আজকের আধুনিক সময়ে ব্যাংকিং পদ্ধতি পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর। উন্নয়নের এ ধারায় বাংলাদেশও এগিয়ে।
দেশজুড়ে অনলাইন ব্যাংকের সুফল ছড়িয়ে পড়ছে। এ পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে গ্রাম-বাংলার মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে এটিএম বুথের ব্যবহার। এটিএম অর্থ হলো অটোমেটেড টেলার মেশিন।
এরই মধ্যে পাড়ায় পাড়ায় বুথ বসানো নিয়ে ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতাও দেখা যায়। যতবেশি বুথ,ততবেশি গ্রাহক। এমনই ধারণা থেকেই জমে উঠেছে প্রতিযোগিতা।
যদিও এসব বুথের জন্য তাদের বেশ খরচও গুনতে হয়। যেমন একটি বুথ বসানোর জায়গা, সেখানে মেশিন বসানো এবং নিরাপত্তা। এ ছাড়াও আছে বুথের জন্য এয়ারকন্ডিশন, ইন্টারনেট এবং বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা।
একটি সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে রীতিমত বিরাট আয়োজনের পসরা সাজাতে হয়। তবে এসব আয়োজনকে বাদ দিয়েও এটিএম বুথগুলোর কাজ করা সম্ভব। এমন ভাবনারই বাস্তব প্রমাণ করে দেখিয়েছে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী শবনম শাহ্রীন সিফাত।
উদ্ভাবিত এ প্রকল্পের নাম ‘ভার্চুয়াল এটিএম’। সিফাতের এ প্রকল্পের সমন্বয়ক ছিলেন ডিপার্টমেন্ট অব কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. আলী শিহাব সাব্বির।
ভার্চুয়াল এটিএম সিস্টেম:
এটিএম পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন এটিএম বুথ এবং এটিএম কার্ড। এটিএম মেশিনে কার্ড প্রবেশ করা মাত্রই গোপন পিন নম্বর দিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে থাকি। এ সময়ে এটিএম পদ্ধতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে। কিন্তু বিদ্যুতের সংকট ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে দেশের অনেক জায়গায় এ ধরনের বুথ প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। এসব দিক বিবেচনা করেই সিফাত তার ‘ভার্চুয়াল এটিএম’ আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেন।
সিফাত এ উদ্ভাবনা নিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে এটিএম কার্ডের কাজ করবে মোবাইল ফোন। টাকা উঠানোর জন্য গ্রাহককে তার নির্দিষ্ট ব্যাংকে এসএমএস করতে হবে। আবার এটিএম মেশিনের কাজ করার জন্যই হার্ডওয়্যার ডিভাইস উন্নয়ন করা হয়েছে। একেই আমরা বলছি ভার্চুয়াল এটিএম ডিভাইস। এ ডিভাইসে একটি পিন তৈরি করে এসএমএস আকারে সার্ভারে পাঠিয়ে দেবে। এ ভার্চুয়াল এটিএম চার ধাপে তার কাজ করবে বলে সিফাত বাংলানিউজকে জানান।
প্রথম ধাপ:

দ্বিতীয় ধাপ:

এ পর্যায়ে গ্রাহক ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি সুনির্দিষ্ট তথ্যভিত্তিক এসএমএস পাবে। এটিই হবে তার ট্রানজেকশন আইডি। এ মাধ্যমে অর্থ পাওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি এগিয়ে যাবে।
তৃতীয় ধাপ:

চতুর্থ ধাপ: পিন এবং ট্রানজেকশন আইডি ব্যাংক নিশ্চিত করার পর আরেকটি এসএমএস এজেন্টের মোবাইলে পাঠিয়ে বলে দেবে কত টাকা গ্রাহককে দিতে হবে। এজেন্টও অবশ্যই গ্রাহকের ট্রানজেকশন আইডি মিলিয়ে নেবে। এক্ষেত্রে যদি পিন বা ট্রানজেকশন আইডি ভুল হয় তবে এসএমএসের মাধ্যমেই জানানোর ব্যবস্থা আছে।

যা যা প্রয়োজন:
ভার্চুয়াল এটিএম সিস্টেম জিএসএম নেটওয়ার্কে পরিচালিত হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ তো লাগবেই। যে ডিভাইসটি তৈরি করা হয়েছে এজেন্টের কাছে তা থাকতে হবে। বিশ্বাসযোগ্য এজেন্ট নিয়োগ করতে হবে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হতে হবে।
ভার্চুয়াল এটিএম মেশিন:
এ মেশিনের হার্ডওয়্যার তৈরিতে শবনম শাহ্রীন সিফাত সহযোগিতা নিয়েছেন ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনির্ভাসিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার রায়হান বিন রফিকের। তার সহযোগিতায় এ প্রকল্পটি কাজ করতে সক্ষম হয়েছে বলেও জানান সিফাত।
ডিভাইসটি নিয়ে তিনি বলেন, এটি গ্রাহক এবং এজেন্ট দুজনের জন্যই ব্যবহার করতে সুবিধা হবে। সাধারণ এ মেশিনে ১৮টি বাটন আছে। দশটি সংখ্যা ০-৯ পর্যন্ত। এ বাটনগুলো ট্রানজেকশন আইডি কিংবা পিন নম্বর প্রবেশ করানোর জন্য দেওয়া।
অন্যদিকে ‘এন্টার’ দেওয়ার বাটন আছে। কেউ যদি কোনো ভুল করে তবে তা মুছে দিতে আছে ব্যাকস্পেস সুবিধা। একটি এলসিডি ডিভাইসও আছে। যেখানে ট্রানজেকশন আইডি বা পিন বসানোর সময় তা প্রদর্শিত হবে। ব্যবহারকারী যেন তার প্রবেশ করানো সংখ্যা দেখতে পারেন সে জন্যই এ মনিটর। নির্দিষ্ট ব্যাংকের জন্যও আছে বিশেষ বাটন।
সফটওয়্যারের কথা বলতে গিয়ে সিফাত বাংলানিউজকে বলেন, মাইক্রোকন্ট্রোলার এ পুরো সিস্টেমে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তার জন্য একটি কোডিং তৈরি করতে হয়েছে ‘সি’ প্রোগ্রামিং দিয়ে। এসএমএস সার্ভার সফটওয়্যারের জন্য কাজ করতে হয়েছে।
নিজের এ আবিষ্কার নিয়ে সিফাত বাংলানিউজকে বলেন, এ ভার্চুয়াল এটিএম যদি ব্যাংকগুলো ব্যবহার করা শুরু করে তবে সারাদেশে খুব সহজেই এ সেবার সুফল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এ পুরো এটিএম তৈরিতে খরচ হবে মাত্র ৮ হাজার টাকা।
কিন্তু ১ হাজার ডিভাইস একসঙ্গে তৈরি করা হলে খরচ আরও কমে আসবে। যেখানে একটি এটিএম বুথ তৈরিতে অনেক টাকা গুণতে হতো সেখানে এ একটি ডিভাইস দিয়েই খুব সহজেই গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা যাবে। আর তাতে খরচটাও হবে কম।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সিফাত জানান, আমি চেষ্টা করব এ প্রকল্প যেন ব্যাংকগুলো গ্রহণ করে। কারণ তাদের জন্যই এ উদ্ভাবন। তারা যদি এর সুফল না নিতে পারেন, তবে এটি গবেষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। এ উদ্ভাবনের সুফল সব ধরনের গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে সরকারি- বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ২২২১ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর