ঢাকা: গণেশ-কার্তিক দুই ভাই। তাদের মা পার্বতী।
মায়ের যা ইচ্ছে! কার্তিক দেরি না করে তার ময়ূর বাহনে চড়ে বেরিয়ে পড়লেন। এদিকে, বিপদে পড়লেন স্থূলদেহী গণেশ। তার আবার বাহন হলো পুঁচকে ইঁদুর। এর ঘাড়ে চেপে বিশ্বভ্রমণে চেপে বেরোলে ফেরা নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। তাহলে কি প্রাণপ্রিয় মাকে ভালোবাসা জানানো হবে না!
শেষমেশ গণেশ অতশত না ভেবে মাতৃদেবীর চারপাশে তিনবার ঘুরে এসে প্রণাম করে বললেন, আমার পৃথিবীপ্রদক্ষিণ হয়ে গেছে। আমার দ্যুলোক-ভূলোক সবই মা তুমি! গণেশের এই অপার মাতৃপ্রেমে জয় শুধু তারই নয়, সমগ্র মা জাতিই জয়ের আসনে বসেন।
১০ মে মা দিবস। রক্তমাংসের মায়েদের নিয়ে অনেক লেখা হবে। তাই এবারের আয়োজন রঙতুলি আর ভাস্কর্য শিল্পের মা। গণেশরূপী ভুবনজয়ী শিল্পীদের ভালোবাসার আঁচড়গুলো আমরা দেখে নেব। থাকছে বাছাই করা কালজয়ী ১০টি ছবি।
হুইস্টলার’স মাদার, জেমস হুইস্টলার
মার্কিন এ চিত্র শিল্পী ১৮৭১ সালে ছবিটি আঁকেন। তেল রঙে আঁকা বিখ্যাত এ ছবিটি দৈর্ঘ্যে ৫৬.৮১ ইঞ্চি ও প্রস্থে ৬৩.৯৪ ইঞ্চি। প্যারিসের মুজি দ্য অরাসিতে প্রদর্শিত হওয়ার পর ফ্রান্স সরকার এটি কিনে নেয়। মার্কিন শিল্পীদের করা অন্যতম বিখ্যাত কাজ এটি। শিল্প রসিকরা হুইস্টলার’স মাদারকে ভিক্টোরিয়ান মোনালিসা হিসেবেও বিশেষায়িত করে থাকেন।
দ্য বাথ, মেরি ক্যাসাট
মায়ের কোলে বসা আদুল গায়ের দেবশিশু, পা দু’টি জলভরা গামলায়। মায়ের একহাত শিশুটির কোমর জড়িয়ে, অন্যহাত পায়ের তলায়। পরম মমতাময় এ স্নানের দৃশ্যটি মার্কিন শিল্পী মেরি ক্যানভাসে ধরেছিলেন ১৮৯৩ সালে। জাপানি উডব্লকে অনুপ্রাণিত হয়ে তেল রঙে আঁকা এ শিল্পকর্মটি ১৯১০ সাল থেকে আর্ট ইনস্টিটিউট অব শিকাগোতে রয়েছে।
পোট্রেট অব দ্য আর্টিস্ট মাদার, ভিনসেন্ট ভ্যান গগ
সোনালি-হলুদ অর্থাৎ সূর্যের রঙ বড় প্রিয় ছিল ভ্যান গগের। তার প্রায় সব ছবিতেই এ রঙের ব্যবহার দেখা যায়। এজন্য তার সমসাময়িক শিল্পী এবং শিল্প সমালোচকদের তীরে জর্জরিতও হয়েছেন বহুবার। কিন্তু তিনি তো সূর্যের চেয়েও বড়। তার মতো এতবড় শিল্পী যখন পোট্রেট অব দ্য আর্টিস্ট মাদার আঁকবেন, সেটি তো বিশেষ কিছু হবেই! তেল রঙে তার মায়ের অসীমতাকে তিনি ক্যানভাসে ধরার চেষ্টা করেছিলেন ১৮৮৮ সালে।
দ্য পেইন্টার’স মাদার, লুসিয়ান ফ্রয়েড
ছবিটির নামের বাংলা করলে দাঁড়ায়, চিত্রকরের মা। অর্থাৎ আর কিছু না বললেও চলবে! চারকোল আর প্যাস্টেলে প্রাণপ্রিয় সন্তানের জন্য মায়ের অহর্নিশ দুশ্চিন্তাই ফুটে উঠেছে ক্যানভাসে। জার্মানিতে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ এ শিল্পী ৩২.৪ সেমি. বাই ২৪.৮ সেমি. সাইজের ছবিটি এঁকেছিলেন ১৯৮৩ সালে।
ম্যাটারনাল অ্যাডমিরেশন, আদোলফে বুগেরু
‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’, প্রবাদটির সার্থক ইলাস্ট্রেশন। মায়ের কোলের চেয়ে নিরাপদ আশ্রয় পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। মায়ের কোল পেলে শিশুরাও হারিয়ে যায় নির্ভরতা জড়ানো মমতার উষ্ণতায়। ফরাসি ট্র্যাডিশনালিস্ট চিত্রকর আদোলফে ছবিটি আঁকেন ১৮৬৯ সালে।
দ্য পিয়েতা, মিকেলেঞ্জেলো
শিল্পকর্মে মা খুঁজবো আর তাতে মহাত্মন মিকেলেঞ্জেলোর একটি ভাস্কর্য থাকবে না, তা কি হয়! এজন্যই রেনেসাঁ যুগের অন্যতম বিখ্যাত এ শিল্পকর্মটি আমাদের সেরা দশের তালিকায়। ভাস্কর্যে মা মেরির কোলে মৃত যিশু। বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি বস্তু মায়ের কোলে সন্তানের লাশ। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভারের অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে মা মেরির চোখে-মুখে। ১৪৯৮ সালে সৃষ্টি কারারা মার্বেলের এ শিল্পকর্ম ভ্যাটিকান সিটির সেইন্ট পিটার’স বাসিলিকায় রয়েছে।
টোটে মুট্টার, এগন শিলে
১৯১০ সালে তেল ও প্যানেলে আঁকা অস্ট্রিয়ান চিত্রশিল্পীর এ ছবির মা একজন শিল্পীর স্ত্রী, যিনি গর্ভাবস্থায় বাচ্চাকে রেখেই মারা গেছেন। তার চোখে ফুটে উঠেছে সন্তানকে একা রেখে দূর দেশে পাড়ি জমানোর অসহায়ত্ব ও চাপা কান্না। ছবিটি বর্তমানে অস্ট্রিয়ার লিওপল্ড মিউজিয়ামে রয়েছে।
মাদার অ্যান্ড ডটার, এলিজাবেথ ভিগি লা বার্ন
মা ও মেয়ে, দু’জনই নারী হওয়ায় তাদের সম্পর্কটাও হয় অতি নিবিড়। আর সেটাই যেন স্বার্থকভাবে ফুটে উঠেছে ছবিতে। এলিজাবেথ ফরাসি রানি মারি আঁতোয়ার বড় প্রিয় শিল্পী ছিলেন। মাত্র ১৪ বছর বয়স থেকেই মা ও ভাইকে সাহায্য করতে ছবি আঁকা শুরু করেন। ছিলেন ফ্রান্সের অ্যাকাডেমি রয়েলের হাতে গোনা কয়েকজন নারীর একজন। ইউরোপের বহু রাজপরিবারের সদস্যদের পোট্রেট এঁকেছেন। শিল্প সমালোচকরা তার সম্পর্কে বলতেন, ‘এ ওম্যান বিফোর হার টাইম’!
ডেথ অ্যান্ড লাইফ, গুস্তাভ ক্লিমত্
অস্ট্রিয়ান এ চিত্রশিল্পীকে বলা হয় তেল রঙে নারী শরীর আঁকার যাদুকর। মা-শিশুর অনবদ্য এ ছবিটিও তেল রঙে আঁকা। এটি তিনি ১৯০৮ সালে আঁকা শুরু করে শেষ করেন ১৯১৬ সালে। বর্তমানে ছবিটি অস্ট্রিয়ার লিওপল্ড মিউজিয়ামে রয়েছে।
দ্য ইলাস্ট্রেটেড নিউজপেপার, প্লাট পাওয়েল রাইডার
মা’ই আমাদের প্রথম শিক্ষক। ভাষা থেকে শুরু করে সামাজিকীকরণ ও শিক্ষার প্রথম পাঠ আমরা পেয়ে থাকি মায়ের কাছ থেকে। ১৮৬৮ সালে তেল রঙে আঁকা মার্কিন শিল্পী রাইডারের ছবিটিতেও সেটাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে ছবিটি রয়েছে ব্রুকলিন মিউজিয়ামে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৫
এসএস