ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বাদলদিনের ফুলরানী

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৫
বাদলদিনের ফুলরানী

ঢাকা: কাঠফাটা রোদ নিয়েছে বিদায়। বর্ষার আকাশে নীলাভ ধোঁয়াটে মেঘের মেলা।

গাছের কচি পাতা আর সবুজ ঘাসে মিলছে বৃষ্টিভেজা বাতাস। মেঘ ভেঙে হঠাৎ বৃষ্টি। প্রকৃতিতে আজ প্রাণের স্পন্দন। এই তো চিরচেনা বর্ষা।

প্রকৃতিতে বর্ষাঋতুর আগমণ মানেই গাছের শাখে শাখে রঙিন ফুলের উৎসব। বাতাস মাতোয়ারা কদম, কামিনী আর বকুলের সৌরভ। বৃষ্টির সতেজ ছোঁয়ায় বাংলার প্রকৃতি সেজে ওঠে আরও নানা বাহারি ফুলের সাজে। নদী, খাল ও পুকুরে ভাসে শাপলা আর কচুরিপানা ফুলের ভেলা।


বর্ষায় সবার আগে যে ফুলের নামটি উঠে আসে তা হলো কদম। বৃষ্টি ধোয়া বাতাসে কদম ফুলের ঘ্রাণ যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্বপ্নের কোনো প্রেমরাজ্যে। হলুদ ও সাদার মিশ্রণে কদম ফুলের পাপড়িতে লেগে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা যেন হিরের দ্যুতি ছড়ায়। বাংলাদেশের বর্ষার ফুল হলেও কদম ফুলের আদি নিবাস চীন, মালয় ও ভারতের উষ্ণ অঞ্চলে।


বর্ষায় নদী, জলাধার বা বিলে ভেসে বেড়ায় শাপলার দল। বর্ষার সকালে সাদা শাপলার মায়া ছড়িয়ে পড়ে বাংলার জলে। আমাদের দেশে সাদা বা গোলারি রঙের শাপলা বেশি চোখে পড়লেও বেগুনি, লাল ও নীল রঙের শাপলাও রয়েছে। এই ফুল দিনের বেলা ফোঁটে। বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ছাড়াও লাওস, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের হ্রদ ও জলাশয়ে দেখা যায় বাহারি শাপলা।


বর্ষার জলে নদী, খাল-বিল যখন টইটুম্বুর তখন নতুন জলে শোভা পায় কচুরিপানার বেগুনিরঙা ফুল। দ্রুত বংশবৃদ্ধিকারী কচুরিপানা বর্ষাকালে আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে সহজলভ্য হলেও এদের আদি নিবাস ছিলো দক্ষিণ আমেরিকা। ১৮শ’ শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলাদেশে কচুরিপানার আগমন ঘটে।


বৃষ্টিভেজা রাজপথ। প্রশস্ত বকুল গাছের নিচে বিছানো বকুল ফুলের সারি। বৃষ্টিভেজা বাতাসের গায়ে মেখে রয়েছে সুগন্ধ। বকুল ফুল পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। তারার মতো দেখতে বকুল ফুলের মালা গেঁথে ঘরে রাখার প্রচলন অনেক আগের। দীর্ঘদিন ঘরে রাখার পরও এর ঘ্রাণ থাকে অটুট।


বর্ষাস্নাত রাতে শীতল বাতাস কামিনী ফুলের ঘ্রাণ বয়ে পৌঁছে দেয় বাড়ি বাড়ি। সারাবছর এই ফুল ফুটলেও বর্ষায় এ গাছ আরও সজীব হয়ে ওঠে। সাদা পাপড়ির ফুলটি ০.৪৭  থেকে ০.৭০ ইঞ্চি পর্যন্ত বড় হয়।


ঝুমকালতা সারা বছর দেখা গেলেও প্রকৃতিতে এদের আগমন ঘটে বর্ষাকালে। ঝড়ো বৃষ্টির পর যখন প্রকৃতি সতেজ হয়ে ওঠে তখন সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দেয় টকটকে লাল ঝুমকালতা। পৃথিবীতে প্রায় অর্ধশত প্রজাতির ঝুমকালতা রয়েছে। তবে আমাদের দেশে মূলত লাল ও বেগুনি ঝুমকালতা বেশি চোখে পড়ে। এদের বাসভূমি উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলোতে।


মোমের মতো পেলব হলুদ অলকানন্দার গা বেয়ে ঝরে পড়ছে বৃষ্টির স্বচ্ছ জল। বৃষ্টির সময় গাছ ভরে যায় সোনারঙা এই ফুলে। বৃষ্টিধোয়া বাতাসে মনের আনন্দে দুলতে থাকে তারা। যেন অনুরণন ছাড়াই বেজে চলেছে অবিরাম ঘণ্টা।


বনে যখন বর্ষার আগমন হয় তখন ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা টগর গাছে ফোঁটে দুধসাদা ফুল। সবুজ পাতার বুকে জানান দেয় নিজের শুভ্রতার বাণী। বৃষ্টিস্নাত টগর বর্ষা বাতাসে ছড়িয়ে দেয় আপন সুগন্ধ। টগর ফুলের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। সারা বিশ্বে প্রায় ৪০ প্রজাতির টগর রয়েছে। তবে আমাদের দেশে মোট চার প্রজাতির টগর ফুল দেখা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।