যাপারে হার্ভার্ড প্রদর্শনীকেন্দ্রের ম্যানেজার লয়েড বলেন, সংরক্ষণকেন্দ্রে কিছুদিন থাকার পরে প্রিন্টগুলো আরও সুন্দর হয়েছে।
এই বিল্ডিংটি লা করবুজিয়ে তৈরি করা এ সংরক্ষণভবনটি এক বিস্ময়কর প্রতিভাকেই প্রকাশ করছে। হার্ভার্ডের অনেক শিক্ষার্থীরা এ সংরক্ষণকেন্দ্রে আসেন। শিখে যান কিভাবে পুরনো শিল্পকর্মকে সংরক্ষণ করে রাখতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক