ঢাকা: সবসময়ই গ্রিক পুরাণের দেবতারা মানুষের আগ্রহের বিষয়। দেব-দেবীদের মায়াবী অবয়ব ও রোমাঞ্চকর গল্প সবাইকে বিমোহিত করে।
কখনও কখনও কল্পকাহিনীও হয়ে ওঠে জীবন্ত। আর তা যদি হয় গ্রিক পুরাণের পাতা থেকে উঠে আসা, তবে তো কথাই নেই!
তাদের চমকপ্রদ গল্প নিয়েই এবার বিশেষ ধারাবাহিক আয়োজন। তৃতীয় পর্বে থাকছে অ্যারেস ও এয়োসের গল্পকথা!
অ্যারেস
গ্রিক পুরাণে আলোচিত দেবতাদের মধ্যে অ্যারেস অন্যতম। রোমানদের কাছে অ্যারেস মার্স নামে পরিচিত। যুদ্ধের দেবতা অ্যারেস ছিলেন দেবরাজ জিউস ও হেরার সন্তান। অলিম্পিয়ান দেবতা হলেও ঝগড়াটে চরিত্র, ধৈর্যহীনতা ও পরাজয়ের ইতিহাসের কারণে তিনি খুব একটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি।
অ্যারেস ছিলেন অশান্তমনা। যুদ্ধের কলাকৌশলের ব্যাপারে বরাবরই অস্থির থাকতেন তিনি। কিছুটা কাঁচামাথারও ছিলেন। ফলে যুদ্ধের সময় বিনা পরিকল্পনাতেই এগুতেন। বলা হয়, অ্যাথেনার বিপরীত রূপই অ্যারেস। কেননা যুদ্ধে অ্যাথেনা ছিলেন বিশেষ পারদর্শী। তার যুদ্ধের কৌশল ও নিয়ন্ত্রণ জ্ঞান ছিল অসীম।
অ্যারেসকে তার বাবা-মা কেউই পছন্দ করতেন না। পুরাণে তাকে দেখানো হয়েছে একজন ঝগড়াটে অস্থির প্রকৃতির দেবতা হিসেবে। যুদ্ধে তার মানহানি আর অবমাননার দৃশ্যও দেখা গেছে অসংখ্যবার। হোমারের ইলিয়াড মহাকাব্য অনুযায়ী, জিউস যদি কাউকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে থাকেন, তিনি হলেন তার নিজেরই পুত্র অ্যারেস। আবার ট্রয় যুদ্ধেও তাকে দেখা গেছে পরাজিতদের দলে। তিনি ছিলেন ট্রোজানদের সমর্থক।
অ্যারেস ছিলেন আফ্রোদিতির প্রেমিক। আফ্রোদিতি সম্পর্কে অ্যারেসের বোন ছিলেন। পুরাণ মতে, সাহসী ও রূপবান হওয়ায় অ্যারেস খুব সহজেই আফ্রোদিতির মন জয় করে নেন। যদিও আফ্রোদিতি হেফাইস্তুসের সহধর্মিণী ছিলেন।
অ্যারেসের সবচেয়ে প্রচলিত ও জনপ্রিয় কাহিনী হলো হারকিউলিসের সঙ্গে যুদ্ধ। অ্যারেসের পুত্র কিকনোস ডেলফিতে ওঁৎ পেতে থাকতেন। যারা সেখানে তীর্থযাত্রায় আসতেন, তাদেরকেই তিনি আটক করতেন। ব্যাপারটিতে এক পর্যায়ে ভীষণ রেগে যান দেবতা অ্যাপোলো। তাই অ্যাপোলো হারকিউলিসকে পাঠালেন কিকনোসকে শায়েস্তা করার জন্য। হারকিউলিস কিকনোসকে হত্যা করেন। ফলে প্রতিশোধ নিতে হারকিউলিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন কিকনোসের বাবা অ্যারেস। তবে এ যুদ্ধে হেরে যান তিনি।
প্রাচীন গ্রিসে অ্যারেসের গুটিকয়েক মন্দির রয়েছে। প্রাচীন ও ধ্রুপদী শিল্পে অ্যারেসকে চিত্রায়িত করা হয়েছে নানাভাবে। যেহেতু তিনি যুদ্ধের দেবতা, তাই তার দেহ সুঠাম ও মজবুত হবে এটাই স্বাভাবিক। মাথায় হেলমেট, হাতে ঢাল ও বর্শা নিয়ে তাকে দেখা যায়। আবার বেশ কিছু ছবিতে তাকে দেখা গেছে রুদ্ধশ্বাসে ছোটা ঘোড়ার গাড়িতেও।
এয়োস
উষার দেবী এয়োস। রোমানদের কাছে তিনি অরোরা নামে পরিচিত। রোজ সকালে টাইটান এ দেবী তার গোলাপের মতো নরম হাতে খুলে দেন স্বর্গের সদর দরজা। নতুন দিনের আশার আলোর যোগান দেন ভোরের দেবী এয়োস।
রোজ ভোরে তিনি আর তার ভাই হেলিয়স পঙ্খীরাজ ঘোড়ারগাড়িতে চেপে উড়ে বেড়ান গোটা আকাশ। তার চোখের জলই মূলত শিশির বলে ধারণা করা হয়।
এয়োস ছিলেন টাইটান থিয়া ও হাইপেরিয়নের কন্যা। সূর্যদেব হেলিয়স ও চাঁদের দেবী সিলিন তার সহদর-সহদরা।
অ্যারেসসহ এয়োসের কতিপয় প্রেমিক ছিল। এয়োসের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো তার আবেগীয় শক্তি। বিভিন্ন জায়গায় তাকে দেখা যায় জাফরানী রঙের পোশাক পরিহিত অবস্থায়। মাথায় মুকুট আর আঙুলে ফুটে রয়েছে গোলাপি আভা। এয়োসের প্রতীক জাফরান গাছ।
** গ্রিক দেব-দেবীর উপাখ্যান-১
** গ্রিক দেব-দেবীর উপাখ্যান-২
বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
এসএস