ঢাকা: দিল্লিতে এক সেমিনারে যাবার আগে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে গিয়েছিলাম ভিসার কিছু কাজ সারতে। হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি ( পলিটিক্যাল ও তথ্য) সুজিত ঘোষ কথা প্রসঙ্গে বললেন, এবার দিল্লিতে গিয়ে শহরের অনেক পরিবর্তন দেখবেন।
দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে চাক্ষুষ প্রমাণ পেলাম হাতে হাতে। এরআগে ২০০৩ সালে দিল্লি গিয়েছিলাম। সেবার আর এবার ২০১৩ সালের মধ্যে বিশাল ফারাক। ঝা চকচকে বিমানবন্দর। প্রশস্ত লন। চারদিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আগের অপরিসর জায়গা বিদায় নিয়েছে।
পথঘাটের চেহারা পাল্টে গিয়েছে। সাই সাই করে ছুটে চলেছে অসংখ্য যানবাহন। নেই কোন যানজট। মাঝেমধ্যে সিগনালের জন্য কিছু সময় দাঁড়ানো আরকি। তবে সবুজ সিগনালের দিকে গাড়ি থাকুক আর নাই - লাল বাতির অংশে গাড়ি চালক তা ভঙ্গ করছেন না। ঢাকার মতো মহাব্যস্ত সার্জেন্ট ও ট্রাফিক পুলিশ তেমন চোখে পড়ল না।
ট্রাফিক পুলিশের তো রৌদ্রে-বৃষ্টিতে কষ্ট দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই। সব তো মনিটরিং করা হচ্ছে সিসি টিভিতে। সিসি টিভি দেখেই সনাক্ত করা হচ্ছে দোষীকে। চালক তা আলবৎ বুঝেই ও পথে পা মাড়াচ্ছে না।
যাইহোক, ২০০৩ সালে গিয়েছিলাম ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্ট আয়োজিত এশিয়ার সাংবাদিকদের হাল-হকিকত নিয়ে এক সেমিনারে যোগ দিতে। সেবার উঠেছিলাম পার্ক-ইন’এ। এবারও নয়াদিল্লির সুন্দর নগরের জুসাকো আন-এ।
তার আগে বলে নিই- ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সকাল সাড়ে ৯টার আমাদের বহনকারী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি প্রবল বৃষ্টির কারণে ৯টা ৫০-এর দিকে ছাড়ে। ঢাকা-দিল্লি পথ পাড়ি দিতে সাধারণত সোয়া ২ ঘণ্টা সময় নেয়।
যথারীতি সময় ধরে পৌঁছেও যাই দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। কিন্তু বিমানজটের কারণে প্রায় আধাঘণ্টার মতো দিল্লির আকাশে আমাদের উড়োজাহাজটি উড়তে থাকে ল্যান্ড অনুমতি পেতে। আর এটা ছিল আমার কাছে একেবারে আর্শীবাদ ও অভাবনীয়। এক কথায় রোমাঞ্চকর।
কেননা বিনা খরচে কিনা- আকাশ থেকে মোঘলদের হাতে গড়া অনুপম সৌন্দর্য্যের দিল্লি দেখার এমন সৌভাগ্য কয়জন পায়। খুব আগ্রহ নিয়ে জানলার ধারে বসে দিল্লির সুউচ্চ বাড়ি, রাস্তা, খাল-জলাশয় দেখতে থাকি। আর আমি অভিভূত।
এরআগে উড়োজাহাজ জার্নির সোয়া ঘণ্টা বাদে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি আমাদের নীচ দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে শ্রভ্রমেঘমালা। আমার পাশে বসা ভোরের কাগজের মনি মাহমুদ তো তার মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণে দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছে। মনি শরতের আকাশের পেজা পেজা শুভ্র মেঘরাশির ভিডিওচিত্র ধারণ করেই চলেছে।
অবশ্য ঢাকা ছাড়ার পর পারেনি প্রবল বৃষ্টির কারণে। আবহাওয়া বিরুপ থাকায় বিমানটিতে দুলুনিও টের পেলাম বেশ কয়েকবার। একটু একটু ভয়ও লাগছিল। কী জানি কি হয়?
এরই মধ্যে ২বার ইউএনবির রফিকুল আমাদের কাছে এসে ঘুরে গেল। কী আর করবে বেচারার ধারে-কাছে পরিচিত কেউ নেই কথা বলার।
এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজটি ওড়ার পৌনে ৩ ঘণ্টা পর দিল্লির মাটি স্পর্শ করল। দেখি দিল্লির চারদিক ঝকঝকে তকতকে। বৃষ্টির কোন ছিটেফোটা নেই। সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত চারদিক। তবে দিল্লিতে ৫ দিন থাকলেও তেমন গরম অনুভূত হল না যেমনটি ঢাকায় ছিল।
এবার ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বন্দরে নামলাম। দেখি পাশেই অপেক্ষা করছে বাস আমাদের টার্মিনালে নেওয়ার জন্য। বাসে গিয়ে উঠলাম। মিনিট দশেক পর বিমানবন্দর টার্মিনালে গিয়ে বাস থেকে নামলাম।
নির্দেশিত পথ ধরে ইমগ্রেশন ও কাস্টমস-এর আনুষ্ঠানিকতা সারলাম কয়েক মিনিটের মধ্যে। বলে নিই- সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে আমার কাজটি আগেই করে দিলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অথচ ন্যূনতম সহযোগিতা পাইনি ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বরং খুটিয়ে খুটিয়ে ভুল ধরার চেষ্টায় ছিলেন তারা।
আমি দাঁড়িয়ে থাকার মিনিট পাঁচেক পরে কাজ সেরে চলে এলো মনি ও রফিক। বিমানবন্দর টার্মিনাল থেকে বাইরে বেড়িয়ে ট্যাক্সি নিলাম আমরা। গন্তব্য নয়াদিল্লির সুন্দর নগরের ‘জুসাকো ইন’ আবাসিক হোটেল। এরই ফাঁকে আমাদের পৌঁছানোর খবর জানিয়ে দিলাম সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রমেন্ট- সিএসই’র ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার- মিডিয়া পাপিয়া সমঝদারকে।
পথেই পড়ল দিল্লিগেট, অপরপাশে রাষ্ট্রপতি ভবন, কিছুটা পরে আকবরের সময়ে নির্মাণ করা মসজিদসহ পুরানোদিনের বহু কীর্তি। মিনিট ২৫ পরে পৌঁছালাম আমাদের থাকার জন্য ‘জুসাকো ইন’-এ। তখন স্থানীয় সময় বেলা দেড়টা। পরদিন (২৬ সেপ্টেম্বর)আমাদের সেমিনার।
বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৩,
এসএস/এমজেডআর