ঢাকা, সোমবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২, ২৩ জুন ২০২৫, ২৬ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

আজব কাজের আজব নোবেল

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩:৪৯, অক্টোবর ৩০, ২০১৩
আজব কাজের আজব নোবেল

নোবেল পুরস্কারের কথা সবার জানা। বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার এটি।

নোবেল পাওয়া মুখের কথা নয়। বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেই জিততে হয় নোবেল। বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে হাস্যকর ও অদ্ভুত ব্যাপার নিয়ে কাজ করার জন্য কেন থাকবে না? এই প্রশ্নটা যেন কাউকে করতে না হয় সেজন্যই প্রতি বছর অদ্ভুত ব্যাপার নিয়ে কাজ করার জন্য দেওয়া হয় ‘ইগ নোবেল’।

১৯৯১ সালে ‘অ্যানালস অব ইম্প্রবাবল রিসার্চ’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক মার্ক আব্রাহামস এই নোবেলের প্রচলন করেন। আগে ইগ নোবেলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একটি হলরুমে। কিন্তু বর্তমানে এটি দেওয়া হয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যান্ডার্স হলে। এই আয়োজনটির যৌথ স্পন্সর হার্ভার্ড কম্পিউটার সোসাইটি, হার্ভার্ড ৠাডক্লিফ সাইন্স ফিকশন অ্যাসোসিয়েশন এবং হার্ভার্ড ৠাডক্লিফ সোসাইটি অব ফিজিক্স স্টুডেন্টস।

বিভিন্ন বিষয়ে মোট ১০টি পুরস্কারে দেওয়া হয় প্রতিবছর। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সত্যিকারের নোবেলের ক্ষেত্রগুলো- ফিজিকস, ক্যামেস্ট্রি, ফিজিওলজি/ মেডিসিন, শান্তি ও সাহিত্য। এছাড়াও জনস্বাস্থ্য, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান, ইন্টারডিসিপ্লিনারি রিসার্চ- এসব বিষয়েও দেওয়া হয় ‘ইগ নোবেল’।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি হাস্যরসে পরিপূর্ণ থাকে। প্রতিবারই অনুষ্ঠান চলাকালীন একটি বাচ্চা মেয়ের কণ্ঠে শোনা যায়, ‘এসব বন্ধ করো! আমি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি!’ অনুষ্ঠান শেষ হয় ‘যদি আপনি পুরস্কার না পেয়ে থাকেন, এবং বিশেষ করে যদি পেয়ে থাকেন, আগামীবারের জন্য শুভকামনা’- এই কথাটির মাধ্যমে।

ইগ নোবেলকে শুধু অদ্ভুত কাজের অদ্ভুত নোবেল কিংবা শুধুমাত্রই মজার বিষয় হিসেবে দেখার কোনো কারণ নেই। এখানে পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষণাগুলো অদ্ভুত হলেও বিভিন্ন সময় তা খুব বড় উপকার করেছে সত্যিকারের গবেষণার।

যেমন, ২০০৬ সালে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী মশা অ্যানোফিলিস লিমবার্গারের পনির এবং মানুষের পায়ের দ্বারা সমানভাবে আকৃষ্ট হয়- এই গবেষণাটি ইগ নোবেল পায়। পরবর্তীতে এই তথ্য কাজে লাগিয়ে আফ্রিকার কিছু অংশে অ্যানোফিলিস মশার উৎপাত কমানোর জন্য এই পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়েছিল।     

ইগ নোবেল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান প্রচার করে ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও। সরাসরি ইন্টারনেটেও সম্প্রচারিত হয় এই অনুষ্ঠান। ইগ নোবেল নিয়ে লেখা হয়েছে কিছু গ্রন্থও।

প্রতিবারের মতোই ২০১৩ সালেও ইগ নোবেল দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ১২ সেপ্টেম্বর স্যান্ডার্স হলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আজকে জেনে নেব ইগ নোবেল ২০১৩ পুরস্কার দেওয়ার বিষয়বস্তু এবং পুরস্কারপ্রাপ্তদের কথা।

রসায়ন
520
রসায়ন বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন জাপান ও জার্মানির একদল গবেষক। তারা অনেক পরিশ্রম করে আবিষ্কার করেছেন যে, মানুষ যখন পেঁয়াজ কাটে, তখন চোখ থেকে জল ঝরার ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়। এটি একটি কঠিন রসায়ন, অথচ বিজ্ঞানীরা এতকিছু নিয়ে কাজ করছেন, কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না।

পদার্থবিদ্যা
9201
এই বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন ফ্রান্স, রাশিয়া, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক ও ব্রিটেনের গবেষকরা। তারা আবিষ্কার করেছেন পানির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পদ্ধতি। তবে সেই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে পানির উপরে হাঁটার জন্য মানুষকে অবশ্যই যেতে হবে চাঁদে।

চিকিৎসাবিজ্ঞান
32013
এ বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন চীন, জাপান ও ব্রিটেনের গবেষকরা। তারা আবিষ্কার করেছেন ইঁদুরকে বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখার পদ্ধতি। হার্ট সার্জারির পর একটি ইঁদুর সাধারণত এক সপ্তাহ বাঁচতে পারে। কিন্তু তাদের আবিষ্কারে প্রমাণিত হয়েছে যে হার্ট সার্জারির পর ইঁদুরকে অপেরা মিউজিক শুনিয়ে মন ভালো রাখলে সেই ইঁদুর রীতিমতো ২৭ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

জীববিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যা
2201
এই ক্ষেত্রটিতে নোবেল জিতেছেন সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ব্রিটেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা। গুবরে পোকা হারিয়ে গেলে ছায়াপথ অনুসরণ করে পথ চিনে ঠিক জায়গায় ফিরে আসে- এটি জানিয়ে পুরস্কারটি বগলদাবা করেছেন তারা।  

মনোবিজ্ঞান
212
মনোবিজ্ঞান বিভাগে ইগ নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, পোল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের গবেষকরা। তারা গবেষণা করে দাবি করেছেন যে মদ খেয়ে মাতাল হওয়ার পর মানুষ নিজেকে অনেক বেশি স্মার্ট মনে করে।

প্রকৌশল
12013
যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষক পেয়েছেন এই পুরস্কার। তিনি বের করেছেন বিমান ছিনতাইকারীকে ধরার পদ্ধতি। তার পদ্ধতি অনুযায়ী কোনো বিমান ছিনতাই হলে জাল দিয়ে ধরা হবে ছিনতাইকারীকে। তারপর তাকে বিমান থেকে ফেলে দেওয়া হবে। তবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মতো নিষ্ঠুর কাজ করেন নি এই গবেষক। বিমান থেকে বের হওয়ার পরেই একটি অদৃশ্য প্যারাসুট খুলে গিয়ে ছিনতাইকারীকে নিরাপদে নিচে নেমে আসতে সাহায্য করবে। আর সে যাতে পালিয়ে না যেতে পারে, সেজন্য প্যারাসুটে লাগানো থাকবে রেডিও ট্রান্সমিটার। এর মাধ্যমে পুলিশ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করতে পারবে।

প্রত্নতত্ত্ব
এ বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্নতত্ত্ববিদরা। তারা আবিষ্কার করেছেন যে মাংসের সঙ্গে লেগে থাকা হাড়ও মানুষের পেটে গিয়ে হজম হয়ে যায়।

শান্তি
বেলারুশের রাষ্ট্রপতি ও সেখানকার এক পুলিশ পেয়েছেন এই পুরস্কার। এক হাত নেই- এমন এক নাগরিককে গ্রেফতার করার মহৎ কর্মের জন্য তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

অনুমান
ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডসের গবেষকরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে গরু কতক্ষণ দাঁড়াবে,কতক্ষণ বসবে, শুয়ে থাকবে বা দাঁড়ানো থেকে বসে পড়বে অথবা অবস্থান পরিবর্তন করবে সেটা বুঝতে পারাটা সত্যিই কঠিন। একথা জানিয়ে অনুমান বিভাগের ইগ নোবেল জিতে নিয়েছেন এই গবেষকরা।

জনস্বাস্থ্য
সার্জিক্যাল ম্যানেজমেন্ট অব অ্যান এপিডেমিক অব পেনাইল অ্যাম্পুটেশনস ইন সিয়াম নামক গবেষণার জন্য ৮ জন গবেষকের একটি দল এই পুরস্কার পান।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৩
এমএনএনকে/এএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।