মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেই ভাষার সৃষ্টি। ভাষার ব্যবহার নিয়ে যুগ যুগ ধরেই চলছে গবেষণা।
ভাষা জানা মানেই কথা বলার ক্ষমতা। সে ক্ষমতা নিয়েও পৃথিবীর বহু মানুষ সামাজিক বিভিন্ন আয়োজনে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলতে পারেন না। একে অনেকে ‘সোশ্যাল ফোবিয়া’ হিসেবে মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের গবেষণায় দেখা যায়, সেখানে প্রায় দেড়কোটি মানুষ সোশ্যাল ফোবিয়ায় আক্রান্ত। তারা কথা বলার সময় চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারেন না। অনেকে আবার নার্ভাস হয়ে যান। বিশেষ করে চাকরির ইন্টারভিউয়ের সময় এ সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে।
সব সমস্যারই সমাধান আছে। বিশ্বব্যাপী সোশ্যাল ফোবিয়ারও সমাধান খুঁজে দেখার চেষ্টা করছেন গবেষকেরা। ফোবিয়ায় আক্রান্ত কাউকে যদি বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তবে এ ধরনের সমস্যা থেকে উতরে যেতে পারবে।
এ ধারণা থেকেই সম্প্রতি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পিএইচডি শিক্ষার্থী এহসান হক এ সংক্রান্ত একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন।

সফটওয়্যারের নাম অটোমেটেড কনভার্সেশন কোচ। এটি কম্পিউটার স্ক্রিনে এক মুখচ্ছবি ভাসিয়ে তুলবে। যেটি একজন মানুষের মতই ব্যবহারকারীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে পারবে। শুধু তাই নয়, এটি চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার প্রশিক্ষণ দেবে। এমনকি আচরণ ব্যাখ্যা করে দিতে পারবে।
এ সম্পর্কে এমআইটি মিডিয়া ল্যাবের পিএইচডি শিক্ষার্থী এহসান হক বলেন, এ সফটওয়্যারটি সব ধরনের মানুষের কাজে লাগবে। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা রাখতে সম্ভব এ কোচ। এমনকি যে কোনো ধরনের ইন্টারভিউয়ে যাওয়ার আগে কোচের সঙ্গে প্র্যাকটিসও করে যেতে পারবেন।
গবেষণার কাজ করার ৯০ জন শিক্ষার্থীর ওপর এ সফটওয়্যারটির প্রয়োগ করে দেখা হয়েছে। এ সফটওয়্যারটি যে কোনো সাধারণ ল্যাপটপে ইনস্টল করে কাজ করানো সম্ভব। প্রয়োজন হবে শুধু ওয়েবক্যাম।
কম্পিউটারের সামনে বসার পর ওয়েবক্যামের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর হাসি, মাথা নাড়ানোর ধরণ, কথা বলার গতি ও শব্দ অ্যানালাইজ করবে।
মজার বিষয় হলো কম্পিউটার স্ক্রিনে তৈরি হওয়া মুখচ্ছবিটি নিয়ে। থ্রি-ডাইমেনশন মুখে যে হাসতে পারবে, কথা বলতে পারবে, প্রশ্ন করবে। এমনকি প্রশ্ন করলে উত্তরও দিয়ে দেবে।
অবিশ্বাস্য এ সফটওয়্যারটি নিয়ে এহসান বলেন, চাকরিতে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে যাদের আত্মবিশ্বাস নেমে পড়ে, তাদের জন্য কাজ করব বলে শুরুতে ভেবেছিলাম। পরে ভাবলাম, এমন একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে যা সব ধরনের মানুষের উপকারে আসে।
এ প্রকল্পটি এহসানের পিএইডির গবেষণা ছিল। এ গ্রীষ্মেই তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করবেন। তারপর উড়ে যাবেন ইউনিভার্সিটি অব রোচেসটারে। সেখানে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৩
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান