ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

ফিচার

মা একদিন আমাকেও চিনতে পারবেন না!

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫
মা একদিন আমাকেও চিনতে পারবেন না!

ঢাকা: কয়েক মাস ধরেই লক্ষ্য করছিলাম, মা অনেক কিছুই মনে রাখতে পারছেন না। তিনি জীবনের অনেককিছুই প্রায় ভুলে গেছেন।

অথচ মা-ই আমার আর আমার যমজ বোন জেনের সমস্ত দেখাশোনা করেছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাগুলো বললেন লরা ইটন।

লরার মায়ের নাম অ্যালিসন। একদিন বাইরে বের হওয়ার সময় তিনি গাড়ির পেছনের সিটে বসে পড়লেন। লরা অবাক হয়ে মাকে বললেন, তুমি তো গাড়ি চালাবে মা, পেছনে বসলে কেন!

অ্যালিসন হতভম্ব হয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। অবলীলায় বলে উঠলেন, কই আমিতো গাড়ি চালাতে পারি না!

অ্যালিসনের বয়স তখন প্রায় পঞ্চান্ন। অনেক বছর আগেই তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন। সবসময় তিনিই ড্রাইভ করেন। লরা বুঝলেন, নিশ্চয় কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে।

৩১ বছর বয়সী লরার বাবা-মা বেশিদিন একসঙ্গে ছিলেন না। তবে তারা দুইবোন মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন। অ্যালিসন নিজের ডেইরি ফার্মের ব্যবসা খুব ভালোভাবেই সামলাচ্ছিলেন। পাশাপাশি লরার বোন জেনের তিন সন্তানকেও দেখাশোনা করতেন তিনি।

কিন্তু গত দু’বছর ধরেই অ্যালিসন কেমন অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। কাজে উৎসাহ নেই, বাইরেও যান না তেমন একটা। সবকিছুই ধীরে ধীরে ভুলে যেতে লাগলেন।



শোনা যাক তাসমানিয়ার হোবার্টবাসী লরার মুখেই, একবার মা চাবি হারিয়ে ফেললেন। হন্যে হয়ে খুঁজেও পাননি চাবিটি। মাকে বললাম, এটা কোনো ব্যাপার নয়, পেয়ে যাবে। কিন্তু এরপর থেকে মা সবকিছুই হারাতে শুরু করলেন। কোথায় কী রাখছেন, না রাখছেন নিজেই মনে করতে পারতেন না।

একদিন মাকে বলেই বসলাম, তাকে নিয়ে আমি চিন্তিত। আমি ভেবেছিলাম, মা হয়তো কথাটি শুনে খারাপ পাবেন। কিন্তু না, কেমন জানি ভয় পেয়ে গেলেন, যোগ করেন লরা।

একসময় কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাও ভুলতে শুরু করলেন অ্যালিসন। তাকে ডাক্তার দেখানো হলো। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞরা জানালেন, তার ডিমেনশিয়া অর্থাৎ স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে।


ডিমেনশিয়া সম্পর্কে খুব একটা না জানলেও লরার মাথায় খেলছিল না, মাত্র ৫৭ বছর বয়সে কিভাবে তার মা এ রোগে আক্রান্ত। সারাক্ষণ মাথায় একটাই চিন্তা, কী করে মাকে সুস্থ করে তোলা যায়!
 
এর মধ্যে লরা ডিমেনসিয়া সম্পর্কে পড়াশোনা করতে শুরু করলেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন কনফারেন্সেও যেতে লাগলেন। জানতে পারলেন, ডিমেনসিয়া হলো মস্তিষ্কের স্মৃতিভ্রংশের একটি পর্যায়, যার ফলে ব্যক্তি নিজের দক্ষতা হারিয়ে ফেলে ও নিজেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেয়। লরার মায়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছিল।

লরা বলেন, আমরা মাকে স্বাধীনভাবে থাকতে দিচ্ছি। যাতে প্রতিটি দিনই তিনি নতুন করে শুরু করতে পারেন। মা বর্তমানে আমাদের মামা রডের সঙ্গে থাকছেন।

অ্যালিসনের এখন আর ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তবে তার দৈনন্দিন চলাচলের জন্য একটি ট্যাক্সি বরাদ্ধ রয়েছে। তিনি তার সন্তান ও বন্ধুদের সঙ্গে মাঝে মাঝে কফি খান ও আড্ডা দেন। তার বয়স এখন পড়েছে ৫৯’র কোঠায়। আজও তিনি ঘুরতে ও গাছের পরিচর্যা করতে ভালোবাসেন।

লরা দুঃখভরে বলেন, এমন দিন আসবে যখন হয়তো মা আমাকেও চিনতে পারবেন না। ভাবতে কষ্ট হয়। তবে আমাদের সেটা মেনে নিয়েই বাঁচতে হবে।

মা সবসময় বলতেন, যা করতে ভালোবাসো, তা করা কখনোই বন্ধ করো না!

আজ আমরা মাকে তাই করতে দিচ্ছি বলে জানান লরা।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।