দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ডুবো শহরটি। বহুকাল ধরে কোনো খোঁজ ছিলো না বিশের দশকে নির্মিত এ উপকূলীয় শহরের।
কিন্তু দক্ষিণ লস এঞ্জেলেসের সান পেড্রোর শহরটি হঠাৎ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। একের পর এক ভূমিধস ঘটে; বাড়িগুলো ধীরে ধীরে সাগরের দিকে কাত হতে থাকে। ডুবে যেতে থাকে একে একে। অধিবাসীদের দুঃশ্চিন্তা ও অস্থিরতা বাড়তে থাকে; কি থেকে কি ঘটতে যাচ্ছে! অবশেষে ১৯২৯ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় শহরটি।
পরিত্যক্তই বা কেন হবে না। শহরের খাড়া শক্ত কূল ক্রমেই খেয়ে ফেলছিলো সাগর। শহরজুড়ে পানি বাড়ছিলো দ্রুত গতিতে। তখন দুটো বিশেষভাবে তৈরি বাংলো ছাড়া বাকি সবকিছু সাগরের পেটে চলে যায়।
নতুন করে শহরটি খুলে দেওয়া হবে কেন? প্রশ্ন তো রয়েই যায়। আসলে বিপর্যয়ের পর ডুবো শহরটি কেমন আছে, তা প্রদর্শন করতেই এটি সর্বসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাংলোগুলো সাগরের অতলে চলে গেলেও বিভিন্ন সড়ক ও রাস্তার কিনার এখনো রয়ে গেছে।
শহরের উঁচু খাড়া অংশে এখনো লোকজন জড়ো হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ, গিটারবাদক ও দেয়ালচিত্র শিল্পীরা। নান্দনিক শিল্পকর্ম তৈরিতে চারুশিল্পীরাও এখানে ভিড় জমায়। তারা খুব সহজেই লোহার বেড়া পার হয়ে তীরে বসে বিশাল সমুদ্রে নীল জলরাশি দেখে। শহরটির উঁচু তীর থেকে দৃষ্টিনন্দন সান্তা ক্যাটালিনা দ্বীপটিও দেখা যায়। কাজেই সৌন্দর্যের পূজারিরা এমন সুযোগ ছাড়বেন কেন!
পাহাড়ি এই উপকূলে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনার পর ১৯৮৭ সালে জায়গাটি লোহার বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। সচেতনতা বাড়াতে ‘ওপাশে যাবেন না’ লিখে বসানো হয় সতর্ক চিহ্ন। কিন্তু পাহাড়ের খাড়া অংশে দেয়ালচিত্র এঁকে শহরের লোহার বেড়া খুলে দেওয়ার অনুরোধ করে আসছিলো শিল্পীরা।
বেড়া দিয়ে আটকে দিলেও এখনো রোদেলা দিনগুলোতে লোকজনকে এখানে এসে জড়ো হতে দেখা যায়। আয়োজন করা হয় পিকনিকের। গ্রীষ্ণের উষ্ণ রাতগুলোতে তারা এখানে এসে সাগরের শীতল হাওয়ায় প্রাণ জুড়ায়। এসব কারণেই অন্তত দিনের বেলায় হলেও শহরটি খুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেস নিউজ জানায়, জায়গাটি সারাদিন খোলা থাকলেও লোহার বেড়া কেটে একটি ফটক তৈরি করা হবে, যেটি সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
কর্তৃপক্ষ এখন করণীয় নিয়ে দোটানায়। কারণ পাথুরে ও পাহাড়ি এই খাঁড়াপথে অতি ঔৎসুক্যের ফলে যদি কোনো হতাহত বা অঘটন ঘটে, সেই দায় কে নেবে? জায়গাটি এখনো পাথুরে ও অদ্ভুত। আর গিটারবাদক ও দেয়ালচিত্র শিল্পীদেরও খুব পছন্দের।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩৯ ঘণ্টা, মে ২৩,২০১৫
এএ