ঢাকা: ভেঙে গেলে বা নষ্ট হলে কত জিনিসই তো ফেলে দিই আমরা। এখন আবার সেসব জিনিস নতুনভাবে ব্যবহার করে নতুন কিছু সৃষ্টি করার একটা প্রচলনও শুরু হয়েছে।

নেক চাঁদ নামক এক ব্যক্তির উদ্যোগে গড়ে উঠেছে এই রক গার্ডেন। তাই একে নেক চাঁদ রক গার্ডেনও বলা হয়। এটি সুখনা লেক ও ক্যাপিটাল কমপ্লেক্সের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
রক গার্ডেন মূলত পাথুরে এলাকা। এর মধ্যেই হারানো এক রাজ্যের আদলে ফেলনা জিনিস দিয়ে নিজের মতো করে ভাস্কর্য গড়েছেন নেক চাঁদ। তার সেই রাজ্যে দূর্গ থেকে মন্দির, নৃত্যশিল্পী থেকে গাঁয়ের জীবন, এমনকী ময়ূর, বানর সহ বিভিন্ন পশুপাখি- কোনো কিছুরই অপূর্ণতা নেই।
রক গার্ডেন তৈরির পেছনের গল্পটাও চমৎকার। ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট অব চণ্ডীগড় ক্যাপিটাল প্রজেক্টের রোড অফিসার ছিলেন নেক চাঁদ। রাস্তা-ঘাট নিয়েই ছিল তার কাজ। প্রায়ই দেখতেন অপ্রোয়জনীয় জিনিস এখানে-সেখানে ফেলে কীভাবে পরিবেশ দূষিত করছে মানুষ। আর এ চিন্তা করতে করতেই মনে হলো, আরে! এসব ফেলনা জিনিস দিয়েও তো অনেক কিছু করা যায়! এই ধারণা থেকেই তার প্রচেষ্টায় জন্ম নেয় রক গার্ডেন।

১৯৫৭ সালে নিজের প্রচেষ্টায় রক গার্ডেনের কাজ শুরু করেন নেক চাঁদ। ফেলনা জিনিস দিয়ে গড়তে শুরু অরেন ভাস্কর্য। তারপর ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সাতটি বছর শুধু ফেলনা জিনিস কুড়িয়েছেন তিনি। তৈরি করেছেন অসাধারণ সব ভাস্কর্য। তবে দীর্ঘ ১৮ বছর সবার কাছ থেকে লুকিয়ে নিজের এই স্থাপনাগুলো রেখেছিলেন নেক।
তার একটা কারণও ছিল। তার কাজটা যে ছিল অবৈধ! আসলে কাজের জন্য সুখনা লেকের কাছে যে বনটি বেছে নেন নেক, সেটি ছিল সরকারি সম্পদ। সেখানে যেকোনো রকম স্থাপনা তৈরি অবৈধ ছিল। সেজন্য লুকিয়ে লুকিয়েই কাজ করছিলেন নেক।

তাই এটি জানাজানি হওয়ার পর রক গার্ডেন হুমকির মুখে পড়ে। ততদিনে এটি দখল করে ফেলেছে প্রায় ১২ একর জায়গা! তবে জনগণ পক্ষে থাকায় গুঁড়িয়ে যায়নি রক গার্ডেন আর তাকে ঘিরে নেক চাঁদের স্বপ্ন। ভেঙে ফেলার বদলে ১৯৭৬ সালে সরকার এটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। নেক চাঁদকে এখানে কাজ করার জন্য আলাদা বেতন দিয়ে ‘সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার, রক গার্ডেন’ পদ দেয়। কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য ৫০ জন্য কর্মীও নিয়োগ দেয় সরকার।
তারপর সবার চেষ্টায় আস্তে আস্তে নেক চাঁদের সেই ছোট্ট করে শুরু করা ফেলনা জিনিসের অনন্য স্থাপনা হয়ে ওঠে আজকের রক গার্ডেন। এখন এটি ৪০ একরের বিশাল জায়গা দখল করে আছে। শুধু তাই নয়, এটি হয়ে উঠেছে চণ্ডীগড়ের প্রধান আকর্ষণ। ১৯৮৩ সালে ভারতের একটি ডাকটিকিটেও প্রকাশিত হয়েছিল রক গার্ডেনের ছবি।

রক গার্ডেনে নানা রকম ভাস্কর্য আছে। প্রতিটাই তৈরি হয়েছে ফেলনা সামগ্রী দিয়ে। পশুপাখি, মন্দির, নৃত্যশিল্পী, গাঁয়ের বধূ ইত্যাদি তৈরি করা হয়েছে শিল্পকারখানার বর্জ্য ও অন্যান্য ফেলনা জিনিসের সমন্বয়ে। ভাঙা চুড়ি, বোতল কিংবা টাইলসের টুকরো- রক গার্ডেনে সবকিছুই পেয়েছে শৈল্পিক রূপ।
বর্তমানে আধুনিক যুগের একটি আশ্চর্য স্থাপনায় পরিণত হয়েছে রক গার্ডেন। প্রতিদিন পাঁচ হাজারেরও বেশি পর্যটক এখানে আসেন। আর প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বছর রক গার্ডেনে ঘুরতে যান ১২ মিলিয়নের বেশি পর্যটক।

প্রতিদিনই সাধারণের জন্য খোলা থাকে রক গার্ডেন। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশমূল্য ৫ রুপি এবং শিশুদের জন্য ৩ রুপি। ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে রক গার্ডেন।
কোনো কিছুই ফেলনা নয়- নেক চাঁদের এমন চিন্তা থেকে গড়ে ওঠা রক গার্ডেন আজ প্রমাণ করেছে এ কথার সত্যতা। তাই তো চণ্ডীগড়ের মানুষ শুধু নয়, এখান থেকে একবার ঘুরে যাওয়া প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে ফেরে রক গার্ডেনের কথা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর