ঢাকা: উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, কৃষিজমির সংকোচন ও কায়িক শ্রমের পরিবর্তে কৃষি কাজে যান্ত্রিক আধিপত্যের কাছে হার মানতে হচ্ছে দেশের হাজারো কৃষি শ্রমিককে। এদেরই একজন শুক্কুর মিয়া।
বাংলার বার ভূঁইয়ার একজন ঈঁসা খাঁর রাজধানী বর্তমানের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের বাসিন্দা শুক্কুর মিয়ার বয়স এখন সত্তুর ছুঁই ছুঁই।
শুক্কুর মিয়া জীবনের প্রায় পঞ্চাশটি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন কৃষি কাজ করে। সাত সন্তানের জনক এ কৃষক যখন দীর্ঘ দিনের পেশায়, যখন পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতে আর পেরে উঠছিলেন না, তখন বাধ্য হয়েই বেছে নেন বালি টানার কঠিন পরিশ্রমের কাজ।
প্রায় বিশ বছর ধরে তিনি এ কাজই করে চলছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রিজের নীচে বুড়িগঙ্গা নদীর ট্রলার থেকে বালি তুলছিলেন শুক্কুর মিয়া। শরীরের সর্বত্রই চামড়ায় ভাঁজ পড়লেও ষাটোর্ধ্ব শুক্কুর মিয়ার কাজের উদ্দীপনা আর সক্ষমতা বার বারই যেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছিল তারুণ্যকে।
পয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ কেজি ওজনের একেক ঝাঁকা (টুকরি) বালি উঠানামা করতে করতে তরুণ শ্রমিকদেরকেও যখন খানিক পর পর জিরিয়ে নিতে দেখা গেলো, সেখানে শুক্কুর মিয়া টেনে চলছেন অবিশ্রান্তভাবে।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে সবাই বিবাহিত। ছেলেরা নিজেদের সংসার চালাতেই হিমশিম খায়। মেয়ে, জামাই ও নাতি-নাতনিদের অনেক আবদার থাকে। তা পূরণ করতেই এ বয়েসেও এই কষ্টের কাজ করতে হয়।
ভোর ছয়টা থেকে বালি টানা শুরু করে বিকেল চারটা-পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করতে হয় শুক্কুর মিয়াকে। এক টুকটির প্রতি এক-দেড় টাকা করে পায় একেক শ্রমিক। এভাবে দিনে একশ’ থেকে একশ’ বিশ টুকরি পর্যন্ত বালি টানতে পারে একজন শ্রমিক। তাতে আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা পর্যন্ত রোজগার হয় একজন শ্রমিকের।
নিজে পরিশ্রম করে নিজের খরচ যোগাতে পেরে যেমন খুশি শুক্কুর মিয়া, তেমনি গর্বিতও। তিনি বলেন, ‘‘কাম করতে করতে যাতে মরতারি। কেউর দয়া যাতে না নেওন লাগে। ’’
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৩
এআই/জেডএম