ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

নিজেকে অদৃশ্য করতে চান? আসছে ‘যাদু আলখাল্লা!’

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫১ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৫
নিজেকে অদৃশ্য করতে চান? আসছে ‘যাদু আলখাল্লা!’

যারা এইচ জি ওয়েলস—এর ‘দি ইনভিজিবল ম্যান’ পড়েছেন তারা জানেন একটি পোশাক পরে কিভাবে অদৃশ্য হয়ে যেতো এর নায়ক। আর একালের হ্যারি পটার-পড়া ছেলেমেয়েদের তো আর ‘যাদু আলখাল্লা’র ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলতেই হবে না।

রূপকথার গল্পেও যাদুর পোশাকের কথা পড়েছি আমরা। তবে একাল-সেকাল সবকালেই এ ছিল নিছকই গালগল্প বা অলীক কল্পকাহিনী। কিন্তু কথা হচ্ছে, আজ যা কল্পকাহিনী কাল মানুষ তা করে তুলতে পারে বাস্তব। এরকম কতো নজির য়ে আছে! পাখির মতো ওড়ার স্বপ্নও তো আর অধরা স্বপ্ন হয়ে থাকে নি। মানুষ এখন বিমানে-রকেটে চড়ে উড়ে আর ঘুরে বেড়াচ্ছে আকাশ-মহাকাশের স্তরে স্তরে।

চেক (তৎকালীন চেকস্লোভাকিয়া) ঔপন্যাসিক ক্যারেল চাপেক-এর কথা মনে আছে?  তিনিই তার এক উপন্যাসে যন্ত্রমানব বা রোবট/রোবত (robot) এর কথা প্রথম বলেছিলেন। তখন ‘রোবট’ তো ছিল স্রেফ উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা মাত্র। আর এখন? আপনার শিশুটিও জানে রোবট কি। রোবটে রোবটে আজ দুনিয়া ছয়লাপ। তাহলে আর যাদুর পোশাকই বা অবাস্তব কল্পনার বিষয় হয়ে থাকবে কেন? বিজ্ঞানীরা সেই কল্পনাকেই বাস্তবে রূপদানের পথে অনেকখানি এগিয়ে গেছেন। মানে যাদুর পোশাক তৈরি করার পথে মোক্ষম এক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন তারা। অন্তত একদল জার্মান বিজ্ঞানী সেরকমটাই দাবি করেছেন।

কোনো বস্তুকে আমরা কখন দেখতে পাই? যখন বস্তুটির উপর আলো এসে পড়ে এবং সে আলোতে বস্তুটি প্রতিফলিত হয়। তার আগে নয়। আলোর এই প্রতিফলন যদি ঠেকানো যায় তাহলে কোনো বস্তুই আর আমাদের দৃষ্টিগ্রাহ্য হবে না।

জার্মান বিজ্ঞানীদল সেটাই করার ক্ষমতা অর্জন করেছেন। তারা এমন এক ধরনের বস্তু তৈরিতে সফলতা দেখিয়েছেন যা দৃশ্যমান যেকোনো বস্তুকে দৃষ্টির আড়াল করবে। অর্থাৎ অদৃশ্যকারী বস্তু (মেটা-ম্যাটেরিয়াল) দিয়ে তৈরি করা পোশাক গায়ে দিলে আপনাকে কেউ আর দেখতে পাবে না। অথচ আপনি ঠিকই দেখতে পাবেন সবাইকে। মানে তাদের তৈরি করা মেটা-ম্যাটেরিয়াল যে-কোনো ত্রি-মাত্রিক(ত্রি ডাইমেনশনাল) বস্তুর উপর আলো পড়া নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়ে বস্তুটিকে দৃষ্টির আড়াল করে রাখবে বা অদৃশ্য রাখবে।

জার্মানির Karlsruhe Institute of Technology-র বিজ্ঞানীরা মেটা-ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন বহনযোগ্য এক য়াদু আলখাল্লা বা অদৃশ্য পোশাক (“invisibility cloak”)। তবে এটি আকারে খুবই ছোট। একারণে বড়জোর একটি ছোট্ট গুবরেপোকার দেহকেই শুধু আড়াল করতে সক্ষম। তবে সেদিন বেশি দূরে নয় যখন পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের দেহকে মুড়িয়ে দেবার মতো বড়ো আকারের আলখাল্লা তৈরি করে ফেলবেন তারা। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র বছর দশেক। তখন হ্যারি পটারের গল্পের মতো আপনি-আমি যে কেউ এটি গায়ে দিয়ে নিজেকে অদৃশ্য করে তুলতে পারবো। তার আগে ‘‘সবুরে মেওয়া ফলে’’নামের আপ্তবাক্যটির বদলে নিজেকে শোনাতে হবে, ‘‘সবুরে আলখাল্লা ফলে’’।

বলা বাহুল্য, প্রথমে পরীক্ষামূলক যে আলখাল্লাটি কেআইটির(Karlsruhe Institute of Technology)গবেষকরা তৈরি করেছিলেন এখনকারটি সেটিরই উন্নততর রূপ। ২০১৪ সালের গ্রীষ্মেই আলখাল্লাটি তৈরি করেছেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। আগামী ১৩ মে ২০১৫ তারিখে আগেরটির চেয়ে বড় নতুন আলখাল্লাটি পরীক্ষামূলকভাবে ইউনিভার্সিটির ক্লাশরুমে প্রদর্শন করা হবে।

বস্তুকে অদৃশ্য করে দেবার এই যে মহা কেরামতি তা আজ পর্যন্ত আর কোনো দেশের বিজ্ঞানীরা দেখাতে পারেননি। জার্মান বিজ্ঞানীরা এদিকটায় সবাইকে ছাড়িয়ে! এরই মধ্যে সারা দুনিয়ার নিউজ আউটলেটগুলো রীতিমতো তত্ত্বতালাশ-খোঁজ খবর নিয়ে  জার্মান বিজ্ঞানীদের এই সাফল্যকে ‘‘হ্যারি পটারের বাস্তব রূপ’’ বলে আগাম তারিফ শুরু করে দিয়েছে। অনেকে একে বলছেন, বিজ্ঞানের রূপকথা। কেউবা বলছেন যাদুকরি উদ্ভাবন।  
 
যে বিজ্ঞানীদল যাদু-আলখাল্লাটি উদ্ভাবন করেছেন তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন যিনি, নাম তার রবার্ট শিট্‌নি (Robert Schittny)।   তার ভাষায়, তাদের উদ্ভাবিত খুদে আলখাল্লাটি হাতের চেটোয় এঁটে যাবার মতো এক চিলতে: "It is a macroscopic cloak that you can look at with [the naked eye] and hold in your hands,".

এই গবেষকদলের আরেকজনের নাম নিকোলাস স্টেংগার (Nicholas Stenger)। তিনি বলছেন তাদের উদ্ভাবিত আলখাল্লাটি দেখতে অনেকটা ছোট্ট এক গালিচার মতো (‘...looks like a tiny carpet’)। কিন্তু যে দ্রব্যটি (ম্যাটেরিয়াল) দিয়ে বস্তুকে অদৃশ্য করে দেবার মহাকর্মটি তারা করলেন তাতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা প্রকৃতিতে সহজলভ্য নয়। মানে এই মেটা-ম্যাটেরিয়ালকে তৈরি করে নিতে হয়েছে তাদের। তাহলে কি দিয়ে  এটা তৈরি করলেন তারা?  কেআইটির ভাষ্য, হাজার হাজার অতি ক্ষুদ্র ক্রিস্টাল বা স্ফটিককণা দিয়ে। এই মেটা ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তারা প্রথমে এক রত্তি স্বর্ণের টুকরোকে অদৃশ্য করে দেন তারা। এরপর মাথায় আসে বস্তুকে অদৃশ্যকারী আলখাল্লা বা পোশাক তৈরির কাজ। জয়তু বিজ্ঞানের যাদু আলখাল্লার!

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫১ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।