ঢাকা, শুক্রবার, ৬ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ জুন ২০২৫, ২৩ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

ভ্রমণ কথা

পাহাড়ের শহর দার্জিলিং

আনিসুর রহমান বুলবুল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:০১, জানুয়ারি ১৭, ২০১৩
পাহাড়ের শহর দার্জিলিং

অফিসে কাজ করছি। হঠাৎ সেলফোনে রিং আসলো।

ডেস্কে রাখা সেলফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি বন্ধু এমদাদের ফোন! ও ইদানীং ’শনির আখড়া’ নামের একটি নাটকে মাদকাসক্তের চরিত্রে অভিনয় করেছে। ওর কলটি রিসিভ করলাম-

: কিরে শালা, তোর নাটকের খবর কি?
: দোস্ত, অপরাধ জগতের সাথে থাকতে থাকতে নিজেই এখন অপরাধী হইয়া গেছি রে!
: তোর ক্রাইম বিটের অনেক হেল্প হচ্ছে তাই না!
: হুম, হচ্ছে না ছাই!
: তবে তোর এক্সপেরিয়েন্স তো ঠিকই হচ্ছে, কী বলিশ?
: তা ঠিক।   আচ্ছা শোন,
: বল
: তোকে তো বলাই হয়নি!
: কি?
: অবশেষে ভারতের ভিসা পেলাম!
: তাই! কোথায় যাচ্ছিস?
: প্রথমে ঠিক করেছি কোলকাতা যাবো। তারপরে দার্জিলিংয়ে।

এমদাদের মুখে দার্জিলিং নামটি শুনে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো! আমার অনেক দিনের শখ। দার্জিলিং যাওয়ার। দার্জিলিংয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করার কথা মনে হতেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠলো! ও একা একা ভিসা করে ফেলেছে দেখে মনে মনে রাগ হলো। বল্লাম-
: আমাকে জানালি না কেনো?
: তুই যাবি?
: যাবো মানে? আমি এখনই ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করছি।
এমদাদের ফোনটি রেখে দিলাম। হাতের কাজ শেষ করে ঢুকে গেলাম www.indianvisaonline.gov.in ওয়েব সাইটে। অনলাইনে ইন্ডিয়ান ভিসা ফর্ম পূরণ করতে বসলাম। সর্বপ্রথম ইন্ডিয়ান মিশনের নাম বাংলাদেশ-ঢাকা সিলেক্ট করার পর একটি পপআপ আসলো যেখানে একটি টেম্পরারি ফাইল নম্বর আছে। সেটি আমি নোটপ্যাডে সেভ করে নিয়ে অ্যাপলিক্যান্ট ডিটেইলস ও পাসপোর্ট ডিটেইলস পূরণ করে দ্বিতীয় পেজে গেলাম। সেখানে অ্যাপলিক্যান্ট অ্যাড্রেস ডিটেইলস, ফ্যামিলি ডিটেইলস, প্রোফেশন ডিটেইলস দিয়ে তৃতীয় পেজে গেলাম। সেখানে ভিসা ডিটেইলসে টাইপ অফ ভিসায় টুরিস্ট ভিসা দিলাম কিন্তু সমস্যা হলো পোর্ট অফ এরিভাল ইন ইন্ডিয়া এবং পোর্ট অফ এক্সিট ফ্রম ইন্ডিয়া অপশনে! এখানে কোনটা সিলেক্ট করবো! অনেকগুলো অপশন থাকায় পড়লাম সমস্যায়। এর আগে কখনো ইন্ডিয়ান ভিসা ফর্ম পূরণ করিনি। কোনো কিছু না ভেবে ডেস্কের ফোনে  জিরোতে চাপ দিলাম। পিএবিএক্স থেকে সালাম দিলেন। বল্লাম কোলকাতা প্রতিনিধিকে একটু ধরিয়ে দিতে। কিছুক্ষণ পর ফোন আসলো-
Darjeeli
: হ্যালো, সুব্রত দা কেমন আছেন?
: জি, ভালো
: দাদা একটু হেল্প করবেন?
: কেন নয়, বলেন কি করতে পারি?
: আমি আসলে দার্জিলিং যেতে চাচ্ছি। তবে সমস্যা হলো অনলাইনে ফর্ম পূরনের সময় একটু খটকা লাগলো!
: কী রকম খটকা, একটু খুলে বলেন  তো!
: পোর্টের নাম নিয়ে .. কোনটা সিলেক্ট করি বলুন তো! আমার আবার বালুরঘাটে কিছু কাজ আছে .. তারমানে আমি কি হিলি পোর্ট দিয়ে যাবো?
: দার্জিলিং যেতে যতটুকু জানি বাংলাদেশ থেকে বুড়িমাড়ি হয়ে শিলিগুড়ি তারপরে দার্জিলিং ও’টটিই সবচেয়ে সহজ হবে। তবে যেহেতু আপনার বালুরঘাটে কাজ আছে আপনি হিলি হয়ে বালুরঘাট আসবেন তারপরে শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং যাবেন।
: থ্যাংয়্যু সুব্রত দা।

ফোনটা রেখে দিয়ে পোর্টের নামের যায়গায় বাইরোড হিলি দিলাম। তারপরে রেফারেন্সে ইন্ডিয়ার ঘরে সুব্রত দার নাম ঠিকানা আর বাংলাদেশের ঘরে আমাদের বিভাগীয় প্রধান শাহাদাত ভাইয়ের নাম দিলাম। তারপরে ফটো আপলোডের জন্য দুই ইঞ্চি বাই দুই ইঞ্চি সাইজের ফটো ফটোশপ দিয়ে রেডি করে আপলোড করে নিলাম। এর পরে নেক্সট পেজে গিয়ে হোটেলের নাম ঠিকানা বসিয়ে ওকে করলাম। তারপরে সাক্ষাতের সম্ভাব্য তারিখ সিলেক্ট করে কনফার্ম দ্যা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ট্যাবে ক্লিক করলাম। কমপিউটারের স্ক্রিনে ’ভিসা অ্যাপলিকেশন ফর্ম’ এর পিডিএফ ভার্সন ওপেন হলো। একটানা অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে সাকসেস হওয়ায় মনে হলো যেন যুদ্ধ জয় করে ফিরলাম। চেয়ার থেকে ওঠে ’ইয়াহু’ বলে দাঁড়িয়ে গেলাম। ফমর্টি প্রিন্ট করলাম।

দুই.
গুলশান-১ এর ইন্ডিয়ান অ্যাপলিকেশন সেন্টারে গিয়ে পৌঁছলাম সকাল নয়টায়। যদিও আমার আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর টাইম হলো সকাল সাড়ে আটটা। লাইনে দাঁড়ালাম। বারো জনের পরে আমার সিরিয়াল। ফর্মে দুই ইঞ্চি বাই দুই ইঞ্চি সাইজের ছবি লাগিয়ে স্বাক্ষরের ঘরে স্বাক্ষর করে ফর্মটি ব্লেজারের ভেতরের পকেটে নিয়ে এসেছি। সাথে পাসপোর্ট, ব্যাংক সলভেন্সিং সার্টিফিকেট ও বিগত ছয় মাসের স্টেটমেন্ট, চাকরির কাগজপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। হাতে স্টেপলার নিয়ে কয়েকজন ছেলে ঘুরাঘুরি করছে সিরিয়ালে দাঁড়ানো অনেকেই তাঁদের হেল্প নিচ্ছে। আমি সব কাগজপত্র বের করে একত্রে স্টেপলিং করার জন্য একজনকে ডাকলাম। সে আমার কাগজপত্র নিয়ে-

: স্যর, আপনের পাসপোর্টের ফটোকপি দেন?
: ফটোকপি তো করি নাই!
: তাইলে তো হবে না স্যর
: আচ্ছা আর কি কি কাগজপত্র লাগে বলো তো!
: কারেন্টের বিল আর না হয় টেলিফোন বিলের কাগজপত্র লাগে, ভোটার আইডির ফটো কপি লাগে
: তাই!
: হ স্যর, এগুলো না হইলে আপনাকে ফেরত দিবো, কোনো কামই হইবে না।

আমি পড়লাম টেনশনে। এই কাগজপত্রগুলো যে আমার নাই তা নয়। তবে ঢাকায় নাই। আছে মানিকগঞ্জের বাড়িতে। সেটা মেইলে পেলে আমি প্রিন্ট করে নিতে পারতাম! বাড়িতে কমপিউটার আর নেট থাকলেও স্ক্যানার নাই। দশ মিনিটের পথ হেটে গিয়ে স্টুডিও পাওয়া যাবে। সেখানে স্ক্যানার আছে তবে নেট নাই। আরো পাঁচ মিনিটের পথ পেরুবার পরে নেটের দোকান আছে। সিরিয়ালের লাইন থেকে বের হয়ে বাড়িতে বউয়ের কাছে ফোন দিলাম।

: হ্যালো, কি করছো?
: এই তো, লাবিবাকে খাওয়াচ্ছি। একটু পড়ে স্কুলে যাবো। তুমি কোথায়? এতো হৈচৈ কিসের?
: আমি একটু গুলশান-১ এ এসেছি। কিছু কাগজপত্র মেইল করতে পারবে?
: কি কাগজপত্র?
: বিদ্যুৎ আর টেলিফোন বিলের স্ক্যানিং কপি।
: স্ক্যানিং কপি মানে? আমি স্ক্যান করবো কোথায় থেকে?
: নজরুলের দোকান থেকে।
: সেই টেপড়া থেকে! আমাকে এখন টেপড়া যেতে বলছো? স্কুলের সময় হয়ে গেছে যে!
: কিন্তু আমার এক ঘন্টার মধ্যেই লাগবে যে।
: কী সব ঝামেলায় ফেলে দাও! তুমি এসব নিয়ে যেতে পারো নাই!

রাগ করে মোবাইলটি রেখে দিলো। আমি জানি ও পাঠাবে। ওর কষ্ট হলেও ও তা করবে এটি। আমি গুলশানের লেকভিউ থেকে চলে এলাম এক নম্বরে। এসে পাসপোর্ট আর ন্যাশনাল আইডি কার্ড ফটোকপি করে ফেললাম। ওই দোকানে নেট থাকায় ওখানে বসেই ওয়েট করছি বউয়ের ফোনের জন্য। প্রায় এক ঘণ্টা আটত্রিশ মিনিট পরে বউয়ের ফোন পেলাম। বউ মোটামুটি রেগে আছে আমার ওপর। আমি মেইল চেক করে দেখি দুটো ফাইল এসেছে জেপিজি ফরম্যাটে। দুটোই প্রিন্ট করে পাসপোর্ট, আইডি কার্ড ও অন্যান্যা কাগজপত্রের ফটো কপির সাথে স্ট্যাপলার মেরে ইন্ডিয়ান অ্যাপলিকেশন সেন্টারের দিকে হাটা দিলাম।

আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর টাইম সকাল সাড়ে আটটা থাকায় আমাকে ইটিকিট দিলো না। সেন্টারের ভিতরে রেস্টুরেন্টে গিয়ে ওয়েট করতে লাগলাম। যাদের লেট হয়েছে তাদের দুপুর বারোটার পরে ডাকবে। সময় পার হচ্ছে না। পৌনে বারোটায় সবাইকে ডাকলো। প্রথমে নিচে থেকে একটি ইটোকেন নিয়ে ওপরে উঠলাম তারপর সেই টোকেনটি পরিবর্তন করে দোতলায় গিয়ে বসলাম। আমার মতো অনেকেই বসে আছে সেখানে। আমার ইটোকেনের সিরিয়াল অনেক পরে। বসে আছি ধৈর্য্য হারাচ্ছি না।

ষাটোর্ধ এক ব্যক্তি চোখে কম দেখেন। তিনি তার ছেলেকে নিয়ে যাবেন ভারতে চিকিৎসা করাতে। তিনি চোখে কম দেখায় একা একা স্বাক্ষর করতে পারেন নাই বলে তার পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছে। তবে ছেলেরটি রেখে দিয়েছে। লোকটি হাউমাউ করে কাঁদতে দেখে আমার খারাপ লাগা বেড়ে গেলো। আমি টিভি দেখছি আর মানুষজনের দিকে তাকাতাকি করে সময় পার করছি। আমাদের বয়সের এক ছেলেকে ফেরত যেতে হচ্ছে তার পাসপোর্টের মেয়াদ ছয় মাসের কম থাকায়। আমার টেনশন বেড়ে যাচ্ছে। আমারও তো সেম সমস্যা! মধ্য বয়সের আরেক মহিলার পাসপোর্টের সাথে আবেদনপত্রের নামের মিল না থাকায় তাকেও ফেরত যেতে হচ্ছে। মহিলা আবেদনপত্রে সঠিক নাম না দেওয়ার জন্য কাকে যেনো মোবাইলে বকা দিচ্ছে। একজন সিকিউরিটি এসে তাকে মোবাইলে কথা বলা নিষেধ সেটি জানিয়ে দিলেন।
Darjeeling
অবশেষে সাক্ষাত মিললো চার নম্বর ডেস্কের এক ম্যাডামের সাথে। ম্যাডাম আমার পাসপোর্ট আর সব কাগজপত্র দেখে আমার দিকে একবার তাকালেন। বললেন চারশত টাকা দিতে। আমি দিলাম। আমাকে ছোট্ট একটি রশিদ ধরিয়ে দিলেন। রশিদে লেখা আছে তিন দিন পরে বিকেল চারটার সময় আসতে হবে। আমি অবাক হলাম!

তিন.
কোন বন্ধু কিংবা কোন কলিগকে তেমন কিছু না জানিয়েই এতদুর পর্যন্ত চলে এসেছি। গুলশান-১ এর ইন্ডিয়ান অ্যাপলিকেশন সেন্টারে পাসপোর্ট জমা পর্যন্ত দিয়ে এসেছি। এখন শুধু অপেক্ষা ভিসা পাওয়ার। আমাদের কালের কণ্ঠের দিনাজপুর প্রতিনিধি সালাউদ্দিন ভাইকে ফোন দিলাম। তাঁকে আমার দার্জিলিং ভ্রমণের কথা জানালাম। তিনি আমাকে বললেন কোনো সমস্যা হবে না। আপনি আসার শুধু একদিন আগে আমাকে জানাবেন। আমি রাতে বাসায় বসে বসে নেট থেকে হিলি-বালুরঘাট-শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং যাওয়ার রুট প্ল্যান জেনে নিতে থাকলাম। গুগলম্যাপ থেকে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ম্যাপ প্রিন্ট করে নিচ্ছি। এমন সময় বন্ধু এমদাদ ফেসবুকে নক করলো-

: কিরে তোর খবর কি?
: পাসপোর্ট জমা দিয়ে এসেছি।
: কবে দেবে?
: কাল।
: তুই কাল না গিয়ে পরশু যাশ ..
: এক দিন পরে কেনো?
: সুবিধা হবে, ওখানে গিয়ে বসে থাকতে হবে না।
: ঠিক আছে। তুই যাবি কবে?
: দুই জানুয়ারি
: টিকিট কেটেছিস?
: না। তবে তাড়াতাড়িই কেটে নিবো।
: দেখি যদি ভিসা পাই তবে একসাথে যাওয়া যায় কিনা ট্রাই করবো ..
: তাহলে তো ভালই হয়রে ..

চ্যাটিং বন্ধ করে পূনরায় ব্রাউজিংয়ে মন দিলাম। পশ্চিমবাংলার জেলা শহর দার্জিলিং। এর উত্তরে সিকিম রাজ্য, পূর্বে ভুটান ও জলপাইগুড়ি জেলা, পশ্চিমে নেপাল রাষ্ট্র, দক্ষিণে উত্তর দিনাজপুর জেলা ও বিহারের পূর্ণিয়া জেলা। দার্জিলিং জেলায় রয়েছে চারটি মহকুমা, দার্জিলিং সদর, কালিম্পং, কার্সিয়াং আর শিলিগুড়ি। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে মোট জনসংখ্যা ২৮ লাখ ৪২ হাজার ৩৪ জন। থানা- দার্জিলিং, গৌড়বাথান, জোড়বাংলো, জলঢাকা, কালিম্পং, কার্সিয়াং, মিরিক, নকশালবাড়ি, প্রধাননগর, পুলবজার আর শিলিগুড়ি।

দার্জিলিংয়ের দর্শনীয় হলো  টয় ট্রেন, রক গার্ডেন, টাইগার হিল, রাজভবন, চিড়িয়াখানা, সিঞ্চল হ্রদ, ধীরধাম মন্দির, দার্জিলিং-রঙ্গিত রোপওয়ে, বোটানিক্যাল গার্ডেন, আর্ট গ্যালারি, নাইটিঙ্গেল পার্ক, ম্যাল, গৌরীপুর হাউস, কালীবাড়ি, রিশপ গ্রাম, লাভা, লোলেগাঁও, কার্সিয়াং। এই জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে- তিস্তা, মহানন্দা, জলঢাকা, মেচি, রাম্মা, বালাসন প্রভৃতি নদী। এখানে পাহাড় পর্বত হলো- দূরবিনদার পর্বত, খুন পাহাড়, কাটা পাহাড়, টাইগার হিল, সন্দকফু, ফালুই, সবরগ্রাম, ঋষিলা, সিঞ্চুলা।

২০১১ সালের ১৮ জুলাই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং গুর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। চুক্তিতে দার্জিলিং গুর্খা হিল কাউন্সিল বাতিল করে গুর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পাসপোর্ট নিতে বিকেল চারটায় গিয়ে পৌঁছলাম গুলশান-১ এর লেকভিউ ভবনে। সোজা দোতলা গিয়ে বসে পড়লাম। এখানেও সিরিয়াল। বসে আছি আর ভাবছি ভ্রমণ প্ল্যান নিয়ে। একসময় সিরিয়ালে দাঁড়ালাম। হঠাৎ কক্ষের মধ্যে হৈচৈ শুরু হলো। একজন ব্যবসায়ী তিনি বিজনেস ভিসা পাননি। পরে তাঁকে সিকিউরিটি বের করে দিলেন আর বললেন ইন্ডিয়ান হাই কমিশনে যোগাযোগ করতে। আমি তিন নম্বর ডেস্কের সামনে যেতেই একজন ম্যাডাম আমার রশিদটি নিলেন। অনেকগুলো পাসপোর্ট থেকে আমারটি হাতে নিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে আর পাসপোর্টের ছবির দিকে তাকাচ্ছে। শেষমেষ আমাকে প্রশ্ন করলেন আমার পাসপোর্ট কিনা! আমি জানালাম হ্যাঁ আমার নিজের পাসপোর্ট। পরে তিনি তার ডানপাশের চার নম্বর ডেস্কে বসা একজন সহকর্মীকে ছবির সাথে আমাকে মিলাতে বললেন। তিনি হ্যাঁ বলায় পাসপোর্ট হাতে পেলাম। ভিসা পেলাম কিনা তখনও জানি না। পাসপোর্টের পৃষ্ঠা ওল্টাতে লাগলাম হন্যে হয়ে। অবশেষে চোখে পড়লো কাঙ্খিত ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসা সেঁটে আছে আমার পাসপোর্টের একুশ নম্বর পাতায়!

চার.
রাত দশটায় গিয়ে পৌঁছলাম কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে। আগেই শ্যামলী পরিবহনের টিকিট কনফার্ম করা ছিলো। বাস ছাড়বে রাত এগারটায়। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা তুলে নিলাম। ফোন দিলাম কালের কণ্ঠের দিনাজপুর প্রতিনিধি সালাউদ্দিন ভাইকে। তিনি আমাকে হিলি পোর্টের কাছের এক সাংবাদিক জাহিদ ভাইয়ের মোবাইল নম্বর দিলেন। বললেন সব রকম হেল্প করবেন তিনি। আমি জাহিদ ভাইকে ফোন দিয়ে জানালাম শ্যামলী পরিবহন ছেড়ে দিয়েছে হিলির উদ্দেশ্যে।

যমুনা সেতু পার হচ্ছি। আমার সিট ডানপাশের জানালার পাশে। জীবনের প্রথম যমুনা সেতু পার হচ্ছি। শীত ক্রমেই বাড়ছে যেন! সাথে নিয়ে যাওয়া লং জ্যাকেটটি গায়ে জড়ালাম। বাস থামলো শেরপুরের সীমাবাড়ির পেন্টাগন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের সামনে। বাস থেকে নামলাম। পেন্টাগনে প্রবেশ মুখে দেখি ভয়ংকর হা করে তাকিয়ে আছে বিশালাকৃতির একটি সিংহের মূর্তি। সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখি পেন্টাগনের দেয়ালে ডিপজল বড় বড় চোখে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। বুঝতে বাকি রইলো না এটি আমাদের মনোয়ার হোসেন ডিপজলের হোটেল! একটি বার্গার খেলাম।

যখন হিলি গিয়ে পৌঁছি তখন ভোর ছয়টা। শ্যামলী পরিবহন কাউন্টারে বসে টিভি দেখছি। ইন্ডিয়ান জি বাংলায় ফেলুদা হচ্ছে। সময় পার করছি। সকাল আটটায় আসলেন একটি বাইক নিয়ে জাহিদ ভাই। প্রথমে তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন ডাক বাংলোয়। সেখানে গিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপরে হালকা নাশতা সেড়ে আসলাম কাস্টম অফিসে। আমার পাসপোর্টটা জাহিদ ভাই অফিসের ভেতরে পাঠিয়ে দিলেন। আমরা দুজন অফিসের বাইরে দাড়িয়ে চা খাচ্ছি এমন সময় আসলেন কাস্টম অফিসার। জাহিদ ভাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি হ্যান্ডশেক করে আমার কার্ড দিলাম। বল্লাম আমাকে একটি ইন্ডিয়ান চালু সিম ম্যানেজ করে দিতে। আমাকে আর কোথাও যেতে হলো না। ট্রাভেল ট্যাক্স বাবদ তিনশ টাকা দিলাম পাসপোর্ট অফিসে। বল্লাম মোবাইল আর ক্যামেরা পাসপোর্টে এনডোর্স করে দিতে।

জাহিদ ভাই আর আমি আমাদের বর্ডার পার হলাম একসাথে। এখানে বিজিবি আমাদের কিছুই চেক করলো না। জাহিদ ভাই আমাকে বাংলাদেশের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। আমার কাছে শুধু একটা ব্যাক ট্রাভেল ব্যাগ। ইন্ডিয়ায় জীবনের প্রথম পা দিলাম। তখন সকাল সাড়ে নয়টা। ইমিগ্রেশনে দশ মিনিটের মতো সময় লাগলো। বাড়িতে বউয়ের কাছে ফোন দিলাম। বল্লাম কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইলে আর নেটওয়ার্ক থাকবে না। আমি একটা ইন্ডিয়ান সিম পেয়েছি সেটা চালু করে পরে ফোন দেবো। কাছে থাকা টাকাগুলো রুপিতে পরিবর্তন করে নিয়ে রিকশায় উঠলাম। যাবো হিলি বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটে যাওয়ার বাস ধরতে। বাসে উঠার আগে এয়ারটেল সিমে টাকা রিচার্জ করলাম। বালুরঘাটে যেতে সময় লাগলো প্রায় একঘন্টা। ভাড়া নিলো ষোল রুপি।

বালুরঘাটে ব্যক্তিগত কিছু কাজ ছিলো সেই কাজগুলো সেড়ে নিতে সময় লেগে গেল ঘণ্টাখানেক। দুপুর হয়ে গেছে। দুপুরের খাবার খেয়ে স্টেটবাসের একশ পঞ্চাশ রুপি দিয়ে টিকিট কেটে উঠে পড়লাম। উদ্দেশ্য শিলিগুড়ি। আট ঘণ্টা সময় লাগবে। উত্তর বাংলাসহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশ ছাড়াও নেপাল ও ভুটানের প্রবেশদ্বার এই শিলিগুড়ি। উত্তর বাংলার অন্যতম বাণিজ্যক শহর এটি। একটানা আট ঘণ্টা বাসে বসে থাকা এটাই প্রথম আমার। রাত নয়টায় শিলিগুড়ি গিয়ে পৌঁছলাম।

বাস থেকে নেমে রিকশা নিলাম। উঠলাম হোটেলে। ভাড়া পাঁচশ রুপি। রাতের খাবারটা হোটেলেই করলাম পয়ষট্টি রুপি দিয়ে। বাড়িতে বউয়ের কাছে ফোন দিলাম। কয়েকজন বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে মোবাইলে কথা বল্লাম। শিলিগুড়ি থেকে মোবাইলে বাংলাদেশে কথা বলছি। নিজের কাছে ভালোই লাগতেছিলো! বন্ধু এমদাদক্ওে ফোন দিলাম। ও আগেই এসএমএস করে ওর ইন্ডিয়ান মোবাইল নম্বর আমাকে দিয়েছিলো। এমদাদ কোলকাতায়। ও বললো কাল কিংবা পরশু শিলিগুড়ি আসবে তারপর দার্জিলিং যাবে। আমি ওর জন্য বসে সময় নষ্ট করতে চাইলাম না।

পাঁচ.
সকাল আটটায় উঠলাম টাটা সুমোতে। শিলিগুড়ি থেকে টাটা সুমোতে জনপ্রতি ভাড়া একশ ত্রিশ রুপি। জীপ ছেড়ে দিলো। দার্জিলিং যাওয়া যায় দুই ভাবে। জীপে বা টয় ট্রেনে। তবে টয় ট্রেনে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যেতে সময় লাগে প্রায় আট ঘন্টা তাই আমি সময় বাঁচাতে টাকা সুমো জীপেই উঠেছি। জীপে সময় লাগবে ট্রেনের অর্ধেক চার ঘন্টা। মনের মধ্যে উত্তেজনা কাজ করছে। দার্জিলিং তুমি কেমন?

১৯ শতকে সিকিম রাজের অধীন ছিল দার্জিলিং। ১৭৮০ তে নেপাল থেকে গোর্খারা এসে দখল নেয় দার্জিলিং। ১৮১৭ এ অ্যাংলো-নেপাল যুদ্ধে হেরে দার্জিলিং ছাড়ে নেপাল। আর ১৮২৮-এ আগমন ঘটে খষড়ুফ ও এৎধহঃ নামে দুই ব্রিটিশের, সিকিম রাজার সাহায্য নিয়ে দখল নেয় দার্জিলিং। ১৮৪০ সালে চোরাপথে চীন থেকে চায়ের বীজ আনে, নেপাল থেকে শ্রমিক, শুরু হয় চা চাষ। যা আজ পৃথিবী বিখ্যাত দার্জিলিং চা। ব্রিটিশরাই চা আনা নেওয়ার সুবিধার জন্য চালু করেন ট্রেন, যা আজ পর্যটকদের  প্রধান আকর্ষণ।

শিলিগুড়ি থেকে প্রায় এক ঘন্টা যাওয়ার পর শুরু হলো পাহাড়ি পথ। উপরের দিকে উঠছি তো উঠছিই। উঠার কোন শেষ নেই। পাহাড়ের গা ঘেষে রাস্তা। ড্রাইভার যে খুবই পাকা সেটা তার ড্রাইভিংয়েই বুঝলাম। পাহাড়ের আঁকা বাঁকা পথে খুব সাবধানে ড্রাইভ করছে। আমার পাশে বসেছে একজন নেপালী মেয়ে। তার সাথে কথা হলো। সে দার্জিলিংয়ের একটি শপি সেন্টারের সেল্স গার্ল। আমি জীপের ভেতর থেকেই পাহাড়ের ছবি তোলা শুরু করে দিয়েছি। পাহাড়ে উঠতে উঠতে আসলাম ঘুম নামক জায়গায়। এটি সাত হাজার চারশত সাত ফুট উপড়ের একটি রেল স্টেশন।

চারিদিকে কুয়াশা। সামনে কিছু দেখার উপায় নেই, বাতির আলোতে শুধু বুঝতে পারি সামনে গাড়ি আসছে। একে তো পাহাড়ি পথ তার উপর কুয়াশা আবার তারও উপর গাড়ি ওভারটেক ভয়ে আমার দম বন্ধ হবার যোগাড়। খাড়া পাহাড়ের শহর দার্জিলিং। নিচে মেঘের ভেলা ভেসে চলছে আর আমরা ক্রমশ উপরে উঠছি। অপূর্ব সব দৃশ্য। প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি। যে দিকে তাকাই চোখ ফেরানো দায়! দার্জিলিং যে পুরোটাই পাহাড়ের শহর সেটা আগে জানা ছিলো না। সমতল থেকে পাহাড়ের বাঁক ঘুরে ঘুরে প্রায় তিন ঘন্টা পর দার্জিলিং সদরে এসে পৌঁছলাম। স্বপ্নের দার্জিলিং! মনে হচ্ছে পৃথিবীর মাটি ছেড়ে আসমানে উঠে এসেছি।

জিপ থেকে নামলাম। প্রচ- শীতে হাত-পা আঁটকে আসতে ছিলো। ব্যাক ট্রাভেল ব্যাগ থেকে শীতের সবকটি সোয়েটার ও জ্যাকেট পড়ে নিয়ে হাটা দিলাম। তখন ঘড়িতে সময় সাড়ে বারোটা। হাটছি তো হাটছি কোথাও সমতল রাস্তা চোখে পড়লো না। প্রচ- কুয়াশায় দুরের পাহাড়ের দৃশ্যগুলো দেখা যাচ্ছিল না। হেটে হেটে হোটেল খুঁজছি। রাস্তার দুই পাশে শীতের পোশাকের দোকানই বেশি। প্রায় দোকানেই একশ, একশ বিশ, দুইশ রেট লেখা শাল ঝুলছে। বাঙালি হোটেল পেলাম। দুপুরের খাবার খেলাম আশি রুপি দিয়ে। থালা বাসন সব স্টিলের। হোটেলে গিয়ে উঠলাম। ভাড়া শিলিগুড়ির চেয়ে একটু বেশি সাতশ রুপি। ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম।

স্কুল থেকে সোজা সাত তলা উপড়ে বাজার, বাজার থেকে সোজা পাঁচ তলা নিচে বাড়ি অবস্থিত। আমি দশ মিনিট হেটে অস্থির। প্রচ- শীতের মধ্যেও দেখি কপালে ঘামের রেখা দেখা যাচ্ছে! আশ্চর্য হই এখানকার মানুষজন কিভাবে জীবন যাপন করছে! হাটতে হাটতে ‘বিগ বাজার’ পেলাম সাথে মাল্টিকমপ্লেক্স সিনেমা হল। বিগ বাজারে গিয়ে কি কি কেনা যায় সেটার হিসেব মিলাতে থাকলাম। ফেরার সময় কিনবো চিন্তা করে পাহাড়ের উপড়ের দিকে উঠতে থাকলাম। হঠাৎ কানে স্থানীয় ভাষার গানের সুর ভেসে আসলো। মনে হচ্ছে কোথাও কনসার্ট হচ্ছে। সেই দিকে হাটতে থাকলাম। গিয়ে পৌঁছলাম চারমাথায়। সেখানে কিছুটা জায়গা সমতল। একপাশে বড় মঞ্চে স্থানীয় মেয়েরা গানের তালে তালে নৃত্য করছে। লোক সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বসারও ভালো জায় গা আছে। সে অপরূপ দৃশ্য। ছবি তুলতে গেলাম স্থানীয় পুলিশ বাঁধা দিলো। কনসার্টের কোন ছবি তোলা যাবে না। অবাক হই। পাশেই দেখলাম অনেক বড় একটি স্ট্যাচু। কাছে যাই। স্ট্যাচুর গায়ে লেখা নেপালের জাতীয় কবি ভানু ভক্ত আচার্য্যের নাম। আমার খটকা লাগে। আমি কোথায় যেনো পড়েছিলাম নেপালের জাতীয় কবির নাম মাধব প্রসাদ ঘিমিরে। কবির সাথে ছবি তোলার শখটা দমিয়ে রাখতে পারি নি।

আগেই জেনেছিলাম দার্জিলিংয়ের গ্রিন টি এবং কমলা খুবই বিখ্যাত। রাস্তার পাশে মহিলাদের দেখলাম কমলা নিয়ে বসে আছে। কিনে খেয়ে আমি তো পুরোটাই অস্থির। কমলা এ্যাতো মিষ্টি হয়! এবার চা না খেলে কী হয়! শুধু খেলামই না কিনে নিলাম পুরো এক প্যাকেট। ফোন দিলাম বন্ধু এমদাদকে। ও কোলকাতা কাজে আটকে গেছে। দার্জিলিং আসাটা অনিশ্চিত। কী আর করা! রাত আটটার পর সব দোকান বন্ধ হয়ে যায় শুনে তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। ওমা! বাংলাদেশের মতো এখানেও দেখি লোড শেডিং হয়!

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সিদ্ধান্ত নিলাম হোটেল ছেড়ে দিবো। ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে বের হলাম। মনটা খারাপ হলো এমদাদের উপর। ও আসলো না। একা একা ভ্রমণে কোনো মজাই পাওয়া যায় না! তারপর জানুয়ারিতে এ্যাতোটাই শীত পড়েছে দার্জিলিংয়ে যেটা সহ্য করা আমার মতো শীত কাতুরের জন্য খুবই কষ্টকর। শাল কিনতে হবে কয়েকটা। কয়েকটা দোকান ঘুরে ঘুরে দেখলাম প্রথমে দাম কেমন? খুব একটা বেশি না তবে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। বড় একটা দোকানে গিয়ে আমার জন্য একটা, বউয়ের জন্য একটা আর ভাগ্নিদের জন্য কয়েকটা শাল কিনলাম। আমারটার দাম পড়লো নয়শ পঞ্চাশ রুপি। বউয়েরটা বারোশ, ভাগ্নিদেরগুলো সাড়ে চারশ করে।

হাটছি পাহাড়ের নিচের দিকে। নিচের দিকে হাটতে ভালোই লাগে। অন্তত উপড়ের দিকে যেতে যেরকম কষ্ট হয় সেরকম নয়। পাহাড়ের সৌন্দর্য একা একা দেখে মজা পাচ্ছিলাম না। ক্যামেরা বন্দি করছিলাম। ২ হাজার ১৩৪ মিটার উচ্চতায় পশ্চিমবাংলার অন্যতম পাহাড়ের শহর এই দার্জিলিং। ১২ বর্গ কিমি এলাকা নিয়ে হিমালয় গিরিশ্রেণির ধাপে ধাপে দার্জিলিংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ।

এ পাহাড় থেকে ও পাহাড় এভাবে হাটতে হাটতে কখন যে তিনটা বেজে গেছে বুঝিনাই। হঠাৎ মনে হলো চারটার পরে শিলিগুড়িতে যাওয়ার কোনো জীপ পাওয়া যায় না। সকাল থেকে না খাওয়া। খাওয়ার কথা একবারও মাথায় আসেনি! দুপুরের খাওয়াটা খেলাম পাহাড় কেটে তৈরি রাস্তার পাশে একটি ছোট্ট রেস্টুরেন্টে। জীপের সামনে শিলিগুড়ি লেখা দেখে হাত উঠালাম।

পাহাড় থেকে নামার সময় কেমন ভয় আরো বেড়ে গেলা। মনে হচ্ছিল এই বুঝি পাহাড় থেকে পড়ে গেলাম। পাহাড়ের গা ঘেষে সরু রাস্তা এঁকে বেঁকে নিচে নেমে গেছে। পাহাড় গুলো কেটে বাড়ী আর রাস্তা একের পর এক বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি বাড়ীর ছাদের পাশেই আরেকটি রাস্তা!  ড্রাইভার জীপ চালাচ্ছিল আমি মনে মনে দোয়া জপতে ছিলাম। শ্বাসরুদ্ধকর যাত্রা! ঝর্ণা, রেলস্টেশন, চা বাগান, পাহাড়ি মেয়ে সব রেখে চলে এলাম শিলিগুড়িতে।

শেষ.
শিলিগুড়ি থেকে বালুরঘাটের দিকে রাত নটায় বাস ছাড়বে। হাতে সময় আছে এক ঘন্টা। কিছু কেনা কাটা করার দরকার। বিশেষ করে বউয়ের জন্য শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ। শিলিগুড়ির শাড়ি নাকি ভালো হয়! স্টেটবাসের টিকিট কেটে রিকশা নিয়ে গেলাম শিলিগুড়ি মার্কেটে। সেখান থেকে সাড়ে তিন হাজার রুপি দিয়ে একটি লাল-সবুজ রঙের সিল্কের শাড়ি, চারশ, সাড়ে পাঁচশ করে কয়েকটা থ্রি পিস কিনে দ্রুত চলে এলাম বাসস্ট্যান্ডে। রুটি আর ডিম খেয়ে উঠলাম বাসে।

কখন যে বালুরঘাট এসেছি জানি না। এতোটাই ঘুমে ধরেছিলো যে আমাকে এই আট ঘণ্টার কিছুই জানি না। ঘুম ভেঙে দেখি বাসে কেউ নেই। ড্রাইভার হেলপারে সিগ্রেট টানছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সময় ভোর সাড়ে পাঁচটা। বসে থাকলাম কাউন্টারে প্রায় দুই ঘন্টা। তারপরে অন্য একটি বাস ধরে হিলি আসলাম। বর্ডারে এসেই জাহিদ ভাইকে ফোন দিলাম।

লেখক: সহসম্পাদক-কালের কণ্ঠ, ইমেইল: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৩
আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।