ঢাকা, সোমবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২, ২৩ জুন ২০২৫, ২৬ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

একেবারে যন্ত্রনির্ভর হওয়া উচিত নয়

স্বপ্নযাত্রা ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০৩, জুন ২৪, ২০১৩
একেবারে যন্ত্রনির্ভর হওয়া উচিত নয়

বিশ্ব এখন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ব্যস্ত। শুধু ব্যতিক্রম অ্যান্ড্রু ম্যাকাফি।

তিনি সমাজে প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে কাজ করেন। গবেষণা করে প্রমাণ করে বলেছেন, প্রযুক্তির ফলে মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। মানুষ অলস হয়ে পড়ছে। এ ছাড়াও হাজারো মানুষ চাকরিও হারাচ্ছেন।

তার এসব গবেষণা প্রবন্ধ নিয়ে বেশ কটি বইও লিখেছেন অ্যান্ড্রু। এ ছাড়া ব্লগিংয়ের মাধ্যমে সমাজের মানুষকে প্রযুক্তির ওপর খুব বেশি নির্ভর হয়ে পড়া থেকে বিরত থাকার প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার প্রযুক্তি ও বিশ্ব ভাবনা নিয়ে বাণিজ্য সম্মেলনে প্রাণবন্ত বক্তৃতা দেন। এ বক্তৃতা সংক্ষেপ করে অনুবাদ করা হলো।

বিশ্বের ল‍াখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়ছেন। অনেকে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিও পাচ্ছে না। বিশেষ করে আমাদের পরিশ্রমকে অনেক সহজ করে দিচ্ছে প্রযুক্তি। এ নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। এ ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলছে। আমি এ নিয়ে ভাবতে গিয়ে একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হই। এ যন্ত্র বা রোবটগুলো কি আমাদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে?

যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক মন্দার ভেতর দিয়ে গেছে। এ সময় ধীরগতির অর্থনীতি দেরীতে হলেও স্বাভাবিক গতি ফিরে পেয়েছে। ব্যবসায় যুক্তরাষ্ট্র লাভ করেছে। এমনকি আপনারা যদি ব্যাংকগুলোতে গিয়ে খোঁজ নেন, তবে জানতে পারবেন- তারা আগের চেয়েও অনেক ভালো অবস্থানে আছেন।

বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং সফটওয়্যার ব্যবসায় প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। হচ্ছিল না শুধু কাজ। সেটি হলো জনবল নিয়োগ করা। যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি আছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের চাকরি দেওয়ারও ক্ষমতা আছে। অর্থনৈতিক মন্দার ধকল পার হলেও চাকরিতে জনবল নিয়োগ এখনও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পায়নি।

২.
ইতিহাসজুড়ে আপনি দেখবেন আপনার কোনো দরকার হলো। যেমন সামান্য প্রয়োজন। একটি বাক্য এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় রূপান্তরিত করবেন। এ সামান্য কাজটির জন্যও প্রয়োজন হতো মানুষ। এখন তো এ কাজের মানুষের দরকার হয় না। প্রয়োজন শুধু একটি মুঠোফোনের। এটি থাকলেই একদম নিখুঁত এবং দ্রুত আপনার ভাষাকে অনুবাদ করে দিতে সক্ষম।

অনেকেই হয়ত বলবেন, হ্যাঁ ঠিক আছে। ওগুলো খুব নির্দিষ্ট করে দেওয়া আর বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবীরা আসলে নানা বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী এবং তারা নানা বিষয়ে দক্ষতা ও পারদর্শিতার অধিকারী, যা তারা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হওয়া ব্যাপারগুলো নিয়ে কাজ করতে সক্ষম। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা অনেক কঠিন।

এমন একজন বুদ্ধিজীবী হলেন আমাদের এ সময়ের এক ব্যক্তি কেন জেনিংস। তিনি ‘জিওপ্যারডি’ নামের কুইজ শো জিতেছেন একটানা ৭৪ বার। আয় করেছেন ৩০ ল‍াখেরও বেশি ডলার। আমরা যখন দেখি প্রযুক্তি বুদ্ধিজীবীদের কাজ করতে পারে। তখন ভেবে নেই, এ কাজটা একদমই সহজ।

ডিজিটাল টেকনোলজি শুধু বুদ্ধির কাজ গুলোতেই প্রভাব ফেলবে না, এগুলো জড়জগতের নানা জায়গাতেই কাজ করা শুরু করবে। আমার সুযোগ হয়েছিল কিছুদিন আগে গুগলের স্বয়ংক্রিয় গাড়িতে চড়ার। আর সেটা আসলে যেমনটা শোনাচ্ছে, সে রকমি দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩৫ লাক মানুষ আছে, যারা শুধু ট্রাক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। আমি মনে করি তাদের মধ্যে অনেকেই এ প্রযুক্তি আবিষ্কারের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আর এ মূহুর্তে মানুষের মতো রোবটগুলো প্রায় আদিম পর্যায়ে আছে। তারা বেশি কিছু করতে পারে না। কিন্তু সেগুলো খুব দ্রুতই উন্নতি করছে।

তাই অল্প কথায়-হ্যাঁ এ রোবটগুলো আমাদের চাকরিগুলো নিয়ে নিতেই আসছে! স্বল্পমেয়াদে আমরা চাকরির বৃদ্ধিটা আর উদ্দীপিত করতে পারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিয়ে আর পরিকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ করে।

কেননা আজকের রোবটগুলো এখনও ব্রিজ মেরামত করার যোগ্যতা অর্জন করেনি। কিন্তু খুব বেশি দূরে নয়, আমি মনে করি, এ রুমে যারা আছেন, তাদের অনেকের জীবনকালের মাঝেই আমরা সেই অবস্থার মাঝে পড়ব, যখন আমাদের অর্থনীতি অনেক উৎপাদনক্ষম হবে।

কিন্তু এতে মানুষের কাজ করার তেমন দরকার পড়বে না। আর এ পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া হবে আমাদের সমাজের অন্যতম বড় একটা ব্যাপার।

কিন্তু এত কিছুর পরও আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনও ডিজিটাল জগতের একজন আশাবাদী মানুষ। আমি ভীষণভাবে বিশ্বাস করি, ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলো একটি আদর্শ ভবিষ্যতের দিকে বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কোনো ভয়ানক ভবিষ্যতের দিকে নয়।

আর যদি এর ব্যাখা দিতেই হয়, তবে একটা ভীষণ বড় রকমের প্রশ্ন করতে চাই। প্রশ্নটি হচ্ছে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি কি?

৩.
বাষ্প ইঞ্জিন আবিষ্কার শিল্প বিপ্লবের সূচনা করেছিল। ইতিহাসবিদ ইয়ান মরিসের ভাষায়, বাষ্প ইঞ্জিনের আগে যত আবিষ্কার হয়েছিল, সেসব যেন ঠাট্টায় রূপান্তরিত হলো। যারা এটি আবিষ্কার করেছিল। তাদের মাথায় ছিল পেশীর ক্ষমতাকে অসীমের সঙ্গে গুণ করে পেশীর সব সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা।

এখন আমরা সেই অবস্থার মধ্যেই আছি। যখন আমাদের মস্তিষ্কের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি আর সেই অসীমের সঙ্গে আমাদের মানসিক শক্তিকে গুণ করছি। আর কেন এটা আমদের পেশীর সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেয়ে বড় কিছু নয়?  তাই আমি নিজের কথা বারবার বলার ঝুঁকি নিয়েও বলতে চাই, যখন আমি দেখি এ ডিজিটাল প্রযুক্তি আসলে এখন কি করতে চলেছে।

প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব নতুন কিছু তৈরির উন্মাদনায় মত্ত। এমআইটি বা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় যাই ভাবুক, এতসব আবিষ্কার নিয়ে আমি আপাতত খুব বেশি খুশী হতে পারছি না।

অনেকেই বলেন, প্রযুক্তি ধনী দেশগুলোর জন্য একটা মাধ্যম। এ ডিজিটাল যন্ত্রগুলো পিরামিডের নিচের হতভাগা মানুষগুলোর জন্য তেমন কিছুই করছে না।

আমি পরিস্কারভাবে বলতে চাই, এসব বাজে কথা। পিরামিডের এ নিচতলা আসলে প্রযুক্তিবিশ্ব থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ রবার্ট জেনসেন একটা দারুণ গবেষণা করেছেন। কিছুদিন আগে তিনি ভারতের জেলে গ্রামগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি দেখলেন, তারা যখন প্রথমবার মোবাইল পেল মানুষ তাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বদলে দিতে সফল হলো। গ্রামগুলোর ক্রেতা আর বিক্রেতাদের জীবন বেশ রাতারাতিই বদলে গেলো।

তাই আমি যখন এসব প্রমাণ দেখতে পাই তখন ডিজিটাল বিশ্বের প্রতি আশাবাদী হয়ে পড়ি। ডিজিটাল প্রযুক্তিগুলো অনেক বড় উপহার। আর তাই আমরা অনেক ভাগ্যবান। এমন একটা সময়ে বাস করতে পেরে যখন কি না এ প্রযুক্তি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আর পরিসরও বড় হচ্ছে।

তাই এও সত্যি,  রোবটগুলো আমাদের চাকরিগুলো নিয়ে নিচ্ছে। বিশ্ব হতে দারিদ্র্যতা, দাসত্ব আর দুর্দশা দূর হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি আমরা শিখতে চাচ্ছি আরও কত সহজ উপায়ে এ ভূমিতে বসবাস করা যায়।

বাংলাদেশ সময় ১৭৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৩
সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার/ সাব্বিন হাসান

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।