হাতে হাত রেখে সানডিন মিউজিক হলে ঢুকছেন গায়কেরা। তাদের ধোপদুরস্ত সাদা শার্টের ওপর হালকা বেগুনি রঙের স্কার্ফ ঝুলে আছে।
এই গায়কেরা সমাজের নানা বয়সের মানুষ, কেউ তরুণ, তবে অনেকেই বৃদ্ধ, চুলে পাক ধরা আর চোখে চশমা। তারা কিছু সময় খুঁজে নিচ্ছেন আলিঙ্গন আর গল্প করার জন্য। তারা সবাই শক্ত করে ধরে রেখেছেন তাদের গানের খাতা।
এই গায়কেরা ‘গিভিং ভয়েস সেন্ট পল কোরাসে’র সদস্য। শোয়ের আগে চার মাস ধরে তারা প্রতি মঙ্গলবার একসঙ্গে অনুশীলন করেছেন। তারা শিখেছেন কীভাবে প্রাণ খুলে গাইতে হয় ‘সিঙিং ইন দ্য রেইন’ এবং ‘ব্রিজ ওভার ট্রাবলড ওয়াটার’-এর মতো জনপ্রিয় গানগুলো।
গায়কেরা মঞ্চের পেছনে চলে যান। এদিকে অডিটোরিয়ামের আসনগুলো ভর্তি হয়ে যায় শত শত দর্শকে। ছোট ছোট বাচ্চারা বড়দের সঙ্গে মঞ্চের দিকে তাকিয়ে গায়কদের খুঁজছে। তারা এসেছে তাদের দাদা-দাদি বা নানা-নানিকে গান গাইতে দেখার জন্য।
যারা ‘গিভিং ভয়েস’ কনসার্টে প্রথমবার এসেছেন, তারা হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না কী দেখতে যাচ্ছেন। কারণ, এটি একটি বিশেষ ধরনের গানের দল। এই দলে অনেকেই ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশে আক্রান্ত। মঞ্চে তাদের সঙ্গ দেন পরিবারের মানুষ কিংবা তাদের দেখাশোনা করেন।
২০১৪ সালে গিভিং ভয়েস নামে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্য—স্মৃতিভ্রান্তি বা ডিমেনশিয়ায় ভোগা লোকেদের গান গাওয়ার মাধ্যমে সাহায্য করা। শুরুতে তাদের দলে ছিল ৩৫ জন। এখন সারা বিশ্বে ৭০টিরও বেশি এমন গানের দল আছে, যারা তাদের আদলে কাজ করছে। এ ছাড়া মিউজিক মেন্ডস মাইন্ডস, আলঝেইমারস কোরাস ও দ্য আনফরগটেবলস কোরাস নামে কিছু দল কাজ করছে। এসব দলের ভাবনা সহজ, আর তা হলো—গান শুধু আনন্দ দেয় না, মস্তিষ্কের কাজ বাড়ায় এবং স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
বিশ্বজুড়ে ৫৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন। প্রতিবছর যুক্ত হয় প্রায় এক কোটি নতুন রোগী। এই রোগের এখনো কোনো চিকিৎসা নেই। তাই অনেকেই চাচ্ছেন প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটাতে এবং রোগকে যতটা সম্ভব ধীর করতে। অনেকে সেই আশার পথ খুঁজে পেয়েছেন গানে।
‘আমরা ভাবছিলাম, এটা শুধু গান গাওয়া আর একটু সামাজিক সময় কাটানোর সুযোগ হবে। কিন্তু দেখা গেল, এটা একদম উপেক্ষিত একটি জনগোষ্ঠীর মানসিক ভালো থাকার দারুণ উপায় হয়ে উঠেছে’,—বলেছেন গিভিং ভয়েস-এর নির্বাহী পরিচালক আইলিন ব্রেটেন। তার বাবা ব্রুস বার্নসাইড মিনেসোটার একটি গিভিং ভয়েস কোরাসে অংশ নেন। ব্রেটেন জানান, আগামী এক বছরে তারা আরও অন্তত ১৫টি নতুন কোরাস চালু করতে যাচ্ছেন।
গিভিং ভয়েসের মতো মেমরি কোরাসগুলো এখন শুধু জনপ্রিয়তাই পাচ্ছে না, গবেষকদেরও ভাবিয়ে তুলছে। সংগীত কি কেবল মন ভালো রাখে, নাকি মস্তিষ্কের ভেতরে কিছু বদল আনতেও পারে? আগামী দিনে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের রোগ বাড়বে, এটা নিশ্চিত। তাই বিজ্ঞানীরা এখন খুঁজছেন, সংগীত কি এই স্মৃতিভ্রংশ ধীর করতে পারে—এই প্রশ্নের উত্তর।
গানের সঙ্গে স্মৃতির সম্পর্ক বিষয়টি বিশেষভাবে আকর্ষণ করে বোর্না বোনাকদারপুরকে। তিনি নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফেইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের মেসুলাম সেন্টার ফর কগনিটিভ নিউরোলজি অ্যান্ড অ্যালঝেইমার ডিজিজের একজন বিহেভিয়োরাল নিউরোলজিস্ট। তিনি সারা জীবন সংগীতচর্চা করে এসেছেন এবং নিজের দাদির স্মৃতিভ্রংশের সময় সংগীতের প্রভাবে তাকে সাড়া দিতে দেখেছিলেন।
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বোনাকদারপুর এখন দেখাতে চাইছেন যে, সামাজিকভাবে গাওয়া গান কীভাবে স্মৃতিভ্রংশের অন্তর্নিহিত কিছু কারণ যেমন— মানসিক উদ্দীপনার অভাব, নিঃসঙ্গতা এবং নিষ্ক্রিয়তা—এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক হতে পারে।
বোনাকদারপুর ও তার গবেষক দল শিকাগো-ভিত্তিক একটি দল ‘গুড মেমোরিজ’-এর সঙ্গে কাজ করছেন, যেখানে রয়েছেন স্মৃতিভ্রংশে আক্রান্ত প্রাথমিক পর্যায়ের গায়কেরা, তাদের দেখাশোনা করা ব্যক্তি এবং স্বেচ্ছাসেবীরা।
‘সাউন্ডস গুড কয়্যার’ নামের একটি মূল সংগঠন এই দলের পেছনে কাজ করে এবং তাদের অর্থায়নে এক গবেষণায় দেখা হয়, কোভিড-১৯ মহামারির সময় অনলাইনে সাপ্তাহিক রিহার্সাল ও সম্মেলনে অংশ নেওয়া বয়স্ক গায়কদের—স্মৃতিভ্রংশ আছে এমন বা নেই— এমন সামগ্রিক সুস্থতা কীভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
এই গবেষণার ফল ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে জার্নাল অব অ্যালঝেইমার’স ডিজিজে প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা যায়, গায়কেরা এই কার্যক্রমে অংশ নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইতিবাচক অনুভূতির কথা জানিয়েছেন। তাদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মাত্রা উন্নত হয়েছে বলে জানান।
বোনাকদারপুর বলেন, ‘সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে রিহার্সাল করাটা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে গায়কদের জন্য উপকারী। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এই রিহার্সালের মাধ্যমে তারা যে সামাজিক বন্ধন তৈরি করে, তা নিঃসঙ্গতা কমাতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। ’
বোনাকদারপুরের দল হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে মিলে ‘গুড মেমোরিজ’ গানের দলের সদস্যদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিমাপ করে। গান গাওয়ার সময় মাথায় বিশেষ ক্যাপ পরিয়ে তারা সরাসরি মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করে। এখন দলের সদস্যরা এই গবেষণার ডেটা বিশ্লেষণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ সহায়তার অপেক্ষায় রয়েছেন।
বোনাকদারপুর আশা করছেন, ১৫ সপ্তাহের অনুশীলনের আগে, চলাকালীন ও পরে অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে, তা পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
গান গাওয়ার যে মানসিক শক্তি রয়েছে, তা অনেক আগেই লক্ষ্য করেছিলেন ‘সাউন্ডস গুড কয়ারে’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা জোনাথন ও স্যান্ডি সিগেল মিলার।
জোনাথন বলেন, ‘আমাদের এক স্বেচ্ছাসেবী জানালেন, তিনি বুঝতে পারছিলেন তার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হচ্ছে। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন, কী হচ্ছে বা কী করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কিন্তু এক বছর কয়ারে যুক্ত থাকার পর তার মনে হয়েছিল, তিনি যেন নিজের মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছেন। ’ এমন অভিজ্ঞতা অনেকেই ভাগ করে নেওয়ায় তারা বোনাকদারপুরের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা শুরু করেন। উদ্দেশ্য শুধু অভিজ্ঞতা অর্জনই নয়, বরং এ বিষয়ে আরও সুসংহত প্রমাণ খোঁজা।
গবেষণায় দেখা গেছে, গান অতীত স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে, মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তন করে নতুন স্নায়ু সংযোগ গড়তে এবং সামগ্রিকভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। গানের মতো সংগীতচর্চা মানুষের মাঝে সংযোগ তৈরি করে, আবেগ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। অনেক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, সংগীত প্রশিক্ষণ মস্তিষ্কের ‘হোয়াইট ম্যাটার’-এর গঠন উন্নত করে, যা তথ্য আদান-প্রদানকে আরও দ্রুত ও কার্যকর করে তোলে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সংগীত স্মৃতি মস্তিষ্কের যে অংশে জমা থাকে, তা আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগে সাধারণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ২০১৫ সালে একদল গবেষক মস্তিষ্ক স্ক্যানের মাধ্যমে দেখেছেন, সংগীত-স্মৃতির ক্ষেত্র যেমন ‘অ্যান্টেরিয়র সিংগুলেট গাইরাস’ ও ‘প্রি-সাপ্লিমেন্টারি মোটর এরিয়া’ দীর্ঘ সময় অবধি অক্ষত থাকে, যদিও মস্তিষ্কের সাধারণ স্মৃতিভিত্তিক অঞ্চলগুলো নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। এ জন্যই অনেক আলঝেইমার রোগীও জীবনের শেষ পর্যায়ে পরিচিত গান শুনলে তা চিনে ফেলতে পারেন।
গবেষকরা মনে করেন, ছোটবেলার গান আমাদের স্মৃতি সহজেই ফিরিয়ে আনতে পারে। কারণ জীবনের সেই সময়ের সঙ্গে থাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি আর অনুভূতি।
নিউইয়র্কের মাউন্ট ভার্ননের ইনস্টিটিউট ফর মিউজিক অ্যান্ড নিউরোলজিকাল ফাংশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা কনচেটা এম. টোমাইনো বলেন, ‘স্মৃতিভ্রংশ রোগীদের ক্ষেত্রে পরিচিত গান গভীর আবেগের সঙ্গে যুক্ত থাকে, আর এই আবেগ অনেক সময় পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। ’
বিশেষ করে গান গাওয়া এক জটিল প্রক্রিয়া, যা আমাদের মস্তিষ্কের অনেক অংশকে একসঙ্গে কাজে লাগায়—এমনকি কথা বলার চেয়েও বেশি। ২০২৫ সালে প্রকাশিত ২৩টি গবেষণার একটি বিশ্লেষণে বলা হয়, গান গাওয়ার সময় আমাদের প্রথমে সুর শুনতে হয়, তারপর কথা মনে রাখতে হয় এবং সবশেষে গেয়ে প্রকাশ করতে হয়। এই পুরো সময় মস্তিষ্কের নানা অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে বাড়ে স্মরণশক্তি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং কথা প্রকাশের দক্ষতা।
আলঝেইমার বা অ্যাফাসিয়ার মতো রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও গান এক অসাধারণ উপকারে আসে। যেমন, সাবেক মার্কিন কংগ্রেস সদস্য গ্যাব্রিয়েল গিফোর্ডস ২০১১ সালে গুলিবিদ্ধ হয়ে কথা বলা ভুলে যান। পরে গানের ছন্দে কথা বলার থেরাপির মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে আবার কথা বলতে শেখেন—প্রথমে গান গেয়ে, পরে কথা বলে। এভাবে গান যেন তার জন্য একটি সেতু তৈরি করে দেয়।
গবেষক বোনাকদারপুর বলেন, ‘অনেক ডিমেনশিয়া রোগী সাধারণ সময়ে চুপচাপ থাকেন, কিন্তু কয়ার রিহার্সেলে এসে যেন প্রাণ ফিরে পান। ’
এই স্মৃতি জাগানোর ক্ষমতা শুধু ডিমেনশিয়া নয়, অন্যান্য মানসিক বা শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রেও কার্যকর হতে পারে। গবেষকরা খুঁজে দেখছেন—সংগীত কীভাবে স্ট্রোকের রোগী, প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতায় আক্রান্ত মা, কিংবা পারকিনসন রোগীদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স মেডিসিন পরিচালিত পারকিনসন রোগীদের একটি গানের দল ‘পারকিনসনিকস’-এর সদস্যরা জানান, সপ্তাহে একবারের রিহার্সেল তাদের জীবনকে শুধু আনন্দ দেয়নি, বরং তাদের কথা বলার স্পষ্টতা ও জোরও বাড়িয়েছে।
বোনাকদারপুর এখন চান চিকিৎসার সঙ্গে ‘সামাজিক প্রেসক্রিপশন’ পদ্ধতির ব্যবহার বাড়াতে, যেখানে ওষুধের বদলে রোগীদের সাংস্কৃতিক বা সংগীতমূলক কাজে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘অনেকে ভাবেন, ওষুধেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মস্তিষ্কের জটিলতা তার চেয়ে অনেক গভীর যদি গবেষণায় প্রমাণ হয় যে, গানের মতো কোনো কাজ ডিমেনশিয়ার উপসর্গ কমাতে পারে, তবে সেটা দুর্দান্ত হবে। ’
আবার ফেরা যাক সানডিন মিউজিক হলে। আলো নিভে আসে, কনসার্ট শুরু হয়। গানের দলের পরিচালক জে. ডেভিড মুর সবাইকে দাঁড়াতে বলেন—‘শরীর বা মন, যা পারো তাই নিয়ে। ’ পিয়ানোর সুরে ভেসে যায় গলা—সবাই মিলে গেয়ে ওঠেন প্যাটসি ক্লাইনের গান: ‘ইউ মেড মি লাভ ইউ’।
দ্বিতীয় সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন মাইক গেয়ার ও তার মেয়ে আন্দ্রেয়া। তারা হাতে ফাইল ধরে গান করছেন। গেয়ারের গানের অভিজ্ঞতা ছিল কেবল স্কুলজীবনের একটি গানের দলে। যদিও তিনি পেশায় ছিলেন ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট—গান নিয়ে ভাবেননি কখনো।
২০২২ সালে অবসরের পর তিনি নিজের তৈরি করা কাজগুলো সাজিয়ে রাখার কাজে মন দেন। এক বছর পর তার ডিমেনশিয়ার লক্ষণ ধরা পড়ে। তখন স্মৃতি হারানোর আগে নিজের কাজগুলো দলিল আকারে সংরক্ষণের কাজটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
প্রতিদিন হাঁটার ফাঁকে তিনি মিনিয়াপোলিস শহরের নিজের বাড়ির বেসমেন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নথি গুছিয়ে রাখেন। কিন্তু প্রতি মঙ্গলবার তিনি এই কাজ থেকে বিরতি নিয়ে মেয়ের সঙ্গে গান করতে যান। মেয়ের অনুরোধেই গেয়ারের এই দলে যোগ দেওয়া। প্রতিটি রিহার্সালের পর তার মুখে হাসি থাকে। ফেরার পথে মেয়েকে ধন্যবাদ জানান।
গানের কনসার্ট হয় সানডিন মিউজিক হলে। গেয়ারের সঙ্গে মঞ্চে থাকেন তার মেয়ে আন্দ্রেয়াও। গাইতে গাইতে তারা ডুবে যান সুর আর মুহূর্তে। ৯০ মিনিটের এই কনসার্টে তারা ১২টি গান পরিবেশন করেন—কখনো হাসির, কখনো আবেগময়। দর্শকেরা কেউ কেউ চোখ মোছেন। অনেকেই অবাক হয়ে দেখেন—যারা অন্য সময় কথা বলেন না, তারা আজ গান করছেন আত্মবিশ্বাস আর স্পষ্টতায়। ধীরে ধীরে বোঝা যায় না কে রোগী, কে তাদের পরিবার বা বন্ধু। সবার মাঝেই ছড়িয়ে পড়ে মিলন আর আনন্দ।
গবেষণায় দেখা যায়, এমন গানের দল ডিমেনশিয়া রোগীদের উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে এবং তাদের সঙ্গে স্বজনদের সম্পর্ক আরও গভীর করে। ‘এটি তাদের একটা নিরাপদ জায়গা, যেখানে তারা নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারেন,’—বলেন কানাডার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেবরা শিটস।
এই দলে থাকা জেইন বলেন, তার মা ডিমেনশিয়ার শেষ পর্যায়ে। ‘আমি মাকে গান গেয়েই বিভিন্ন কাজ করাতে পারি। ধরুন কোথাও যেতে হবে। তখন আমি গান গেয়ে বলি, এক পা এক পা করে এগোও ... মা সহজেই বুঝে যান। ’
গানের শক্তি কতটা গভীর, তা এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে এটুকু স্পষ্ট—গান শুধু স্মৃতি ধরে রাখে না, আনন্দও দেয়। ‘গিভিং ভয়েস’-এর প্রধান বলেন, ‘আমরা চাই না, ডিমেনশিয়ার রোগীরা শুধু রোগ দিয়েই পরিচিত হোক। আমরা চাই, তারা যেন গান, আনন্দ, সম্পর্ক আর সৃজনশীলতার ভেতর দিয়ে নিজেদের নতুন করে খুঁজে পান। ’
আরএইচ/এমজেএফ