ঢাকা: নীল জলরাশির মধ্যে মানুষশূন্য একটি দ্বীপ। সবুজ ও পাহাড়ি।
স্থানীয়ভাবে এটি ইলহা ডি ক্যুয়েমাডা গ্রান্ডে নামে পরিচিতি। সহজভাবে ব্রাজিলের ‘সাপের দ্বীপ’। একে বলা হয় প্রকৃতির ‘ডেডলি ওয়ান্ডার্স’। সাও পাওলো থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের একটি দ্বীপ এটি। সব ব্রাজিলিয়ান দ্বীপটিকে এক নামে চেনেন। কিন্তু সেখাতে পা ফেলার সাহস পান খুব কম সংখ্যক মানুষ। আর যারা সাপের দ্বীপে যান, তাদের খুব কম সংখ্যক মানুষ সেখান থেকে ফিরে আসেন।
বিশ্বের অধিকাংশ বিষধর সাপের বসবাস এ দ্বীপে। সেগুলোর একটির নাম গোল্ডেন ল্যান্সহেড ভাইপার। এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে এটি মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। সাপটির বিষ মানুষের ব্রেন হ্যামারেজ, কিডনি নষ্ট করা ছাড়াও মানুষের শরীরের মাংসপেশীর মারাক্তক ক্ষতি করতে পারে।
ব্রাজিলিয়ান সরকার সম্প্রতি এই দ্বীপে মানুষের যাওয়া ও বসবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ সব সাপ এই দ্বীপে মানুষের টিকে থাকা অসম্ভব করে তুলেছে। একটি লাইটহাউসই এ দ্বীপের অস্তিত্ব নির্দেশকারী একমাত্র স্থাপনা, যেটি বছরে মাত্র একবার দেখভাল করা হয়।
যখন এ দ্বীপটি প্রধান ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে যায়, তখন বিভিন্ন প্রজাতির সাপ সেখানে অনেকটা নিরাপদে আস্তানা গড়ে। প্রকৃতির শিকারিরাও এখানে নেই। কারণ গোল্ডেন ল্যান্সহেড তাদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি।
গুটিকয়েক বিজ্ঞানী রয়েছেন যারা এই দ্বীপে পা রেখেছেন। দ্বীপে পা রাখার আগে বৈধ অনুমতি ও একজন ডাক্তার সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক। কারণ কাউকে সাপে কাটলে তাকে মুহূর্তের মধ্যে এন্টিভেনাম ইনজেনশন দিতে হয়।
বিজ্ঞানী ও গবেষকরা নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন দ্বীপের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ গোল্ডেন ল্যান্সহেডের বিষ থেকে অন্য রোগের প্রতিষেধক তৈরি করতে। এর বিষ থেকে হৃদরোগ ও রক্ত জমাট বাঁধা রোগের প্রতিষেধক তৈরি সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
সাপের দ্বীপ ও মৃত্যুকূপ হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই দ্বীপ থেকে বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব আনার মতো কাজ করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে দ্বীপটি ব্রাজিল নৌবাহিনীর অধীনে রয়েছে। বিগত ১৫ বছরে প্রাকৃতিক পরিবর্তন, অবৈধ প্রাণী বিকিকিনি এবং বিভিন্ন রোগ ১৫ শতাংশ সাপ বিলুপ্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ল্যান্সহেডসহ সব ধরনের সাপ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৭ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৫
এএ