ঢাকা, রবিবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২, ২২ জুন ২০২৫, ২৫ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

মালিকের দরগায় ‘বাবা’র সাক্ষাৎ

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:০০, জুন ২৬, ২০১৩
মালিকের দরগায় ‘বাবা’র সাক্ষাৎ

আগামী ৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের উপ-নির্বাচন। এ আসনের ৭ বারের সংসদ সদস্য ও দু’বারের স্পিকার আব্দুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ায় আসনটি শূন্য হয়।

নির্বাচনের খবর জানাতে আসনটির নির্বাচনী এলাকাগুলোতে চষে বেড়াচ্ছেন বাংলানিউজের আউটপুট এডিটর রানা রায়হান ও স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট দেলোয়ার হোসেন বাদল। তারা জানাচ্ছেন উপ-নির্বাচনের সর্বশেষ হালচালের পাশাপাশি হাওড় অঞ্চলের নানা খবর।  
 
মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) থেকে: একের পর এক ভক্ত আসছেন। পূর্ণিমার সময় তাদের সংখ্যা বেশিই হয়। বাবা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছেন, সারাদিন তাকে ভক্তি গ্রহণ করতে  হবে। কেউ হাঁটু গেড়ে বসে, কেউ পুরোপুরি উপুড় হয়ে বাবাকে ভক্তি (সেজদার মতো করে) জানাচ্ছেন।

বাবা খালি গায়ে, অবশ্য ঘাড়ের ওপর একটি গামছা আছে। সেটা দিয়ে মাঝে মধ্যে ঘাম মুছে নিচ্ছেন। বেশ নাদুস নুদুস শরীরটা দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে রাখা। একটি পা সামনের দিকে ছড়ানো, আরেকটি ভাঁজ করা। চোখে অটো চশমা। পাকা চুল-দাড়ি।

আমাদের দেখামাত্র বাবা শরীরে সাদা একটি পাঞ্জাবি গলিয়ে নিলেন। আমাদের শহুরে পোশাকই আসলে সমস্যা, বাবাকে খানিক অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। একটু সতর্ক হয়ে বসলেন। আর একজন তরুণ প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে দিলেন আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য।

দূরদূরান্তে বাবার ভক্তকুল ছড়িয়ে আছে। সিলেট, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ কোথায় নেই?
dorgah
যে যেখান থেকেই আসুক কেন পানিপথেই আসতে হবে। হিন্দু, মুসলমানসহ সবাই আসেন বাবার কাছে। অসুখ, দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে বাবার কাছে আছে মোক্ষম ‘দাওয়াই’। ভক্তকুলের বিশ্বাস অত্যন্ত প্রবল। তারা উপকার পেয়েছেন, তাই বাবার কাছে ছুটে আসছেন।

বাবার সামনে গিয়েই বসলাম। বাবা আরো সতর্ক হয়ে বসলেন, চোখেমুখে রাজ্যের বিরক্তি স্পষ্ট। এর মধ্যেই বেশ কয়েকজন ভক্ত আসলেন, উপবিষ্ট হলেন এবং বাবাকে কিছু টাকা (স্থানীয় ভাষায় শিন্নি) ধরিয়ে দিলেন। এছাড়া গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, নতুন ফসল ইত্যাদিও দেয় অনেক ভক্ত।
 
দরগাহর বর্তমান গদীনশীন বাবা শাহ রুহুল আমিন। তিনি জানালেন, ৭০০ বছর আগে এই দরগাহ নির্মিত হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় সংস্কার কাজ হয়েছে। হজরত শাহজালালের সঙ্গে তার যেসব সহচর এসেছিলেন, তাদের তিনজন এই অঞ্চলের পা রাখেন। তারা হলেন, হজরত শাহ লতিফ উল্লাহ ইয়ামেনী (রহ.), হজরত আকিল শাহ মাওলা ইয়ামেনী (রহ.) ও হজরত শাহ দড়িয়া (রহ.)।
dorgah
শেষোক্ত সাধকের বংশধর বাবা রুহুল আমিন। তার কাছ থেকেই একথা জানা গেলো। ১৮ প্রজন্ম ধরে তারা এই দরগাহর দায়িত্বে।

জানা গেলো, হজরত শাহ দড়িয়া ইসলামের দাওয়াতে বের হয়ে আর ফেরেননি। দরগায় তার জন্য একটি জায়গা ফাঁকা রাখা আছে। তিনি ফিরলে সেখানেই থাকবেন। তবে দরগাহর নাম রাখা হয়েছে শাহ লতিফ শাহর নামানুসারে। মালিক শাহ তারই ছদ্মনাম। তাই মালিকের দরগাহ।

কেন এখানে এসেছেন জানতে চাইলে একজন নারী ভক্ত জানান, বাবাকে ফিরিয়ে আনতেই তারা ভক্তি করেন। এর মাধ্যমে বাবাকে ফিরিয়ে আনা হবে। কবর আকৃতির একটি স্থানের সামনে উপবিষ্ট হয়ে ভক্তি জানাচ্ছেন তার মতো বহু ভক্ত।

দরগাহটি মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়নের মধ্যে পড়ে। চারপাশে ইটের গাঁথুনি। বেশ পুরোনোই। হাওরের পানি এসে দরগাহর যাতে কোনো ক্ষতি করতে না পারে তাই এই ব্যবস্থা। মূল ভবনটিও অনেক দিন আগের। আপাতদৃষ্টিতে তাই দেখা গেলো।

দরগাহর ভবনটির ভেতরে একটি তালাবদ্ধ ঘরে মূল মাজারের অবস্থান। এখানে বাবা ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। কেউ কোনোদিনই দেখেননি এর ভেতরে কী আছে। তবে নিশ্চয়ই বাবা জানেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৩

সম্পাদনা:জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।