নিউজিল্যান্ডে ভদকা পানে এক ৬৫ বছর বয়সীর দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়ার পর হুইস্কি পানে তা ফেরৎ এসেছে বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিসের ওষুধের সঙ্গে রুশদেশীয় মদ ভদকার রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ওই ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, নিউজিল্যান্ডের নিউ প্লাইমাউথ এলাকার ওয়েস্টার্ন ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে কর্মরত ক্যাটারিং ইন্সট্রাক্টর ডেনিস ডুথি সম্প্রতি তার পিতা-মাতার পঞ্চাশতম বিয়ে বার্ষিকীর দিনে সামান্য ভদকা পান করেন। ভদকাটুকু এক ছাত্র তাকে উপহার দিয়েছিল।
যাহোক, ছাত্রের উপহার পান শেষে নিজের ঘরে ফেরার পর অনুভব করেন, চোখে দেখতে পাচ্ছেন না তিনি।
স্থানীয় পত্রিকাকে ডেনিস ওই অবস্থার বর্ণনা দিয়ে জানান, তখন বেলা সাড়ে ৩টা বাজে। প্রথমে আমার মনে হয়েছিল চারদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে। খুব পেরেশান হয়ে পড়ি। বাতির সুইচের খোঁজে ঘরময় হাতরাতে থাকি।
এ পর্যায়ে তার মনে হয়, নেশাটা বেশি হয়ে গেছি। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন, ঘুমিয়ে পড়া যাক। সকালে নেশা কেটে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু পরদিন ঘুম ভাঙ্গার পরও দেখতে পারছিলেন না তিনি। এবার ডেনিসের মনে হলো, তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
পরে ডেনিসকে স্থানীয় টারানাকি বেস হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিসৎকরা তার চিকিৎসায় ইথানল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু হাসপাতালে পর্যাপ্ত ইথানল ছিল না। এসময় উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে হাসপাতালের রেজিস্ট্রার পাশের মদের দোকান থেকে এক বোতল হুইস্কি আনান (হুইস্কির অন্যতম উপাদান ইথানল)। এরপর একটি টিউবের মাধ্যমে অচেতন ডেনিসের পেটে চালান দেওয়া হয় নির্জলা হুইস্কি।
পরের টানা ৫দিন বিছানায় পড়ে থাকার পর চোখ খোলেন তিনি।
ডেনিস বলেন, চোখ খুলে আমি সবকিছু পরিষ্কার দেখতে পাই।
সুস্থ হওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি বেঁচে আছি— এটা কঠিনতর এক আনন্দ সংবাদ। হাসপাতালের কাজকাম ছিল লা-জওয়াব। এরচেয়ে ভালো চিকিৎসা আর হতেই পারে না।
ডেনিসকে দেওয়া চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে চিকিৎসকরা জানান, তার পেট থেকে নেলপলিশ রিমুভারের কড়া গন্ধ আসছিল। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, নেলপলিশ রিমুভার খেয়েছেন কি না? কিন্তু সেরকম কিছু খাননি তিনি। এরপর চিকিসকরা ধারণা করলেন, তার পাকস্থলীতে ফরমাল ডিহাইড পয়জনিংয় হয়েছে। এটা মিথানল পানের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। এটা সারাতে তাকে ইথানল দেওয়া যেতে পারে যা সাধরণত হুইস্কি জাতীয় মদে পাওয়া যায়।
এদিকে, অকল্যান্ড সিটি হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের মেডিসিন স্পেশিয়ালিস্ট টনি স্মিথ বলেন, মিথানল পয়জনিংয়ের ক্ষেত্রে ইথানল প্রয়োগে চিকিৎসা একটি কার্যকর ও প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি। এটা কাজ করে কারণ ইথানল মিথানলকে পরিপাক হয়ে ক্ষতিকারক ফরমালডিহাইডে রূপান্তর হওয়া ঠেকায়। ফরমালডিহাইড অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
ডা. স্মিথ আরও জানান, সাধরণত মানবদেহে মিথানল বিষক্রিয়া ঘটে থাকে ঘরে তৈরি মদ পানের ক্ষেত্রে। কারণ, সঠিক মান বজায় রেখে সেসব তৈরি হয় না।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডেনিস সুস্থ হওয়ার পর থেকে আর মদ স্পর্শ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, ০৩ ডিসেম্বর, ২০১২
একে