ঢাকা, সোমবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২, ২৩ জুন ২০২৫, ২৬ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

চায়ের কাপে ভোটের ঝড়

ভোটটা লইয়াই ঠেইক্কা গেছি

মাহমুদ মেনন ও এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৪০, নভেম্বর ১, ২০১৩
ভোটটা লইয়াই ঠেইক্কা গেছি

গৌরীপুর কলতাপাড়া থেকে: ‘আমরা এহনে ভোটটা লইয়াই ঠেইক্যা গেছি’। কারে ভোট দিয়াম কইতাম না।

ধারির আউলিত যাইয়া ছিল মারমু, কেউ জানতো না। ’

যুবক বয়সী একজন যখন এমন একটি কথা বললেন, মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেন অন্যরাও।

হ’ হ’ ঠিক কইছে.... কাউরে কিছু জানান যাইতো না।

ভোটারদের ভয়, তারা রাজনীতির কোন পক্ষে সমর্থন করেন তা আর জানাতে চান না। কারণ তারা বুঝে গেছেন কোনো দলের পক্ষে অবস্থান নিলেই, কোন দলে ভোট যাবে তা আগে জানিয়ে দিলেই বিপদ।

এই বিপদ মারধোরের, ধর-পাকড়ের।

কথা হচ্ছিলো নজরুলের চায়ের দোকানে বসে। সেখানে চায়ের কাপে ভোটের ঝড় তুলেছিলেন একদল যুবা-মধ্যবয়সী-বয়োবৃদ্ধ। কেউ ঘর-গৃহস্থালি করেন, কেউ রাজমিস্ত্রির কাজ, কেউ গাড়ির চালক, কেউ সামান্য চাকরি।

শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের কলতাপাড়ার তিন রাস্তার মোড়ে নজরুলের এই চায়ের দোকানে তাদের আড্ডা চলছিলো। শুক্রবার বলেই ভোর থেকেই জমে উঠেছে চায়ের আসর। নজরুলের বিকিকিনি ভালো।

টেলিভিশনে বাংলাছবি চলছিলো। কেউ কেউ মন দিয়ে ছবি দেখছিলেন। কিন্তু অধিকাংশেরই মন রাজনীতির আলোচনায়।

ভোট নিয়ে কথা উঠতেই একজন বললেন, ভোটটা নিয়াই তো ঠেইক্কা গেছি। ভোট তো একজনরে দিতেই হইবো। তয় কারে দিমু তা কওন যাইতো না।

খুব দ্রুত দ্রুত প্রসঙ্গ পাল্টাচ্ছিলো। গত তিন দিনের হরতালে কি হয়েছিলো। কারা হামলা চালিয়ে কার দোকান কুপিয়েছে। পুলিশ অকারণে কোন নিরাপরাধ দোকানিকে ধরে নিয়ে গেছে। মন্ত্রীর নির্দেশেই নাকি তা হয়েছে।  

ওসি নিজেই দল করে বলে ছাড়তে চায়নি, কিন্তু টিএনও’র সদিচ্ছায় ছাড়া পেয়েছে, এসব মত আসছিলো আলোচনা থেকে।

গৌরিপুরের এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকিরের ওপর জনগণ খুব একটা তুষ্ট নয়। কিন্তু তারা বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপরও ভরসা পাচ্ছে না। তাদের মতে, মন্ত্রী দেইখা ভোট দিয়ে লাভ নাই। এবার ভোট হবে দলে। হয় আওয়ামী লীগ নয় বিএনপি। আওয়ামী লীগের ভিন্ন প্রার্থী থাকতে পারে এতে খুশি মনে হলো যারা ওই দলের সমর্থক তাদের। কিন্তু দ্রুত প্রতিবাদও এলো আলোচনার মধ্য থেকেই। তার মুখে ওই প্রতিমন্ত্রীর গুণগানও শোনা গেলো।

তবে গৌরীপুরের কলতাপাড়ার মানুষের এখন আর সময় নেই। রাজনীতি তাদের পেটের ভাত দেবে না, সেটা তারা বুঝে গেছে। তাই রাজনীতি নিয়ে তাদের সময়ক্ষেপণকে ‘ফালতু’ কাজ বলেই মনে করেন অনেকে।

ওই আড্ডায় বিশেষ করে যারা গৃহস্থ তাদের কাছে এই সপ্তাহটি যাবে চরম ব্যস্ততায়। জমিতে আলু লাগানোর কাজ। আকাশে মেঘ কেটে রোদ উঠেছে দেখে একজন কৃষককে বেশ খুশি লাগছিলো। বললেন, দুই তিন দিনের মধ্যে শত শত একর জমিতে আলু চাষ হবে।

মৌসুমে কলতাপাড়ার তিনরাস্তার মোড় থেকে প্রতি দিন টনকে টন আলু ট্রাকে লোড হয়। এই অঞ্চলে গৌরীপুরেই নাকি আলু চাষে ফলন বেশি, দাবি ওই চাষীর।

আরেক গৃহস্থ ধানচাষ করেছেন। গত ক’দিনের বৃষ্টিতে ধানের খুব ক্ষতি হয়ে গেছে। ‘টানের জমিতে ধান নষ্ট হইছে’ বললেন তিনি। তবে তারপরেও এখন ধানপাকার অপেক্ষায় রয়েছেন এই চাষী। বললেন, কাজ নেই তাই চায়ের দোকানে আসি, আড্ডা দেই, সিনেমা দেখি, রাজনীতির কথা শুনি।

রাজনীতির কথা শুনতে খুব ভালো লাগে? এমন প্রশ্নে বললেন, আমাদের ভাই পেটনীতি... রাজনীতি আমাদের কাজ না। রাজনীতির সঙ্গে আমরা নাই। তবে রাজনীতির কথা শুনতে ভালোই লাগে। দেশের যা অবস্থা... হাসিনা... খালেদা কারোর উপরই ভরসা নাই, বলেন এই ষাটোর্ধ।

হাসিনা-খালেদা প্রসঙ্গ উঠতেই একজন মন্তব্য করলেন, হাসিনাই আসলে গরীব মানুষের জন্য ভালো। অপর পাশের বেঞ্চে বসে ছিলেন অন্য এক যুবক। নিজের সিট থেকে উঠে মন্তব্যকারীর পাশে এসে বললেন, তুমি যেইডা কইতাছো সেইডা ঠিক না। খালেদাই গরীবের পক্ষের।

ষাটোর্ধ অপর একজন দ্রুত টের পেলেন আলোচনা ভিন্নদিকে গড়াতে পারে। বললেন, তোমরা থামো। হাসিনা-খালেদা নিয়া আমারার পারাপারি কইরা কাম নাই।

হ’ হ’ এইডা ঠিক কইছেন। হাসিনা- খালেদা যে যাই করি আমরা ভাই এক এলাকায় বাস করি। আমরা এইডা নিয়া ঝগড়া-বিবাদ করতে রাজি না।
এইজন্যই তো কইছি, ধারির (চটের বেড়া) আউলিত গিয়া ছিল মারমু। কেউ জানতো না কারে ভোট দিয়াম।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৩
এমএমকে/এমজেডআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।