ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বাবা দিবস যেভাবে এলো

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
বাবা দিবস যেভাবে এলো

ঢাকা: প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ববাসী বাবা দিবস হিসেবে পালন করে। বাবার সঙ্গে স‍ুন্দর সময় কাটানোসহ নানা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয় দিনটি।

কিন্তু কোথা থেকে বা কবে থেকে বাবা দিবস পালনের সূচনা, তা আমাদের অনেকেরই অজানা।

হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর জুনের ২১ তারিখ পড়েছে বাবা দিবস। বিশ্বের কয়েকটি দেশ ভিন্ন মাসের কয়েকটি ভিন্ন তারিখে বাবা দিবস পালন করলেও, একটি বিশাল অংশ যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চিলি, কলাম্বিয়া, কোস্টারিকা, কিউবা, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, গ্রিস, হংকং, ভারত, আয়ারল্যান্ড, জ্যামাইকা, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভেনিজুয়েলা ও জিম্বাবুয়েসহ আরও কিছু দেশে জুনের তৃতীয় রোববার এ বিশেষ দিনটি পালিত হয়।

গ্রেস গোল্ডেন ক্লেটন প্রথম ব্যক্তি যিনি বাবা দিবসের প্রচলন শুরু করেন। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টবাসী গ্রেস প্রথম বাবা দিবস পালনের  জন্য আবেদন করেছিলেন।

১৯০৭ সালের ডিসেম্বর। ভার্জিনিয়ার মোনোনগাহ্‌য় ভয়াবহ খনি বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৩শ’ ৬০ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন সন্তানের বাবা। ফলে প্রায় এক হাজার শিশু পিতৃহারা হয়ে পড়ে। এ বিষয়টি গ্রেস গোল্ডেন ক্লেটনকে পীড়া দেয়।

তিনি স্থানীয় মেথোডিস্ট গির্জার যাজককে শহীদ বাবাদের সম্মানে ১৯০৮ সালের ০৫ জুলাই রোববার বাবা দিবস হিসেবে উৎসর্গ করার অনুরোধ করেন। ০৫ জুলাইকে বাবা দিবস করার দাবি জানানোর কারণ, এটি ছিল গ্রেসের মৃত বাবার জন্মদিন।

এরপর ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রপক্ষ একটি ঐতিহাসিক ফলক স্থাপনের মাধ্যমে ফেয়ারমন্টকে বাবা দিবসের জন্মস্থান হিসেবে ঘোষনা দেয়। এরপর থেকে প্রতি বাবা দিবসে গির্জায় বাবা দিবসের মাহাত্ম বর্ণনা করা হতো।

বাবা দিবসকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে রয়েছে আরও এক নারীর অগ্রণী ভূমিকা। ১৯০৯ সালের আগে ওয়াশিংটনে বাবা দিবস বলে কোনো বিশেষ দিন ছিল না। সেসময় স্থানীয় গির্জায় সোনোরা স্মার্ট নামে ওয়াশিংটনবাসী এক নারী মা দিবস পালনের কথা শোনেন। মা দিবস পালনের রীতি রয়েছে কিন্তু বাবা দিবস পালনের রীতি নেই জেনে তিনি ভীষণ অবাক হন। তাই বাবা দিবস পালনের আবেদন জানিয়ে তিনি স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সে বছরের ০৫ জুন নিজ বাবার জন্মদিনের দিন বাবা দিবস ধার্য করার অনুমতি চান। তবে হাতে কম সময় থাকায় ওই বছরের ১৯ জুন প্রথম এ অঙ্গরাজ্যে বাবা দিবস পালন করা হয়।

সোনোরা তার বাবা উইলিয়াম স্মার্টকে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাতেই এ দিনের সূচনা করেন। গৃহযুদ্ধ চলকালীন সময় উইলিয়াম স্মার্ট ছিলেন একজন সৈনিক। ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় তার স্ত্রী মারা যান।

এরপর শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও ছয় সন্তানকে একাই লালন-পালন করেন উইলিয়াম।

পরবর্তীতে, ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন করার একটি বিল তুলে ধরা হয়। ১৯১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বিলটি অনুমোদন করেন ও তার সাতবছর পর ১৯২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০তম প্রেসিডেন্ট কেলভিন ক্যুলিজ বাবা দিবসকে জাতীয় দিবসের মর্যাদা দেন।

সবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন রাষ্ট্রীয়ভাবে জুনের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস বলে ঘোষণা দেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বের সব বাবাদের সম্মানে পালিত হয়ে আসছে বাবা দিবস।

বাবা দিবসে বিশ্বের সব বাবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।