ঢাকা, রবিবার, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৮ জুন ২০২৫, ১১ জিলহজ ১৪৪৬

ফিচার

জ্যোতিষশাস্ত্রে স্বপ্নের শুভ-অশুভ

জ্যোতিষী রুবাই | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:০০, জুলাই ২৯, ২০১৪
জ্যোতিষশাস্ত্রে স্বপ্নের শুভ-অশুভ

স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা আজও চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। মানুষ কেন স্বপ্ন দেখে? স্বপ্নের সময় মস্তিষ্কের অবস্থান কি থাকে বা স্বপ্নের অর্থই বা কি? মানুষ কি স্বপ্ন সাদা-কালো রঙে দেখে নাকি স্বপ্ন থাকে রঙিন?

কেউ বলেন মস্তিষ্কের অবচেতন স্তরের কোনো ঘটনাই স্বপ্ন হয়ে ঘুমের মধ্যে ধরা দেয়।

আবার কেউ বলেন ঘুমের সময় রেন্ডম আই মুভমেন্টই (আরইম) স্বপ্নের কারণ। আবার অনেকে বলেন ‘শর্ট টার্ম মেমরি’ থেকে স্মৃতি ‘লং টার্ম মেমরি’ যাওয়ার সময় মস্তিষ্কে যে ধরনের ঘটনা ঘটে তার ফলেই ঘুমের মধ্যে আসে স্বপ্ন।

এসব প্রশ্ন নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানী, মনোবিদরা সন্ধান চালাচ্ছেন।
কিন্তু এ গবেষণার বহুযুগ আগে যখন আধুনিক ক্যালেন্ডার আবিষ্কার হয়নি সেই সময় মানুষের স্বপ্নের উপর দীর্ঘ গবেষণা চালিয়েছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একদল পণ্ডিত। তারা শুধু স্বপ্নের কারণ নয়, খুঁজে বের করেছিলেন বিভিন্ন স্বপ্নের ফলাফলও।

যদিও তাদের গবেষণার অনেকটাই সঠিক সংরক্ষণের অভাবে চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও কিছু প্রাচীন গ্রন্থ, টুকরো টুকরোভাবে পাওয়া পুঁথির শ্লোক, কিছু প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া পাণ্ডুলিপিতে তাদের গবেষণার একটা ধারণা পাওয়া যায়।

আর সেই প্রাচীন গবেষণার কিছু অংশ আজ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

অনেক সময় খারাপ স্বপ্নও শুভ ফল দেয়। আবার খুব ভালো স্বপ্নও কষ্টের বার্তাবাহক হয়ে ওঠে। প্রতিটি স্বপ্নই কোনো না-কোনো অর্থ বহন করে।

প্রাচীন ওইসব পণ্ডিতের মতে শুভ ফল প্রদানকারী স্বপ্ন কাউকে প্রকাশ করা উচিত নয়। আবার অশুভ ফল প্রদানকারী স্বপ্ন দেখার পর আবার ঘুমিয়ে পড়া উচিত। সকালে ওঠার পর ওই স্বপ্ন মনে থাকলে কাউকে বলে দেওয়া উচিত।

কিন্তু কোন ধরনের স্বপ্ন শুভ আর কোনগুলি কিছুটা অশুভ সেদিকে নজর দেওয়া যাক।

শুভ স্বপ্নের তালিকা—১
ধার্মিক পোশাকে কোনো ছোট ছেলে ২. গয়না পরিহিত স্বামী,-পুত্রবতী বা সাদা পোশাকে কোনো সুন্দর স্ত্রী ৩. ধার্মিক ব্যক্তি, রাজা,  গুরু। ৪. সাদা পদ্ম, সরোবর, রাজহাঁস ৫. সূর্য, চাঁদ, তারা, রামধনু, ৬. ফল হয়ে আছে এমন আম, নিম, নারকেল, কলাগাছ কাটতে দেখা। ৭. সাদা সাপের দংশন বা তাড়া করা, ৮. প্রাসাদ, পর্বত, বৃক্ষ, সিং, হাতি, ঘোড়া বা নৌকা দেখা বা তাতে চড়া, ৯. বীণা বাদন। ১০. দই, দুধ, পায়েস খাওয়া, ১১. নিজের শরীরে কীট লেগে থাকা, ১২. কাঁদতে থাকা। ১৩. হাতে চাল, বা সাদা ফুল দেখা, ১৪. নিজেকে সমুদ্রে দেখা। ১৫. রক্তস্নাত, শরীরে রক্ত লেগে থাকা দেখা, ১৬. নিজের অঙ্গ আঘাত প্রাপ্ত হতে দেখা। ১৭. শরীরে জোঁক লেগে থাকা দেখা। ১৮. সোনা, রুপো, সাদা মণি-রত্ন, মুক্ত, মাণিক, ভরে থাকা কলসির জল দেখা। ১৯. বাছুর-সহ গোরু, ষাঁড়, ময়ূর, টিয়া, সারস, হাঁস, চিল দেখা। ২০. উপাসনা,  আজানের শব্দ, প্রতিমা, ধর্মের সঙ্গে যুক্ত কোন প্রতীক দেখা ২১. ধর্ম কাজে রত বালিকা, ছোট বালিকা, কৃষিক্ষেত্র, দেব-স্থান দেখা। ২২. নিজের শিরশ্ছেদ দেখা। ২৩. নিজের মৃত্যু। ২৪. দর্পণ প্রাপ্তি ২৫. কার্পাস তুলা ছাড়া অন্য যে কোনও সাদা বস্তু দেখা।

অশুভ স্বপ্নের তালিকা—১
অত্যন্ত বৃদ্ধা বা কালো শরীরের নগ্ন স্ত্রীর নৃত্য দেখা ২. খোলা চুলের স্বামী হারা কোনো নারীকে দেখা ৩. মাথা এবং বুকে কোনো কালো ফল পড়তে দেখা ৪. নোংরা, বিকৃত আকার, রুক্ষ কেশের ব্যক্তিকে দেখা ৫. সধবা, পুত্রবতী, সতী স্ত্রী বা ধার্মিক কোন ব্যক্তির রোষ, ক্রুদ্ধ গুরু বা শিক্ষক, বা রেগে যাওয়া মৌলানাকে দেখাস ৬. কলসি ভাঙা দেখা ৭. কয়লা, ভস্ম বা রক্ত বর্ষা দেখা ৮. বাঁদর, কাক, কুকুর, বালি, শুয়োর, গাধা, বলদ, শকুন, ঘড়িয়াল, শিয়াল দেখা ৯. আপনার শরীরে কেউ তেল লাগাচ্ছে এমন কোনো দৃশ্য দেখা ১০. নৃত্য-সঙ্গীত যুক্ত বিবাহোত্‍‌সব দেখা ১১. নিস্তেজ বা গ্রহণের সময়কার সূর্য-চন্দ্র দেখা, ১২. উল্কাপাত, ধূমকেতু, ভূকম্প, রাষ্ট্র-বিপ্লব, ঝড় দেখা ১৩. গাছের ডাল, পর্বত শৃঙ্গ, সূর্য-চন্দ্র-মণ্ডল বা তারা ভাঙতে দেখা ১৪. হাত থেকে দর্পণ, লাঠি পড়ে ভাঙে যাবার স্বপ্ন দেখা ১৫. গলার হার বা মালা ভেঙে যাওয়া ১৬. কালো বস্ত্র পরে থাকা কোনো ব্যক্তি আপনাকে আলিঙ্গন করছে, দেখা ১৭. রুদ্র মূর্তিতে কালী প্রতিমা দেখা ১৮. ভস্ম-পুঞ্জ, হাড়ের গাদা, কেশ, নখ, কড়ি, নিভে যাওয়া কয়লা দেখা ১৯. চিতা কাঠে শায়িত দেহ, কুমোরের চাকা, কলু, আধ জ্বলা বা শুকনো কাঠ, কুশ, তূণ, চলমান ধড়, অগ্নিদগ্ধ স্থান অথবা মৃতের মস্তককে চিৎকার করা দেখা ২০. ভস্ম যুক্ত শুকনো পুকুর, পোড়া মাছ, লোহা, দাবানলে পুড়ো নিভে যাওয়া বন দেখা।

পণ্ডিতেরা স্বপ্ন দেখার কারণগুলিও ব্যাখ্যা করেছিলেন বলে জানা যায়। কিছু সেই সব গ্রন্থ আজ সময়ের গহ্বরে হারিয়ে গেছে। যা তো আর কোনো দিন খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেগুলি থাকলে আশা করা যায় আমরা স্বপ্ন দেখার কারণগুলিও জানতে পারতাম।

তবে যেটুকু জানা যায় তা থেকে বলা সম্ভব একজন বা দু’জন পণ্ডিত নন, বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে মানুষের স্বপ্নের উপর এক দল পণ্ডিত গবেষণা করে এই তথ্য গুলি মানুষের কল্যাণে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।