কাপাসিয়া (গাজীপুর): রসনা বিলাসীরা এক নামেই চেনেন তোতা মিয়ার নিরিবিলি হোটেলটিকে। রাজধানী ঢাকাসহ গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ইত্যাদি জেলা থেকে শৌখিন ও ভোজনপ্রেমী ব্যক্তিদের আনাগোনা ঘটে এই হোটেলে।
গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের টোক নয়ন বাজারে অবস্থিত এই বিখ্যাত নিরিবিলি হোটেল। টোক নয়ন এলাকার তোতা মিয়া সংসারের আট ভাইয়ের মধ্যে পঞ্চম। তোতা মিয়া প্রায় বিশ বছর আগে কক্সবাজারে হোটেলের বয় হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে চট্টগ্রামের একটি হোটেলে দীর্ঘদিন বাবুর্চি হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তার হাতের রান্নার কল্যাণে চট্টগ্রামের ওই হোটেলের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দিন দিন হোটেলের বিক্রি বেড়ে যায়।
তোতা মিয়ার রান্নার যশ-খ্যাতি এক সময় কাপাসিয়ার টোক এলাকার লোকজন জানতে পারেন। এক পর্যায়ে তারা তোতা মিয়াকে অনুরোধ করেন, টোক নয়ন বাজারে একটি খাবারের হোটেল দেওয়ার জন্য।
সে অনুরোধে সাড়া দিয়ে সাত বছর আগে তোতা মিয়া টোক নয়ন বাজারে নিরিবিলি পরিবেশে চালু করেন ‘নিরিবিলি হোটেল’ নামের হোটেলটি। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই তার খাবারের সুনাম ছড়াতে থাকে। প্রথম দিকে তার হোটেলের গ্রাহক ছিলেন পরিবহনের শ্রমিকরা। ছয় মাস যেতে না যেতেই তার রান্নার সুনাম কাপাসিয়া, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর সদর, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে হোটেলে আসতে শুরু করেন ওইসব এলাকার রসনা বিলাসী লোকজন। এভাবে হোটেলের সুনাম ধীরে ধীরে অন্যান্য জেলায়ও ছড়িয়ে পড়ে।
তোতা মিয়া নিজেই তার হোটেলের মালিক কাম বয় কাম বাবুর্চি। তাকে সহযোগিতা করেন স্ত্রী সালেহা বেগম। তিনি ও তার স্ত্রী নিজে বাড়িতে রান্না করে হোটেলে নিয়ে আসেন।
তোতা মিয়ার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। এর মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ে বাক প্রতিবন্ধী। হোটেলে মাঝে মাঝে তার ছেলেরা সহযোগিতা করে।
সকাল ৬টা থেকে একটানা রাত ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে তোতা মিয়ার হোটেল। ৪০ রকমের ভর্তা ও ৭০ রকম তরকারি পাওয়া যায় এখানে। তবে বিভিন্ন রকমের ভর্তাই সবচেয়ে জনপ্রিয় এখানে। খেতে আসা লোকজন বেশির ভাগই ভর্তা খাওয়ার পাশাপাশি নিজ নিজ বাড়িতেও নিয়ে যান।
বর্তমান সরকারের রাষ্ট্রপ্রতি জিল্লুর রহমান, সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ, বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজসহ সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা, জেলার নামি-দামি মানুষদের জন্য তোতা মিয়ার হোটেল থেকে নানা রকমের ভর্তা নেওয়া হয়।
সরেজমিনে নিরিবিলি হোটেলে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবেশ আসলেই নিরিবিলি। এখানে সবচেয়ে কম মূল্যে অতি সুস্বাদু খাবার খাওয়া যায়। বর্তমান উচ্চমূল্যের বাজারেও এখানে মাত্র ১০০ থেকে ১২০ টাকায় পেটপুরে খাওয়া যায়।
তোতা মিয়া বাংলানিউজকে জানান, ‘‘দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল টোক বাজারে সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশে একটি খাবার হোটেল দেবো। আমার সেই স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে। তবে সরকারের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আর্থিক সাহায্য পেলে আমি এখানে কম খরচে অত্যাধুনিক আবাসিক হোটেল করে দূর-দূরান্তের পথচারীদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে চাই। ’’
তোতা মিয়ার নিরিবিলি হোটেলে আসতে হলে ঢাকার গুলিস্তান (ফুলবাড়িয়া) থেকে ঢাকা পরিবহন, প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন, ঢাকার মহাখালী থেকে ভাওয়াল পরিবহন, জলসিড়ি পরিবহন, সম্রাট পরিবহন, এগারসিন্দুর পরিবহন, অনন্যা পরিবহন, বিআরটিসির গাড়ি, অনন্যা ক্লাসিক পরিবহন, বন্যা পরিবহন, উজান ভাটি পরিবহনের গাড়ি দিয়ে কাপাসিয়া হয়ে টোক নয়ন বাজারে যেতে হবে। এছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে সরাসরি রাজদূত বা পথের সাথী পরিবহনের গাড়ি দিয়ে টোক নয়ন বাজারে যাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১২
সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর