ঢাকা: বাড়ির ছোট্ট সোনামণির এ বয়সে টুকটাক কথা বলার কথা। সব ঠিকঠাকই চলছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ হেয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের ক্লিনিক্যাল বিষয়ক পরিচালক ডায়ান পল ব্রাউন জানান, অনেক শিশু অন্যদের তুলনায় দ্রুত কথা বলতে শেখে। আর এ কথা বা শব্দ বলতে পারার নির্দিষ্ট সময়ও রয়েছে।
সদ্য কথা বলা শিশুর মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ যোগাযোগের ভাষা ব্যবহারে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত ছেলে শিশুদের তুলনায় মেয়ে শিশুরা দ্রুত কথা বলতে শেখে। কিন্তু যদি কোনো শিশু ১৮ থেকে ২০ মাস পার হওয়ার পরও দিনে ১০টির কম শব্দ বলে বা ২১ থেকে ৩০ মাস পার হওয়ার পর দিনে ৫০টিরও কম শব্দ ব্যবহার করে, তাহলে তাদের ‘লেট টকিং চিলড্রেন’ বলা যেতে পারে বলে জানান ডায়ান।
তিনি জানান, প্রি-স্কুল শিশুদের কথা না বলা নিয়ে বাবা-মাকে পোহাতে হয় অনেক ধকল। ১২ মাস বয়সী শিশুরা সাধারণত মামা, দাদা, বাবা শব্দ বলতে পারে ও আকার ইঙ্গিতে তাদের চাহিদা বোঝাতে পারে।
গবেষণা অনুযায়ী, সাধারণত তিনবছর পার হওয়ার পর শিশুরা তাদের দেওয়া নির্দেশ বুঝতে পারে। পাশাপাশি তাদেরকে বলা কথার বেশিরভাগই বুঝতে পারে ও উত্তর দিতে পারে। চার বছর হলে, তারা বিষয় বুঝে প্রশ্নও করতে পারে এবং এক ও অভিন্ন বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কথাও পরিষ্কার হতে শুরু করে।
পাঁচ বছর বয়সে শিশু গল্প বলতে পারে। ডায়ানের মতে, তবে এর মানে এই না যে, আপনার শিশু যদি দুইবছর বয়স পর্যন্ত কথা না বলে, তাহলে তার কোনো সমস্যা রয়েছে। শিশুর দেরিতে কথা বলার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে।
আগেই বলা হয়েছে, ছেলে শিশুরা মেয়েদের তুলনায় দেরিতে কথা বলে। আবার প্রিম্যাচিউর বেবির ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। কারণ, গর্ভাবস্থায় ৪০ সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই অর্থাৎ ৩৭তম সপ্তাহে প্রিম্যাচিউর বেবির জন্ম হয়। ফলে প্রিম্যাচউর বেবি গর্ভের শেষ মাসটির গুরুত্বপূর্ণ মানসিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হয়। তাই তারা দেরিতে কথা বলে।
জমজ শিশুরা অন্যদের তুলনায় দেরিতে কথা বলে। অন্যদিকে, বড়ভাই-বোন যদি বেশি কথা বলে, সেক্ষেত্রেও শিশু কম কথা বলতে পারে।
অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে নবজাতক শিশু বা জন্মের কয়েক সপ্তাহ পর যদি শিশুর কানে ইনফেকশন দেখা দেয়, সেটাও দেরিতে কথা বলার কারণ হতে পারে। আবার শিশু ভালো শুনতে না পেলে যথাসময়ে কথা বলতে পারে না।
এতসব কারণের মধ্যে কিছু বিষয় যেমন- শিশু যদি ব্যঞ্জনবর্ণ (ক, প, ব, ম, ট, ড, ন, জ) কম ব্যবহার করে, কারও সঙ্গে খেলার সময় ভাব বিনিময় বা তার ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে না পারে, শোনা শব্দ রিপিট না করে, শুধুমাত্র কারও নাম ও ক্রিয়াপদের ব্যবহার ছাড়া কোনো শব্দ না উচ্চারণ করে, বয়স অনুপাতে কম বোঝে বা শব্দের তুলনায় আকার ইঙ্গিতে ভাব প্রকাশ বেশি করে, তাহলে তাকে বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত:
আপনার শিশু কথা বলছে না, এর সঙ্গে আপনি কত দ্রুত ও আগে তার সঙ্গে কথা বলছেন এটি জড়িত। শিশু ছোট থাকতেই যারা গোসল করানো, খাওয়ানো ও খেলার সময় শিশুর সঙ্গে কথা বলেন, সেসব শিশুরা স্বভাবতই দ্রুত কথা বলে।
লেট টকিং চাইল্ডের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা উত্তর না দিলে শব্দ বা বাক্যটি পুনরায় উচ্চারণ করুন। তাকে প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করুন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুকে বেশিক্ষণ টিভির সামনে রাখলে অর্থাৎ শিশু যদি বেশি সময় ধরে টিভি দেখে, তাদেরও এ সমস্যা হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৫