ঢাকা, শনিবার, ৭ আষাঢ় ১৪৩২, ২১ জুন ২০২৫, ২৪ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

টাইমের চোখে সেরা সিইও

শেরিফ সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:২৭, মে ৪, ২০১৩
টাইমের চোখে সেরা সিইও

গত কদশক ধরেই প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে চলছে বিপ্লব। এ ধারাতেই প্রযুক্তি বিশ্বের উদ্যোক্তারা হয়ে উঠছেন সেলিব্রিটি।

টিভির পর্দায়, পত্রিকার পাতায় এখন শুধু তাদেরই ছবি উঠে আসছে। উঠে আসে তাদের নানান সাফল্যকথা।

বিশ্বের তরুণেরা এখন আর নায়ক নায়িকাদের খোঁজ খুব একটা রাখে না। রাখে মার্ক জুকারবার্গ, টিম ‍কুক এবং স্টিভ জবসের মতো প্রযুক্তিবিদদের খবর। তাদের মতই হতে চায় সবাই। তাদের গল্পে নিজেদের সফল হওয়ার স্বপ্ন বুণতে শুরু করেছে তারুণেরা।

সদ্য প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিন প্রযুক্তিবিশ্বের প্রভাবশালী ১০ জন প্রধান নির্বাহী নির্বাচন করেছেন। যাদের চেষ্টায় এখনও প্রযুক্তিবিশ্ব নিত্যনতুন আবিষ্কারের উন্মাদনা ছড়াচ্ছে। মানুষের নৈত্যনৈমিত্তিক চাহিদার ওপর নির্ভর করে তাদের উদ্ভাবন চলছে অবিরত। স্বপ্নযাত্রায় সেরা ৫ প্রধান নির্বাহীদের নিয়েই এ বিশেষ প্রতিবেদন।

টিম কুক, অ্যাপল
স্টিভ জবসের হাত ধরেই ১৯৯৮ সালে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান অ্যাপলে য়োগ দেন টিম কুক। শান্ত, চুপচাপ স্বভাবের কুক অ্যাপলের সিইওর দায়িত্ব পান ২০১১ সালে। যখন স্টিভ না ফেরার দেশে। তখন অনেকেই শান্ত স্বভাবের কুককে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু সমালোচকদের গুরুত্ব না দিয়ে কুক অ্যাপলের মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
৫২ বছরের কুক সারাদিন‍ই ব্যস্ত থাকেন। ঠান্ডা মাথায় অ্যাপলের গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নেন। যে কোনো বিপদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অ্যাপলকে রক্ষা করার রেকর্ডও আছে কুকের। আইফোনকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে তুলে আনতে কুকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এমনকি প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে হলে আইফোন ব্যবহারকে ছড়িয়ে দিতে তারুণ্যকেই উৎসাহিত করেন কুক।

টিম কুকের মতে, যে কোনো উদ্ভাবনের প্রথম স্বাদটি দিতে হবে তরুণদের। কারণ তারাই হলো সমাজ পরিবর্তনকারী। তারাই সে আবিষ্কারকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তুলবে। তাদের দেখেই বয়স্করা প্রযুক্তিবান্ধব হতে শিখবে।

ল্যারি পেজ, গুগল
দুবছর আগে প্রধান নির্বাহী পদের দায়িত্ব নেন গুগলের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ। এসেই গুগলের কারিগরি দলকে আরও শক্তিশালী করার দিকে মনযোগ দেন পেজ। দিনরাত পরিশ্রম করে মোবাইল ফোনে গুগলের ইন্টিগ্রেশন পদ্ধিতে আরও শক্তিশালী করে তোলেন ল্যারি।

অনলাইনে নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে ল্যারি পেজের অন্তহীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ল্যারি পেজ ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই এ মেশিনটির প্রতি তীব্র আগ্রহবোধ করতেন।

তখন থেকেই স্কুলের সব অ্যাসাইনমেন্ট তিনি ওয়ার্ড প্রসেসরে করতেন। মিডিয়ায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই বুঝতাম আমার আবিষ্কারের ক্ষমতা আছে। এ জন্যই প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত ছিলাম। এখন মনে আছে, মাত্র ১২ বছর বয়সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি যে কোনো সময়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান শুরু করে দেব।

মার্ক জুকারবার্গ, ফেসবুক
ইন্টারনেটকে জনপ্রিয় করতে মার্ক জুকারবার্গের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞেরা। তাদের মতে, একমাত্র ফেসবুক একাই কোটি কোটি তরুণের প্রিয় হওয়ায় তারা ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এ ছাড়াও সামাজিক ব্যবসার প্রতিও ঝুঁকছে তরুণেরা। এসব বিবেচনা করেই টাইমের সেরা প্রধান নির্বাহীর মধ্যে জুকারবার্গ স্থান পেয়েছেন।

২৮ বছর বয়সী জুকারবার্গ ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেছেন হার্ভার্ডের হোস্টেলে বসে। তখন খুব একটা জনপ্রিয়তা না পেলেও এ সময়ে মানুষের দৈনন্দিন কাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে ফেসবুক।

টাইম ম্যাগাজিনের ২০১০ সালে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন জুকারবার্গ। জুকারবার্গের সফলতার পর তরুণদের ভেতর আবিষ্কারের নেশা ছড়িয়ে পড়ে। অনেকের মধ্যে জেগেছে উদ্যোক্তা হওয়ার লক্ষ্য। এ লক্ষ্যেই বিশ্বের তরুণেরা এগিয়ে যেতে চায়।  

জুকারবার্গের মতে, এ মুহূর্তে ফেসবুক সমাজের গণতন্ত্র রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। যেখানে মানুষ নিজের মতামত বন্ধুদের সঙ্গে বিনিময়ের সুযোগ পাবেন। সেই সঙ্গে উঠে আসে যুক্তিতর্ক। যা দিয়ে সুষ্ঠ সমাজ তৈরিতে অসামান্য ভূমিকা রাখছে ফেসবুক।

মারিসা মায়ের, ইয়াহু
মারিসা মায়ের যখন ইয়াহুর প্রধান নির্বাহী পদে আসেন তখন সবাই আড়ালে আবডালে নানান কথা বলেছেন। অনেকেই বলেছেন, ডুবন্ত ইয়াহুকে পাকাপাকিভাবেই ডোবাবে এ নারী। তার ওপর ইয়াহুতে যোগ দিয়েই মারিসা মা হওয়ার খবর প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যতের জন্য শঙ্কা হয়ে দাড়াঁয়। এমন অবস্থায় কিভাবে দায়িত্ব নেবেন?

সবাইকে তাক লাগিয়ে মারিসা নিয়মিত অফিস করেছেন। দায়িত্বে খুব বেশি অবহেলা করেনি। বরং মা হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই অফিসে এসে হাজির হয়েছেন। বুঝিয়ে দেন কাজের বিষয়ে তিনি কতটা সচেতন। এ মুহূর্তে মারিসা মায়ের বিশ্বের বহুল আলোচিত সব প্রধান নির্বাহীদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।

একের পর এক প্রধান নির্বাহীদের ব্যর্থতার পরই দায়িত্ব নেন মারিসা। এরপর থেকেই ইয়াহুর চেহারা ফিরতে শুরু করে। আগে অবশ্য গুগলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন মারিসা। তিনি সিম্বোলিক সিস্টেমে স্নাতক এবং কমপিউটার সায়েন্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। গুগলের জিমেইল এবং গুগল নিউজের শুরুর দিকটা তার হাত ধরেই এসেছে। বলতে গেলে গুগলকে অনেক সাফল্যই উপহার দিয়েছেন মারিসা মায়ের।

গিনি রমিটি, আইবিএম
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তি উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠান আইবিএম। সবার নজরে খুব একটা না থাকলেও এখনও প্রযুক্তি বাজারে নীরবেই দাপট করে বেড়াচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানটি। গিনি এ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী পদে নিযুক্ত হন ২০১১ সালে। গিনি হচ্ছেন আইবিএমের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী যিনি এ প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

গিনি ১৯৮১ সালে আইবিএমে যোগ দেন। দীর্ঘ সময় পার করার পর একজন যোগ্য হিসেবেই তিনি প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পেয়েছেন। যদিও দায়িত্ব পেয়েই প্রতিষ্ঠানের ভরাডুবির মুখোমুখি হতে হয়েছে গিনিকে। কারণ ২০১২ সালে আর্থিক লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি আইবিএম। এখন আর্থিক বিষয়ের দিকেই কঠিন নজর রাখছেন গিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।