ঢাকা, শনিবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৪ জুন ২০২৫, ১৭ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

শঙ্কায় শঙ্খশিল্প

ইমরান আহমেদ, জবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:০১, এপ্রিল ২২, ২০১৪
শঙ্কায় শঙ্খশিল্প ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং বাইরে থেকে আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় সনাতন ধর্মের বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত শঙ্খশিল্প তার পুরনো ঐতিহ্য আর ধরে রাখতে পারছে না।

মাত্র দুই দশকে এই শিল্প থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৮৫ ভাগ ব্যবসায়ী ও কারিগর।

জীবিকার তাগিদে তাদের অনেকেই এখন পারিবারিক ঐতিহ্যের পেশা ছেড়ে স্বর্ণ, কাপড়, কসমেটিকসহ নানা পেশায় চলে গেছেন।
m
তবে যারা এখনো এ পেশায় টিকে আছেন, তাদের অনেকেই যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে শঙ্খশিল্পে সনাতনী পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করছেন।

পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারের অনুকূল সাহা তাদেরি একজন। পারিবারিক পেশায় তিনি আছেন দীর্ঘদিন ধরেই। শাঁখারীবাজার শঙ্খ-শিল্প কারিগর সমিতির সভাপতিও তিনি।

শাঁখারীদের দুদর্শা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বাংলানিউজকে জানান, নব্বইয়ের দশকে শাঁখারী বাজারে শাঁখারীর সংখ্যা ছিল আটশ’র উপরে। কিন্তু বর্তমানে শঙ্খের ব্যবহার কমে যাওয়ায়  শাঁখা তৈরি ও বিপণন মিলে শ’খানেক লোক আছে এ পেশায়।
 m__
এখানকার শাঁখারীদের নিপুণ হাতে তৈরি নকশাঁর শাঁখা একসময় বিশ্বজুড়ে সমাদৃত ছিল। কিন্তু এখন কেন শাঁখাশিল্প তার আগের রূপ হারাচ্ছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে অনুকূল সাহা বলেন, এখন ভারতের মেশিনের তৈরি শাঁখা ঢাকার বাজারে আমদানি হচ্ছে। তা হাতের তৈরি শাঁখার বাজার নষ্ট করে দিচ্ছে।

প্রাচীন এ শিল্পকে রক্ষার জন্য সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী। তা না হলে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি।
m__2
শাঁখারী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্মী শঙ্খ ভাণ্ডার, শঙ্খ ভাণ্ডার, বিধান শঙ্খ ভাণ্ডার, মা-পদ্মা শঙ্খ ভাণ্ডার, জয়গুরু শঙ্খ ভাণ্ডার,  লক্ষ্মীনারায়ণ শঙ্খ ভাণ্ডার, প্রিয়াংকা শঙ্খ ভাণ্ডার, মা মনসা শঙ্খ শিল্পালয়, ধর অ্যান্ড সন্স , শঙ্খ মন্দিরসহ ২০-২৫ টি শঙ্খের দোকান আছে। এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ও আছে বেশ।

শাঁখারীরা জানান, এ শঙ্খ শিল্পের  কাঁচামাল শ্রীলংকা থেকে জাহাজে করে আনা হয়। তারপর সেগুলোকে করাত দিয়ে কেটে উপযুক্ত আকার দেওয়া হয়।

নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত শাঁখের করাত দিয়েই কাঁচামাল কাটা হতো। কিন্তু এখন আধুনিক মেশিন দিয়ে শঙ্খগুলো গোল আকৃতির করা হয়। পরে কাঠের তৈরি তেপায়ার ওপর রেখে রেত দিয়ে এর ওপর শৈল্পিক নকশা করা হয়।
m__3
নকশা করা এসব শাঁখা ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সাত হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। তবে জল শঙ্খ দিয়ে তৈরি শাঁখার মান সবচেয়ে ভাল। এগুলো এক হাজার থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

শাঁখারী বাজার ছাড়াও মুন্সিগঞ্জ (বিক্রমপুর), মানিকগঞ্জ, বরিশালে বাণিজ্যিকভাবে শাঁখা তৈরি হয় ।

শঙ্খ নিয়ে সনাতনী বিশ্বাস
m__4_
পুরান ঢাকা ব্যবসায়ীরা জানান, কথিত আছে, সমুদ্রতলে পঞ্চজন নামক এক অসুরকে বধ করেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ । তখন মৃত্যুপথযাত্রী অসুরের অনুরোধে মৃত্যুর চিহ্ন হিসেবে হাড় দিয়ে শঙ্খ বানিয়ে শ্রীকৃষ্ণ তার হাতে পরিয়ে দেন।

মৃত্যুর পূর্বে পঞ্চজন অসুরের আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবে সনাতন বিবাহিত নারীদের শাঁখা পড়ার নির্দেশ দেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ । সেই থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী বিবাহিত নারীরা কৃষ্ণের আদেশ পালন করতে শাঁখা ব্যবহার শুরু করেন। একইসঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ অসুরশক্তিকে দূরে রাখতে প্রতি গৃহে সূর্যাস্তের সময় শঙ্খধ্বনি দিতেও বলেন নারীদের।
m__5_
অবশ্য আদি সভ্য যুগের শুরুর দিকে মানুষ শঙ্খের বাসন-কোসন ব্যবহার শুরু করে এমন নিদর্শন আছে ইতিহাসে। শঙ্খের উচ্চধ্বনি দিয়ে লোকসমাগম করা হতো বলে প্রচলিত আছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।