ঢাকা: মেয়েটির নাম অ্যাসলে জেনসেন। ঝলমলে বাদামী-কালো চুল।
প্রথম যখন আমার খরগোশটিকে কোলে তুলে নিলাম, তখন বুঝতে পারিনি আমার জীবন বাঁচানোর সঙ্গে সঙ্গে সে নিজে শেষ হয়ে যাচ্ছে, জানালেন অ্যাসলে।
বয়সন্ধিকালের শেষ সময় অ্যাসলের মেজর ডিপ্রেসন ধরা পড়ে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অ্যাসলের প্রায় সবসময়ই মনে হতো তার জীবন ফুরিয়ে যাচ্ছে। শেষ হয়ে যাচ্ছেন তিনি। পরিবার বা বন্ধু কেউই বুঝি ভালোবাসেন না তাকে। বলা যায়, দুঃসহ জীবনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াই দায় হয়ে পড়েছিল তার।
ধীরে ধীরে সবার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিলেন তিনি। অ্যাসলের নিজেকে মনে হতো যেন এক বাড়তি ঝামেলা। একদিন তিনি মাকে বলেই ফেললেন, আমার নিজেকে বোঝা মনে হয় মা। সব সময় অামি আমার সমস্যাগুলো নিয়ে তোমাদের সবাইকে দুশ্চিন্তার মধ্যে রাখি। অ্যাসলের মা লিন মুচকি হেসে বললেন, এতো ভাবছো কেন? আমরা তো রয়েছিই তোমার পাশে। দেখো, সব ঠিক হয়ে যাবে।
তবুও অ্যাসলের মন মানেনি। যখন কোনো বিশেষ দিনে পরিবারের সবাই এক হতো। তার নিজেকে মনে হতো একা।
|অ্যাসলে জানান, সবসময় মনে হতো সবার মাঝেও আমি একা।
একবার একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়লো তার। তিনটি খরগোশ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে অ্যাসলে ঠিক করলেন একটা খরগোশ পুষলে মন্দ হয়না। ভালো করে দেখে নিলেন বিজ্ঞাপনটি। দুটো সাদা-কালো আর একটি বাদামী খরগোশ। সঙ্গে সঙ্গে ফোনে বাদামী রঙের খরগোশটির অর্ডার দেন তিনি।
অ্যাসলে একটি কিডস প্লে সেন্টারে কাজ করতেন। সেদিন কাজ শেষ করেই যান সদ্য কেনা খরগোশটি আনতে।
আদরমাখা কণ্ঠে ২৭ বছর বয়সী এই সুন্দরী জানান, ছেলে-খরগোশটি এতোই ছোট ছিল যে অামার এক হাতের মুঠোতে বেশ এঁটে গেল ।
ব্যস, সেই থেকে তার বন্ধু বনে গেল হ্যারি নামের ছোট্ট খরগোশটি।
হ্যারি ছিল আমার সবকিছুতেই। বন্ধুদের বাড়ি থেকে শুরু করে শপিং মল, সমুদ্রস্নান এমনকি আমার কাজের জায়গাতেও হ্যারি ছিল আমার সঙ্গী। সে এতো আদূরে ছিল, যে দেখতো সেই আদর করতে ছুটে আসতো। এক নিঃশ্বাসে বললেন অ্যাসলে।
কিন্তু হ্যারির ব্যাপারে একটা ভুল ছিল অ্যাসলের। আর সেই ভুল ভাঙলো যেদিন সে তাকে প্রথম ভ্যাক্সিন দিতে নিয়ে গেলেন। পশু চিকিৎসক হাসতে হাসতে জানালেন, হ্যারি আসলে মেয়ে-খরগোশ। আর সেদিন থেকে হ্যারির নাম বদলে হয়ে গেলো হ্যারিয়েট।
অ্যাসলে জানান, হ্যারিয়েট আমার মনের অবস্থা বা রাগের বহিঃপ্রকাশ সবই বুঝতো। সারাক্ষণ আমি তার সঙ্গে কথা বলতাম । গান গেয়েও শুনিয়েছি বহুবার।
কিন্তু অ্যাসলেকে আর বেশিদিন সময় দিতে পারলো না হ্যারিয়েট। হঠাৎই অসুস্থ হয়ে যেতে লাগলো সে। হ্যারিয়েটের হৃৎপিণ্ডের গতি কমে গেলো। অ্যাসলে অনুভব করলেন, অদৃশ্যভাবে হলেও তার মধ্যে জন্ম নিয়েছে এক মা। হ্যারিয়েটের প্রতি তার অনুভূতিটা ছিল এমন যে, নিজের সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
একদিন অ্যাসলে মা লিনকে গিয়ে বললেন, এখন আমি বুঝতে পারছি মা, যখন আমি অসুস্থ হই তখন তোমার কেমন লাগে। কতো ভালোবাসো তুমি আমায়।
দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল অ্যাসলের। হ্যারিয়েট অসুস্থ। তিনি আগের চাইতে অনেক বেশি সময় দিতে শুরু করলেন হ্যারিয়েটকে। হ্যারিয়েটের যাবতীয় পরিচর্যাসহ প্রতি দু’ঘণ্টা পরপর সিরিঞ্চ দিয়ে খাওয়ানো সব নিজের হাতেই করতেন তিনি। হ্যারিয়েটকে বাঁচাতে যা কিছু করার, কিছুই বাদ রাখেননি অ্যাসলে। তবে জীবনযুদ্ধে লড়াই করে হ্যারিয়েট আর পেরে ওঠেনি। দু’বছর পর সে মারা যায়।
দুঃখভরে অ্যাসলে জানান, হ্যারিয়েট চলে যাবার পর আমার মনে হলো যেন সন্তানহারা হয়েছি আমি। হ্যারিয়েট আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে। যে আমাকে পরিবার ও প্রিয়জন সম্পর্কে ভাবতে শিখিয়েছে তাকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব।
এখান থেকেই অ্যাসলের ট্যাটুর রহস্য শুরু। প্রিয় খরগোশকে মনে রাখতে নিজ বাহুতে এঁকে নিলেন হ্যারিয়েটের ট্যাটু।
অ্যাসলে জানান, আমি কখনওই ট্যাটু পছন্দ করতাম না। কিন্তু এখন হ্যারিয়েট ট্যাটু হয়ে আমার বাহুতে, আমার সঙ্গে রয়েছে। যখনই কষ্ট হয়, তখনই তাকাই এই ট্যাটুর দিকে । শক্তি পাই আমি। মনে হয় যেন, আমার হ্যারিয়েট সর্বদাই সঙ্গ দিচ্ছে আমাকে।
বর্তমানে অ্যাসলে পুষছেন আরও দুটি দুষ্টু-মিষ্টি খরগোশ। ব্রাইক ও বেলা। অ্যাসলের মতে, যদিও ওরা কখনওই হ্যারিয়েটের শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবেনা। তবুও প্রতি মুহূর্তে ওরা আমাকে মনে করিয়ে দেয় হ্যারিয়েটের স্মৃতি।
হ্যারিয়েট সম্পর্কে অ্যাসলের ভাষ্য, ভালোবাসার শক্তি যে কতো তা কেবল তখনই বোঝা সম্ভব যখন সত্যিকারের ভালোবাসা মানুষ খুঁজে পায়। হ্যারিয়েট তার গোটা জীবনটা আমাকে দিয়ে, আমার বিষন্নতাগুলো নিজের মধ্যে নিয়ে চিরোতরে বিদায় নিয়েছে ।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৬, মে ১৯, ২০১৫
এটি