ঢাকা: দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং শহরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এখানকার ক্ষুদে মানুষেরা। যারা আমাদের কাছে বামন নামে পরিচিত।
কুনমিং শহরের কোল ঘেঁষে বেড়ে ওঠা ছোট্ট এই গাঁয়ে শুধুই বামনদের বসবাস। সবার উচ্চতা ২ ফুট থেকে ৪ ফুটের বেশি নয়। এদের প্রত্যেকেরই বয়স ১৯ থেকে ৪৮। বলা যেতে পারে, ছোটখাট এক বামন সাম্রাজ্য।
সাধারণত পিটুইটারি হরমোনের সঠিক মাত্রার অভাবে ডোর্ফিজম দেখা দেয়। ডোর্ফিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পিটুইটারি বামনও বলা হয়। এক্ষেত্রে বয়সের অনুপাতে ব্যক্তির উচ্চতায় থাকে ব্যাপক তারতম্য।
‘কিংডম অব দ্য লিটল পিপল’ থিম পার্কটি গড়ে উঠেছে এসব ক্ষুদে মানুষদের গভীর ভালোবাসা ও পরিশ্রমে।
পার্ক সংশ্লিষ্টরা জানান, যারা ডোর্ফিজমে আক্রান্ত ও অন্য কোথাও কাজ করতে অপারগ, একই সঙ্গে আকৃতিগত কারণে সমালোচনার স্বীকার তাদের কর্মসংস্থানের যোগান দিচ্ছে এই পার্কটি।
২০০৯ সালে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারী চেন মিংচিং কুনমিংয়ের দিয়ান হ্রদ সংলগ্ন তার কমপ্লেক্সের অংশ হিসেবে এই পার্কটি তৈরি করেন। এর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড বাটারফ্লাই ইকোলজিক্যাল পার্ক’।
এই বামন রাজ্যে রাজা আর সেনাপতিও রয়েছে। ২০১০ সালে এখানকার বাসিন্দা ছিলো ১শ’ বামন। কুনমিংয়ের এ থিম পার্কে পর্যটক প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই বৈচিত্র্যময় এই জনগোষ্ঠী এগিয়ে আসে হাসিমুখে। সাদরে গ্রহণ করে তাদের। দিনে দু’বার পর্যটকদের গান পরিবেশন ও লাইভ পারফরম্যান্সও দেখানো হয়। সঙ্গে বক্তৃতা রাখেন ডোর্ফ গ্রামের মহামান্য রাজামশাই। তার উচ্চতা ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি!
প্রতিটি পারফরম্যান্সই উদ্বোধন করেন তিনি। চোখে সানগ্লাস ও রঙিন মাশরুম প্রিন্টের উজ্জ্বল হলুদ কোট পরে তিন চাকার মোটরসাইকেলে চড়ে তিনি পারফেরম্যান্সে নামেন। এখানে মূলত বেলি ড্যান্সই দেখানো হয়। তবে কখনও কখনও আয়োজন করা হয় হিপ হপ নাচও। আইস স্কেটিংসহ আরও রয়েছে বামনদের অভিনীত রূপকথার গল্প অবলেম্বনে করা নাটকও। এখানকার সব কলাকুশলীদের উচ্চতা ৫১ ইঞ্চির কম হওয়া আবশ্যক। উচ্চতাভেদে পারফরম্যন্সও হয় ভিন্ন।
থিম পার্কে বামনদের থাকার জন্য রয়েছে ডরমেটরি। তবে পারফরম্যান্সের সময় তারা মাশরুম আকৃতির ছোট ছোট প্রাসাদে বাস করে। জানা যায়, পার্কটি আগে বামন কলোনি ছিলো, যা পরবর্তীতে থিম পার্কে রূপান্তর করা হয়েছে।
ব্যতিক্রমধর্মী পার্কটি একটি স্বতন্ত্র ব্যবসায় উদ্যোগ যা ভালো ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে দেশের বাইরে থেকেও বামনদের এখানে নিয়ে এসেছে।
পার্কটি বামনদের বাসস্থান নিশ্চিত করাসহ মাসে বেতন দিচ্ছে ১শ’ ৪৭ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ১১ হাজার টাকা। যা এই এলাকায় বসবাসকারী অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। এসব ছাড়াও তাদের কাউন্সিলিং ও পাঠ্যক্রম বহির্ভূত বিভিন্ন কিছু শেখানো হচ্ছে। একই সঙ্গে শেখানো হচ্ছে ইংরেজি ভাষা। যাতে তারা বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে সহজেই ভাব বিনিময় পারেন।
এখানকার বামনদের অনেকেরই আগে ঘর ছিলো না। পথে বসবাস করতেন কেউ কেউ। সেই তুলনায় এখানে বেশ সুখেই রয়েছেন তারা। পার্কের মালিক চেন মিংচিং এই সাম্রাজ্যকে অারও প্রসার করার কথা ভাবছেন। তার চিন্তা অনুযায়ী, খুব শিগগিরই এক হাজার বামনের কর্মসংস্থান হবে এই থিম পার্কে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৭ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৫
এএ