ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ জুন ২০২৫, ২২ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

বাংলাদেশের এনটিভিসহ ২৪ চ্যানেল নজরদারিতে

বিদেশি টিভি’র ওপর নাখোশ দিল্লি

আহ্‌সান কবীর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:২৩, ডিসেম্বর ৬, ২০১২
বিদেশি টিভি’র ওপর নাখোশ দিল্লি

ঢাকা: ভারত সরকার সেদেশে অবৈধভাবে প্রদর্শনরত বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের এনটিভি, ভারতীয় নাগরিক ইসলামি চিন্তাবিদ ও বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভি, পাকিস্তানের কিউটিভি, পিটিভি, সউদি টিভিসহ প্রায় ২৪টি চ্যানেল।

দিল্লি সরকার মনে করছে, এসব অনুষ্ঠান শুধু বহির্বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি খারাপই করছে না, ভারতের ভেতরে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষও বাড়িয়ে তুলছে।

হিন্দি পত্রিকা নবভারতটাইম্‌স জানায়, এসব চ্যানেল ভারতে প্রদর্শনের ব্যাপারে আগে থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অবৈধ পন্থায় ঠিকই দেখানো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) ভারত বিদ্বেষী ২৪টি চ্যানেরের লিস্ট তৈরি করেছে। আইবি’র মতে, ওইসব চ্যানেল ভারতের বিরুদ্ধে মনোবৈজ্ঞানিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ওই চ্যানেলগুলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সীমানাবর্তী ভারতীয় এলাকাগুলো থেকে সহজেই দেখা যাচ্ছে। ভারতের বেশ কিছু এলাকায় ক্যাবল অপারেটররা অবৈধ ঘোষিত ওইসব চ্যানেল বেআইনিভাবে ডাউনলিঙ্ক করে গ্রাহকদের দেখাচ্ছে।

এসব চ্যানেরের সম্প্রচার বন্ধে ভারত সরকার পার্লামেন্টেও বিষয়টি নিয়ে কথা তুলেছে।  

নবভারত আরো জানায়, আইবি’র সতর্কবাণীর পর সরকার লোকসভায়জরুরি ভিত্তিতে কেবল টিভি আইন সংশোধনী বিল আনতে যাচ্ছে।

এছাড়া আইবি’র দেওয়া সতর্কবাণী মোতাবেক ভারতে ওইসব চ্যানেলের সম্প্রচার ঠেকাতে তৎপরতা শুরু করেছে দিল্লি। প্রস্তাবিত ক্যাবল টিভি সংশোধনী আইনে নিষিদ্ধ চ্যানেলগুলো সম্প্রচারের দায়ে জরিমানার সঙ্গে সঙ্গে কারদণ্ডের বিধানও রাখা হবে বলে জানা গেছে। উত্তর প্রদেশ, হায়দ্রাবাদ, আসাম, শ্রীনগর, মুম্বাইসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় বিভিন্ন সময়ে ঘটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এসব চ্যানেলের উস্কানি ছিল বলে সরকারি তদন্তে দেখা গেছে বলে পত্রিকা উল্লেখ করেছে।  

পত্রিকাটির মতে, ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা ওইসব চ্যানেলের বেশিরভাগই ধর্মবিষয়ক। এসব চ্যানেলের মধ্যে প্রধান হচ্ছে পাকিস্তানের কিউটিভি, মাদনি টিভি, এআরওয়াই টিভি, পিটিভি, পিটিভি হোম, পিটিভি ওয়ার্ল্ড, জিও টিভি, ডন, এক্সপ্রেস, ওয়াক্ত, নূর টিভি, হাদী টিভি, আজ, ফিল্মেক্স এবং এসটিভি। এসব চ্যানেল জম্মু-কাশ্মির ও পাঞ্জাব থেকে সহজেই দেখা যায়। এছাড়া দুবাই থেকে আপ করা পিস টিভিসহ সউদি টিভি, টিভি মালদ্বীব্‌স, বাংলাদেশের এনটিভি, এক্সওয়াইজেড, নেপাল টিভি, কান্তিপুর নেপাল, আহমদিয়া (ইউকে) এবং ভুটান ব্রডকাস্টিং সার্ভিসকেও ওই তালিকায় রেখেছে দিল্লি। এসব চ্যানেল উত্তর-পূর্ব ভারতে দেখা যায়।

ভারতীয় পত্রিকা মেল টুডে জানিয়েছে, ভারতীয় দর্শকরা ওইসব চ্যানের দেখতে পছন্দ করে। তবে অনেক ক্যাবল অপারেটরই জানে না এসব চ্যানেল দেখানো বেআইনি। প্রসঙ্গত, কারিগল যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সরকারি চ্যানেল পিটিভি নিষিদ্ধ করা হয় ভারতে। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে, এখনো ভারতের অনেক এলাকায় ক্যাবল অপারেটররা পিটিভি দেখাচ্ছে। এছাড়া দিল্লি আর উত্তর প্রদেশে ক্যাবলে কিউটিভি ও জাকির নায়েকের পিস টিভি নির্বিবাদে দেখানো হচ্ছে।  

নবভারত ও মেল টুডে জানিয়েছে, এসব বিদেশি চ্যানেলে ভারতীয় সেনাদের নেতিবাচক ভাবমূর্তি উপস্থাপন করা হচ্ছে। ভারত সরকার মনে করছে এসব চ্যানেলের নেতিবাচক প্রপাগাণ্ডার কারণে দেশের সাম্প্রদায়িক পরিবেশ খারাপ হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কোরান অবমাননার চিত্র ইরান টিভিতে দেখানোর পর জম্মু-কাশ্মিরে আন্দোলন-বিক্ষোভ শুরু হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ওই ভিডিওটিকে কেন্দ্র করে মুম্বাইতেও উত্তেজনা দেখা দেয়।

এদিকে, জানা গেছে বাংলাদেশি চ্যানেল এনটিভি প্রসঙ্গে চলতি বছরের শুরুতেও ভারতীয় মিডিয়ায় এ ধরনের খবর আসে। এ প্রসঙ্গে এনটিভির একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, তখন এনটিভি ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা লিখিতভাবে জানায়, এ ধরনের কোনো পর্যবেক্ষণ তাদের নেই। সূত্র আরও জানায়, এনটিভি ভারত বিরোধী কোনো অনুষ্ঠান প্রচার করেনি। এছাড়া বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময়ে ভারত সংক্রান্ত ইতিবাচক প্রতিবেদনও প্রচার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, ০৬ ডিসেম্বর, ২০১২
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।