জ্যোতিষ শাস্ত্রের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে রত্ন। নীলা, পলা, গোমেদ ইত্যাদির নাম আমারা কমবেশি সবাই শুনেছি।
খুব স্বাভাবিকভাবে এ প্রশ্ন জাগতেই পারে, গ্রহ-নক্ষত্রের সরাসরি প্রভাব মানুষের জীবনে বিদ্যমান থাকলেও রত্ন দিয়ে তার প্রতিকার কি সম্ভব? প্রশ্নটি মোটেও অপ্রাসঙ্গিক নয়।
আজকের দিনে মানুষের জীবনে গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব নিয়ে কোনো বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের প্রশ্ন থাকা উচিৎ নয়। আমরা জানি, আমাদের সব থেকে কাছের নক্ষত্র সূর্য না থাকলে এই পৃথিবীতে প্রাণ ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়তো।
আমরা এটাও জানি, কীভাবে চন্দ্রের প্রভাবে জোয়ার–ভাটা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর নদীমাতৃক এবং কৃষিপ্রধান দেশের মানুষ হিসেবে আমরা খুব ভালো করে বুঝতে পারি জোয়ার ভাটার অপরিসীম গুরুত্বের কথা। ঠিক এভাবেই কখনো প্রত্যক্ষ কখনো পরোক্ষভাবে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন মহাজাগতিক প্রভাব আমাদের জীবনে পড়ে।
এবার আসা যাক, রত্নগুলি আমাদের জীবনে কী প্রভাব বিস্তার করে সেই প্রশ্নের সমাধানে।
এর উত্তরে বলা যেতে পারে যে, বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গ পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত। শুধু তাই নয়, এই পরমাণুই প্রাণ সৃষ্টির মূলে অবস্থান করছে। তা প্রমাণিত হয়ে গেছে ‘ঈশ্বর কণা’ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে।
আবার সৌরমণ্ডলের গ্রহগুলোও পরমাণুর একেকটি সমষ্টি। আর ভূত্বকে, ভূগর্ভে ও সমুদ্রতলে সুনীল জলরাশির গভীরে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন রত্নগুলো এমন সব পরমাণুর সমন্বয়ে সৃষ্ট, যার উপস্থিতি মানব দেহেও প্রবলভাবে বিদ্যমান।
বিভিন্ন ধরনের রত্ন সরাসরি মানুষের ত্বককে স্পর্শ করে শরীরের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। মানবদেহে বিদ্যমান বিভিন্ন পরমাণুর অসামঞ্জস্যপূর্ণ উপস্থিতির সামঞ্জস্য নিয়ে আসে। ঠিক যেমন অ্যানিমিয়া রোগীকে দেওয়া হয়, আয়রন ট্যাবলেট আর থ্যালাসেমিয়া রোগীদের শরীরে বাড়তে থাকা আয়রনকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া হয় ওষুধ।
বিভিন্ন ধরনের রত্নের ধর্ম যে তারা বিভিন্ন মহাজাগতিক রশ্মিগুলিকে প্রতিফলিত বা বিকিরিত করতে পারে। আর এই মহাজাগতিক রশ্মিগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। তাই, রত্ন ধারণ করে স্নায়ুর ওপর বিশেষ বিশেষ মহাজাগতিক রশ্মি যোগ বা বিয়োগ করে শক্তিশালী করা বৈজ্ঞানিকভাবেই সম্ভব।
ফলে, স্নায়ুগুলি শক্তিশালী হয়ে নতুন চিন্তা-চেতনায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এই সব আলোকরশ্মি প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৃথিরীর ভূভাগের ওপর পড়তে থাকে। প্রতিটি রত্মের পৃথক পৃথক রশ্মির তেজ আহরণের ক্ষমতা আছে। মহাজগতিকের অংশ থেকে বেরিয়ে আসা এই আলোক রশ্মিই আমাদের ওপর নানাভাবে কাজ করে।
আমরা জানি, সূর্যালোকের প্রভাবের ফলেই পৃথিবীর কোথাও শীত বেশি, কোথাও উষ্ণতা বেশি। আবার কোথাও জমে আছে, মাইলের পর মাইল বরফ। আবার অন্যদিকে দিগন্তজোড়া মরুভূমি।
ঠিক যেমন সূর্যরশ্মি প্রকৃতিকে প্রভাবিত করে, তেমনি মহাজগতিক রশ্মি মানুষের শরীরকেও প্রভাবিত করে। কারণ, মানুষ প্রকৃতির একটি অংশ মাত্র।
ভূগর্ভে বা সমুদ্রগর্ভে যে সব রত্ন-পাথর জমা থাকে, সেগুলিও ওই সৌর রশ্মিরই রাসায়ণিক ক্রিয়ারই ফল। মানুষের দেহের ওপর বিভিন্ন রশ্মির প্রভাব বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত।
আমরা জানি, বায়ুমণ্ডলে ছিদ্রের ফলে অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ করে আমাদের শরীরে নানা রকম রোগের সৃষ্টি করছে। আবার এই রশ্মিকেই ব্যবহার করে শরীর থেকে নির্মূল করা হচ্ছে ক্যান্সার।
বিভিন্ন রঙের এই রত্নগুলি এভাবেই মহাজগতিক রশ্মিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের শরীরে প্রভাব বিস্তার করে। এই রত্নগুলো হচ্ছে- হীরা, রুবি, পান্না, মুক্তা, গোমেদ, ক্যাটসআই, পোখরাজ, প্রবাল ইত্যাদি। আশা করা যায়, রত্নগুলি কীভাবে আমাদের শরীরে কাজ করে, সে বিষয়ের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়ে গেছে।
কিন্তু এখানেই প্রশ্নের শেষ নয়। বরং বলা যেতে পারে শুরু।
কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, রত্নগুলি শরীরে প্রভাব বিস্তার করে সেটা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু, একজন মানুষের ভালো থাকা, মন্দ থাকা, তার চাকরি পাওয়া না পাওয়া, সন্তান হওয়া বা না হওয়া, ব্যবসায় লাভ অথবা লোকসান কীভাবে রত্ন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে?
যুক্তিগ্রাহ্য এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়া আছে বিজ্ঞানের পাতায়। আমরা জানি, যেমন শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক, তেমনিভাবেই শরীর নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের বিভিন্ন রোজকার কাজকর্মকে। এ কারণেই বলা হয়- ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’।
আপনার শরীর ভালো না থাকলে কাজে উৎসাহ আসবে না। মন খারাপ থাকলে আপনি পৃথিবীর এই কঠিন লড়াই সঠিকভাবে করতে পারবেন না। আর তার ফলে আপনি অন্যদের থেকে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়বেন। আর সেই পেছনে পড়ে থাকার ফলেই প্রভাব পড়বে আপনার পারিবারিক, সামাজিক এবং কর্মক্ষেত্রে।
এখানেই আপনাকে সাহায্য করবে জ্যোতিষশাস্ত্র ও এ রত্নগুলি। মনে রাখবেন, জ্যোতিষ শাস্ত্র আপনাকে আপনার ভবিষ্যত জীবন সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে পারে। ঠিক যেভাবে অভিজ্ঞ নাবিক আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে দিতে পারেন ঝড়-বৃষ্টি আসছে কিনা। আর এই রত্নগুলি ঠিক ছাতার মতো কাজ করে আপনাকে রক্ষা করবে চৈত্রের রোদ আর শ্রাবণের বৃষ্টি থেকে, সব সময়, প্রতি মুহূর্তে!
তবে এ লেখা পড়ার পরেই দয়া করে বাজার থেকে যে কোনো একটি রত্ন কিনে পরতে শুরু করে দেবেন না। রত্ন-পাথরের যথাযথ প্রয়োগ সম্পর্কে খুব অল্পসংখ্যক মানুষ জানেন। ভুল ওষুধ ব্যবহারে যেমন ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে, তেমনি প্রয়োজন ছাড়া রত্ন ব্যবহার বা ভুল ব্যবহারের কারণেও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও প্রচুর থাকে।
তাই, রত্ন ব্যবহারের আদৌ দরকার আছে কিনা সেটা জানতে বিশেষজ্ঞ বা অভিজ্ঞ জ্যোতিষের সঙ্গে পরামর্শ একান্ত জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৪