ঢাকা: ‘মা’ শব্দটি এক অক্ষরের। কিন্তু শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে ভেসে ওঠে আরও অনেক শব্দ।
মা হচ্ছেন রঙধনু। যার হরেক রঙ। কখনও তিনি মমতাময়ী মা, কখনও পথনির্দেশক, বিপদের আশ্রয় আর কখনওবা সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। একই সঙ্গে তার নানান রূপ ও রঙ। আর সেই রঙের আলোকছটা একেকজনের কাছে একেক রকম।
জন্মের পর থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত মায়ের প্রতি সন্তানদের অনুভূতি থাকে একইরকম। ১০ মে, মা দিবসের এ বিশেষ দিনে মাকে নিয়ে একান্ত অনুভূতি জানিয়েছেন কয়েকজন পাঠকবন্ধু। আর সেসব হৃদয়স্পর্শী অনুভূতি নিয়েই আমাদের বিশেষ আয়োজন।
মা আমার দশভুজা!
মাকে আমি ‘মা’ বলেই ডাকি। মা ডাকটির মধ্যে যে স্বর্গীয় সুখ রয়েছে, অন্য কোনো ডাকে এতটা মধুরতা নেই। এ মহিয়সী নারীর জন্যই তো পৃথিবীতে আসা। আমার দেখা নারীদের মধ্যে আমার মা সবচাইতে সুন্দরী। মাঝে মাঝে মায়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি। কখনও কখনও বলেই ফেলি- মা, তুমি এত সুন্দর কেন! মা তখন মুচকি হেসে বলে, ‘বোকা মেয়ে একটা!’
বরাবরই মনে হয়, আমার মা-ই সেরা মা। সেই সকাল থেকে শুরু করে রাত অব্দি কাজ করেই চলেছেন। আমাকে স্কুলে অানা-নেওয়া, টিফিন তৈরি, ব্যাগ গোছানো, পড়াশোনা তো রয়েছেই। সবকিছু মা-ই করেন। এত বড় হয়েছি তবুও নিজের হাতে খাইয়ে দেন মা। আমাদের বাসা দেখলেই বোঝা যায়, মা কতটা গোছানো। বাড়ির প্রতিটি জিনিস নিজের হাতে পরিপাটি করে সাজিয়েছেন তিনি। মাঝে মাঝে ভাবি, মা এত কিছু একসঙ্গে করেন কী করে! আমার মা হচ্ছেন সূর্যের মতো, শুধুই আলো ছড়ান। আর সে আলোয় আলোকিত আমি। আজ পর্যন্ত আমার আমার সব ভালো কাজের পেছনে রয়েছে মায়ের ধৈর্য্য আর কঠোর পরিশ্রম। আর তা হবে নাই বা কেন, মা যে আমার দশভুজা!
মৌমিতা পাল চৌধুরি, ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
জুতার ফিতা বাঁধার সময় আম্মুকে খুব মনে পড়ে
আমি ঢাকায় থাকি আর আম্মু থাকেন পঞ্চগড়। বছরে দু’বার দেখা হয় আম্মুর সঙ্গে। খুব মিস করি আম্মুকে। দূরে থাকি বলে ইচ্ছে হলেই আম্মুর স্পর্শ অনুভব করতে পারি না। আম্মু আমার খুব ভালো বন্ধু। আজ পর্যন্ত আমার প্রতিটি সফলতার পেছনে জড়িয়ে রয়েছে আম্মুর আদর্শ। সে হিসেবে বলা যায়, আমার আম্মু আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু, শিক্ষক, ও সহমর্মী। যখন যা দরকার হতো, সবই আম্মুর কাছে আবদার করতাম। আম্মুই আব্বুকে বলে সব ব্যবস্থা করে দিতেন। আজও মনে পড়ে, ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় জুতার ফিতা বাঁধতে পারতাম না। রোজ আম্মুই বেঁধে দিতেন। আজ যখন জুতার ফিতা বাঁধি তখন আম্মুকে খুব মনে পড়ে!
মোয়াজ্জেম হোসেন রানা, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
লন্ডনে সবই ছিল, শুধু ছিল না আমার মা
মাকে আমার জাদুকর মনে হয়। আবার আয়নার মতোও লাগে। যার মাঝে আমি আমার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। শত না বলা কথাগুলো কী করে যে পড়ে ফেলেন তিনি বলা মুশকিল। এই দুনিয়ার বুকে এক টুকরো জান্নাতি সুখ আমার মা। মা সবকিছুই গুছিয়ে করতে ভালোবাসেন। আমাদেরও সেভাবেই গড়ে তুলেছেন। পড়াশোনার জন্য ছয় বছর দেশের বাইরে ছিলাম। সাজানো-গোছানো লন্ডন নগরী। কী নেই সেখানে! সবই রয়েছে, নেই শুধু আমার মা। প্রতিটি মুহূর্তে মাকে উপলব্ধি করেছি। মায়ের গন্ধ, স্পর্শ, মায়ের হাতের রান্না বিশেষ করে ধোঁয়া ওঠা গরমা-গরম ভুনা খিচুড়ি। যখনই ভুনা খিচুড়ির কথা মনে হতো, মাকে ফোন করতাম। মা ফোনে শিখিয়ে দিতেন আর আমি রাঁধতাম। সেটা ২০০৭ সালের কথা। পড়াশোনা শেষ করে এবার দেশে ফেরার পালা। হঠাৎ করেই মাথায় বুদ্ধি চাপলো, না বলেই দেশে ফিরে মাকে সারপ্রাইজ দেবো। ঠিক তাই করলাম। সেদিনের তারিখটা আমার আজও মনে রয়েছে। ২০১৩ সালের ১৪ জানুয়ারি আমি দেশে ফিরি। তখন সন্ধ্যা নেমেছে। বাড়ির কলিংবেল টিপতেই মা দরজা খুললেন। আমাকে দেখে কিছুক্ষণের জন্য নির্বাক হয়ে গেলেন। তারপর জড়িয়ে ধরলেন আমাকে। আমার কাঁধে অনুভব করলাম মায়ের অশ্রুসিক্ত উষ্ণতা।
সজীব হক, সিনিয়র অফিসার, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক
বন্ধু মানেই মা
মা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। যখন খুব কষ্টে থাকি, ছুটে যাই মা’র কাছে। মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকি। মনে হয়, পৃথিবীর সব শান্তি যেন মা’র বুকেই লুকোনো। মায়াবতী মা আমার! মা’র কাছে কিছুই লুকোনোর নেই আমার। মুখ দেখেই সব বুঝে ফেলেন তিনি। মাঝে মাঝে ভাবি, আমার মামনি বুঝি মায়ের চেয়ে বন্ধুই বেশি! আমার আর মা’র এমন সহজ সম্পর্ক দেখে অনেক বন্ধুই অবাক হয়। মা’র প্রতিটি শব্দ, বাক্য আমাকে সাহস যোগায়। সহজ কথায়, আমার কাছে অনুপ্রেরণার আরেক নাম ‘মা’। জানি না মেয়ে হিসেবে মা’র জন্য কতটুকু করতে পেরেছি। শুধু চাই, জীবনে হাজারো ঝড়-ঝাপটা পাড়ি দিয়ে আসা এ মহিয়সী নারীর অধরা স্বপ্নগুলো পূরণ করতে। মা দিবসে মাকে একটা কথা জানাতে চাই- মা, তোমার স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে রয়েছি আমি।
স্বপ্না রানী মণ্ডল, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
আত্মবিশ্বাসী হয়ে বাঁচতে শিখেছি আম্মুর কাছ থেকেই
ছোটবেলা থেকেই ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে আম্মু আমাকে সাবলম্বী হতে শিখিয়েছেন। সামান্য বাতাসে নুয়ে পড়া লজ্জাবতী লতাটি আমি নই। আর এই শেখার শুরু স্কুলের প্রথম দিন থেকেই। স্কুলের প্রথম দিন মায়েরা হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যান। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ক্লাসে বসান। আমার বেলায় কিন্তু এমনটি হয়নি। আম্মু আমাকে প্রথম দিনই স্কুল ভ্যানে উঠিয়ে দিয়ে বললেন, তোমার স্কুল তুমি একাই যাও। মুখে বললেও রিকশা করে পেছন পেছন ঠিকই এসেছিলেন দেখতে, আমি ঠিক মতো পৌঁছেছি কিনা। কিন্তু আমি সেটা খেয়াল করিনি। আমি ভ্যানে চড়ে চারপাশ দেখতে দেখতে দিব্যি স্কুলে পৌঁছে গেলাম। ঠিকমতো প্রথম ক্লাস করলাম। ছোট্ট একটি ঘটনা। কিন্তু এতে আমার কত উপকার হয়েছে, তা আজ বুঝতে পারি। আম্মু এমনই ছোট ছোট বিষয়ের মধ্য দিয়ে আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী হয়ে বাঁচতে তিনিই শিখিয়েছেন আমাকে। আজ মা দিবসে শুধু এতটুকু বলতে চাই, ‘আম্মু তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি’!
তাসমিয়া মামুন, এক্সিকিউটিভ অফিসার, আলহাজ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড স্টকস
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৭ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৫
এসএস