ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

পুরাণে মাতৃরূপী দেবী

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৫
পুরাণে মাতৃরূপী দেবী

ঢাকা: মাকে বলতে গেলে দেবীর সঙ্গে তুলনা করা যায়। হ্যাঁ, দেবীই তো! নয়তো এক হাতে এতকিছু সামলান কী করে।

দেবীর প্রসঙ্গ যখন এলো তখন বলা যায়, যুগে যুগে দেশ, কাল, ধর্ম ও স্থানভেদে পুরাণে স্থান পেয়েছেন মাতৃরূপী অনেক দেবী চরিত্র।

এসব দেবীর ধারণা এবং কাহিনী নিজস্ব স্থান, ধর্ম ও সৃষ্টির শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ১০ মে ছিল বিশ্ব মা দিবস। বিভিন্ন আয়োজনের ধারাবাহিকতায় এবার থাকছে গ্রিক, রোমান, মিশরীয় ও সিন্ধু সভ্যতার বিশেষ কয়েকজন মাতৃরূপী দেবীর গল্প।

গাইয়া

গ্রিকদের কাছে ধরণীমাতা বা ধরিত্রী দেবী হলেন গাইয়া। গ্রিক শব্দ গাইয়ার অর্থ হচ্ছে ভূমি বা পৃথিবী। রোমানদের কাছে তিনি টেরা নামে পরিচিত। গ্রিক পুরাণে মাতৃদেবীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনি একাধারে স্বর্গ ও সমুদ্র দেব-দেবীর মা ছিলেন। টাইটান দেবতারা স্বর্গপিতা ইউরেনাস ও গাইয়ার সন্তান। তাদের মধ্যে থিয়া, রিয়া, থেমিস, ওসেয়ানাস, হাইপেরিয়ন, ক্রোনাস, ক্রিউস ও আইপেতুস অন্যতম। কিছু দৈত্য-দানবও গাইয়ার সন্তান বলে পুরাণে উল্লেখ রয়েছে।

হেরা

হেরা স্বর্গের রানি। অর্থাৎ দেবরাজ জিউসের স্ত্রী। গ্রিক প‍ুরাণে অন্যান্য মায়ের চরিত্রগুলোর মধ্যে হেরার গল্পটি একটু ব্যতিক্রম। হেরার তিন সন্তান- এরিস, হেফাস্তুইস ও হেবে। আবার কিছু সূত্রে উল্লেখ রয়েছে, হেরা একবার একটি দৈব ফুল স্পর্শ করার পর গর্ভধারণ করেন। এসময় তার জমজ সন্তান  অ্যারেস ও এরিসের জন্ম হয়। আবার লেটুস গাছ স্পর্শ করার পর জন্ম নেন হেবে। হেফাস্তুইসের জন্মও এভাবেই হয়।

লেটো

লেটোর রোমান নাম লেটোনা। প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে জন্ম দেন জমজ সন্তান অ্যাপোলো ও আর্টেমিসকে। জিউসের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক থাকায় জিউসের স্ত্রী হেরা গর্ভবতী লেটোকে অভিশাপ দিয়ে বিতাড়িত করেন। পরবর্তীতে সমুদ্রদেবতা পসেডন ডেলোস দ্বীপের উপর বিশাল ঢেউ পাঠিয়ে ঢেকে দেন গোটা দ্বীপ। ঢেউয়ের ছায়ায় এ দ্বীপে জমজ সন্তানের জন্ম দেন লেটো। এ সন্তানদ্বয় হলেন চাঁদের দেবী আর্টেমিস ও সূর্যদেব অ্যাপোলো। আর্টেমিসের জন্ম স্বাভাবিকভাবে হলেও, অ্যাপোলোকে প্রসব করতে গিয়ে লেটো নয় দিন যন্ত্রণায় কাতর হন। তখন আর্টেমিস নিজেই মাকে সাহায্য করেন প্রসবে।

আইসিস


আইসিস প্রাচীন মিশরের মাতৃত্ব, জাদু ও উর্বরতার দেবী। মিশরীয় পুরাণ অনুযায়ী, আইসিস ছিলেন ওসাইরিসের স্ত্রী ও হোরাসের মা। আদর্শ মা, স্ত্রী, প্রকৃতি ও জাদুর দেবী হিসেবে আইসিসের পূজা করা হতো। এছাড়াও তিনি ছিলেন সরলতা, শবের রক্ষাকর্ত্রী, শিশু, আহার, পানীয় ও সবুজ ক্ষেতের দেবী। একাধারে বলা যায়, পূর্ণাঙ্গ মায়ের চরিত্র ছিল তার মধ্যে। পরবর্তীতে মিশর ছাড়িয়ে আইসিসের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রিক-রোমানেও।

হাথোর


হাথোর মিশরের প্রাচীনতম দেবী। তিনি একইসঙ্গে  মাতৃত্ব, প্রেম, সৌন্দর্য, সংগীত, ও আনন্দের দেবী। মাতৃত্বের দেবী হাথোর গর্ভবতী নারী ও ধাইয়ের রক্ষাকর্ত্রী। প্রাচীন মিশরীয় ধারণা অনুযায়ী, কোনো শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই নবজাতকের ভবিষ্যৎ জানাতে হাথোর বিছানার পাশে এসে দাঁড়ান। হাথোর মৃত্যুক্ষণ নির্ধারণক‍ারী হিসেবেও পরিচিত। মিশরের ইতিহাসে জনপ্রিয় দেবীদের মধ্যে হাথোর উল্লেখযোগ্য। তিনি উর্বরতা এবং আর্দ্রতারও দেবী।

দুর্গা

দুর্গা সনাতন ধর্মে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাতৃরূপী দেবী। তিনি দুর্গতিনাশিনী। দুর্গম অসুরকে বধ করেছিলেন বলে তার নাম দুর্গা। তিনি মহাদেব শিবের স্ত্রী এবং কার্তিক ও গণেশের মা।   দ‍ুর্গা কালীর অন্যরূপ। তার অন্যান্য নামগুলোর মধ্যে মহাশক্তি, পার্বতী, অম্বিকা, গৌরী, ভৈরবী, কালী, উমা, ললিতা, মাতৃ, মাহেশ্বরী, ভবানী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। হিন্দু পুরাণের অন্যান্য দেবীরা তার অংশ থেকেই আবির্ভূত। সাধারণত তাকে দয়াময়ী মাতৃদেবীর রূপেই দেখা হয়। তবে তার কয়েকটি ভয়ংকর রূপও রয়েছে। কাত্যায়নী, মহাগৌরী, কমলাত্মিকা, ভুবনেশ্বরী ও ললিতা হলো দুর্গার কোমলময়ী রূপ। অন্যদিকে দুর্গা, কালী, তারা, চণ্ডী, ও দশমহাবিদ্যা তার ভয়ঙ্করী রূপ।

সরস্বতী

সনাতন ধর্মে সরস্বতী বিদ্যা, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী। লক্ষ্মী ও দুর্গার সঙ্গে একযোগে ত্রিদেবী হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, তিনি ধর্মগ্রন্থ বেদ প্রসব করেন। এছাড়াও ঋকবেদ অনুযায়ী, এ দেবী সরস্বতী নদীর অভিন্ন রূপও।

লক্ষ্মী

দেবী লক্ষ্মী ধনসম্পদ, আধ্যাত্মিক সম্পদ, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী। তিনি বিষ্ণুর স্ত্রী। লক্ষ্মীকে মহালক্ষ্মীও বলা হয়। শুধু তাইই নয়, তিনি বিষ্ণুর শক্তির উৎসও। বিষ্ণু যখন রাম ও কৃষ্ণ রূপে অবতীর্ণ হন, তখন লক্ষ্মী সীতা ও রাধা রূপ ধারণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।