ঢাকা: পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ মেলে প্রশস্ত বৃক্ষের মতো ছায়াদানকারী বাবার বুকে। শত আবদার আর নির্মল শান্তির এ গন্তব্যটি কারোরই অজানা নয়।
শত রাগ, গাম্ভীর্য আর অনুশাসনের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কোমল স্নেহময় রূপ বাবা। তিনিই তো সন্তানদের শেখান কীভাবে পাড়ি দিতে হয় জীবনের অলিগলি আর আঁকাবাঁকা বন্ধুর পথ। তারপরও হাজারো জড়তা ভেঙে হয়তো বাবাকে বলে ওঠা হয় না, ‘বাবা, তোমায় খুব ভালোবাসি’।
প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। সে হিসেবে এবার বাবা দিবস পড়েছে ২১ জুন। এ বিশেষ দিনে বাবাকে নিয়ে অম্লমধুর কিছু অনুভূতি শব্দে সাজিয়ে পাঠিয়েছেন আমাদের কয়েকজন পাঠকবন্ধু।
বাবাকে জানানো তাদের কিছু কথা নিয়েই এবারের বিশেষ আয়োজন।
বাবা, তুমিই আমার গল্পের হিরো!
বাবার চেয়ে বড় হিরো আর কে রয়েছেন! হলিউড-বলিউড সব হিরো বাবার সামনে ফেল। বাবার একনিষ্ঠ ভক্ত হলেও, তাকে যে একেবারেই ভয় পাই না সেটা বললে ভুল হবে। একটু গড়বড় করলেই নিজের মনেই ভয় হয়, যদি বাবা জানতে পারে তাহলেই ব্যস! ঘাম ছুটতে শুরু করে আমার।
বাবা আমাদের অনেক কঠিন অনুশাসনের মধ্য দিয়ে বড় করেছেন। প্রতিটি কাজই নিয়মমাফিক আর ঘড়ির কাঁটা মেনে। কিন্তু এটি ঠিক, বাবা যতো গর্জেন ততো বর্ষেন না। তিনি কখনওই ঠিকঠাক বকা দিতে পারেন না। তবে হ্যাঁ, রাগ করে বাবা রক্তচক্ষু দিয়ে তাকালেই আমার অন্তর ছিঁড়ে কুটিকুটি হয়ে যায়। কিন্তু যখনই বাবা হাসেন, তখনই মনে হয় যেন স্বস্তির বৃষ্টি নামলো ভুবন জুড়ে। বাবা, তুমিই তো আমার সারাদিন, ঘড়ির কাঁটা ঘোরানো সময়। তুমিই যে আমার গল্পের সেরা হিরো!
মনিষা চৌধুরী, ভিকারুন্নেসা কলেজ।
সারারাত আব্বুর বিছানার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম
এই তো কিছুদিন আগের ঘটনা। আম্মুর ফোন পেয়ে আমার হাঁসফাঁস অবস্থা। আব্বুর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, হাসপাতালে রয়েছেন তিনি। তাড়াহুড়ো করে বন্ধুদের নিয়ে রওনা হলাম বরিশাল। সেদিনের কথা ভুলবো না কোনোদিন। সারারাত হাসপাতালে আব্বুর বিছানার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। মাথায় কেবলই গুমোট এক যন্ত্রণা কাজ করছিল।
যাইহোক, ধীরে ধীরে আব্বু সুস্থ হয়ে উঠলেন। আমি ফের স্বস্তিতে ঢাকা ফিরে এলাম। জীবনে কখনও হার মানতে শিখিনি। আব্বু বলেন, জীবন মানেই যুদ্ধ। আর এ যুদ্ধে হেরে যাওয়া কাপুরুষের সমান। আমি মোটেও কাপুরুষ হতে চাই না।
পড়াশোনার সুবাদে আমি ঢাকায় থাকি আর আব্বু বরিশাল থাকেন। খুব মিস করি আব্বুকে। ছুটিতে বাড়ি যাই। তখন আব্বু রোজ ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। মনে হয়, রোজ আব্বুর সঙ্গে থাকতে পারলে খুব ভালো হতো। জানো আব্বু, তোমাকে আমি কত্তো ভালোবাসি!
মাহমুদুল হাসান পিয়াস, মিরপুর ইউনিভার্সিটি কলেজ।
আব্বু ডিএসএলআর কেনার টাকা পাঠাতেই আনন্দে ভরে উঠলো মন!
লেখালেখি কখনও করিনি। আজ প্রথমবারের মতো আব্বুর জন্য লিখতে বসেছি। আব্বু দেশের বাইরে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই খুব মিস করি তাকে। বিশেষত, আব্বু অনেক ধার্মিক ও নিয়মতান্ত্রিক। ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত সব কাজই আব্বুর মতো নিয়ম মেনে করতে চেষ্টা করেছি। দায়িত্বশীল হয়ে বেড়ে উঠতে আব্বুই শিখিয়েছেন। আমি ছবি তুলতে খুব ভালোবাসি। একটি ডিএসএলআর ক্যামেরার শখ আমার বহুদিনের। গত বছরের ঘটনা। আব্বু হঠাতই টাকা পাঠালেন ক্যামেরা কেনার জন্য। চমকের সঙ্গে সঙ্গে খুশিতে ভরে উঠলো মন। ওই মুহূর্তটা যে কী অানন্দের ছিল, বলে বোঝানোর মতো নয়!
রিজভী আহমেদ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
বাবার মতো নিখুঁত পরিপাটি মানুষ খুব কমই দেখেছি
আমার বাবাকে নিয়ে যদি লেখা শুরু করি, তাহলে কোথা থেকে যে শুরু করে কোথায় গিয়ে শেষ করবো তা বুঝে ওঠাই মুশকিল। ভীষণ মজার মানুষ বাবা। এক কথায়, বাবা অলরাউন্ডার। বলা যায়, দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার, ভালো রাঁধুনি, মেকানিক, টুকিটাকি ডাক্তারিও জানেন বৈকি! এতো নিখুঁত আর পরিপাটি মানুষ জীবনে কমই দেখেছি।
বাবার হাতে খেতে চাইলে আজও বাবা খাইয়ে দেন। যেহেতু বাবার জন্মদিনের তারিখ আমার জানা নেই, তাই চেষ্টা করি বাবা দিবসে তার জন্য বিশেষ কিছু করতে। নতুন নতুন খাবার খেতে বাবা খুবই ভালোবাসেন। নবাবি কায়দায় রান্নার প্রশংসা করতেও পারদর্শী তিনি! প্রতিবারই বাবা দিবসে আমাদের পরিবারে বিশেষ কিছু না কিছু আয়োজন থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। এ দিনটিতে চাই বাবাকে আনন্দে আনন্দে ভরিয়ে দিতে!
শিরীন মনি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০২১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
এসএস/