মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে বারাক ওবামার জয়ে নিজ দেশে বেকায়কায় পড়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমালোচকরা এখন ছেঁকে ধরছেন তাকে; কারণ সদ্য সমাপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন পরাজিত প্রার্থী রিপাবলিকান মিট রমনিকে।
প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ওবামাকে পরাজিত করার লক্ষ্যে নেতানিয়াহু তার গোড়া সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের ডাকসাইটে একজন ক্যাসিনো ব্যবসায়ীর মাধ্যমে মিট রমনির নির্বাচন প্রচারণায় আর্থিক সাহায্য করেছেন।
তবে মার্কিন রাজনীতিতে নাক গলানোর অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন নেতানিয়াহু।

পক্ষান্তরে ওবামার এই বিজয় আগামী ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ইসরায়েলের নির্বাচনে নেতানিয়াহুর জন্য কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত নির্বাচনপূর্ব মতামত জরিপে দেখা গেছে, নেতানিয়াহু জিতে যাবেন। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, নেতানিয়াহুর বিজয়ী হওয়ার আশা ‘দিল্লি অনেক দূর’ হয়ে দেখা দিতে যাচ্ছে।
এ পটভূমিতে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট যিনি ওবামার সঙ্গে নেতানিয়াহুর দ্বৈরথকে কেন্দ্র করে ‘ইসরায়েলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থগুলোকে’ জলাঞ্জলি দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন নেতানিয়াহুকে, সেই এহুদ ওলমার্ট নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ধারণা করা যায়, মার্কিন সমর্থন-সহযোগিতা কার দিকে ঝুঁকবে আর তা নেতানিয়াহুর জন্য মোটেই সুখকর হবে না।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ওলমার্ট ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন যা বারাক ওবামার ফিলিস্তিন নীতির পরিচায়ক ছিল। এ অবস্থায় ওলমার্ট যদি
প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অবতীর্ণ হন, তবে ধারণা করা যায়, তিনি মধ্য ও বাম ঘরানার শক্তিগুলো একত্রিত করে এমন একটি মোর্চা গঠন করবেন যাদের মূল স্লোগান হবে, সামনের আরও ৪টি বছর ধরে নেতানিয়াহু-ওবামার মধ্যকার সম্ভাব্য তিক্ত সম্পর্কের পরিণতি সম্পর্কে ইসরায়েলিদের হুঁশিয়ার করা।
ওবামা বিজয়ী হবার পর ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তিনি আশা করেন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ওবামা তার চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। প্রসঙ্গত, দখলিকৃত ভূমিতে ফের ইসরায়েলি বাড়ি-ঘর নির্মাণের জের ধরে ২০১০ সারে ভেস্তে যায় মার্কিন সমর্থিত শান্তি আলোচনা।

এদিকে, মাহমুদ আব্বাসের মন্তব্যের সমর্থনেই যেন ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্টদূত ড্যান শাপিরো বলেছেন, “দ্বিতীয় মেয়াদে ওবামা ফিলিস্তিন প্রসঙ্গকে ভুলে থাকবেন— এ ধরনের ভাবনা-চিন্তা হবে বাস্তবতা রহিত। ”
শাপিরো বলেন, “(মধ্যপ্রাচ্য) বিষয়টি সবসময়ে আলোচ্য সূচিতে তার নিজের পথ করে নেয়। এটি প্রসঙ্গ থেকে হারিয়ে যাবে বা চাপা পড়ে থাকবে— এরকম আশা করা ঠিক না। ” তবে এক্ষেত্রে আগামীতে ওবামার পদক্ষেপ কী হতে পারে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেননি তিনি।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ শহরের ৩৭ বছর বয়সী বেকার বাসিন্দা নারমিন তাহা বলেন, “এ মুহূর্তে পুনর্নির্বাচনজনিত মানসিক চাপমুক্ত ওবামা এবার বোধ’য় ফিলিস্তিনিদের বিষয়টায় ঝুঁকবেন। আরেকবার নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার দুশ্চিন্তামুক্ত ওবামা মনে হচ্ছে এবার তার আগের মেয়াদের চেয়ে বেশিমাত্রায় চাপ প্রয়োগ করবেন ইসরায়েলের ওপর। ”
নারমিন আরো বলেন, “তবে আমি এটাও আশা করছি না যে পরিস্থিতির সহসাই কোনো পরিবর্তন দেখবো। ”

এদিকে, ‘ইসরায়েল চায় মিট রমনি প্রেসিডেন্ট ওবামাকে পরাজিত করুক—
নির্বাচনকালীন পটভূমিতে নেতানিয়াহু সৃষ্ট এ ধরনের ধারণাকে ওবামা খুব সহজে বিস্মৃত হবেন না’ বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত সাল্লাই মেরিডোর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে উপলক্ষ করে বুধবার ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে ইন্সটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি আয়োজিত প্যানেল ডিসকাশনে মেরিডোর উল্লেখিত মন্তব্যকালে ওবামাকে ‘খুবই কৌশলী, খুবই নিয়মানুবর্তী’ বলে উল্লেখ করেন।
মেরিডোর আরও বলেন, “তবে আমি মনে করি না যে আমাদের এটা আশা করা উচিৎ যে, তাদের দু’জনের (ওবামা ও নেতানিয়াহু) মাঝে গত ৪ বছরে যা ঘটেছে তা সহসাই উবে যাবে। যখন কেউ তার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, এবং সে জানে যে তার সঙ্গী তাকে ডুবোনোর চেষ্টায় রত— বিষয়টি মোটেই ভুলে যাবার মত নয়। ”
এক্ষেত্রে নেতানিয়াহুর কোয়ালিশন সরকারের অংশীদার মৌলবাদী দল শাহ পার্টির নেতা এলি ইশাই’র মন্তব্যটি আরও সোজাসাপ্টা; তিনি বলেন— “নেতানিয়াহুর জন্য আজকের সকালটা খুব একটা শুভ ইঙ্গিতবাহী নয়!”

যাহোক, শেষ চেষ্টা হিসেবে নেতানিয়াহু দ্বিতীবারের মত বিজয়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামাকে পাঠানো সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বার্তায় দু’চার কথায় ওবামা সমর্থক মার্কিন ভোটারদের বারংবার ব্যবহৃত একটি শব্দসমষ্টি (Phrase) ধার করেছেন। ওয়াশিংটন-তেল আবিবের মধ্যকার কৌশলগত সম্পর্কের মূল্যায়ন করতে গিয়ে তার ব্যবহার করা ওই শব্দসমষ্টিটি হচ্ছে, Stronger than ever” অর্থাৎ “আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মজবুত”।
প্রশ্ন হল আসলেও কি তাই? আর এতে কি গলবে কঠিন পাথরে পরিণত হওয়া নেতানিয়াহু-ওবামা সম্পর্কের বরফ!
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ০৮ অক্টোবর, ২০১২
একে