ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ মে ২০২৫, ২৪ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

নড়াইলে শেষ হল মাসব্যাপী নিশিনাথ তলার বৈশাখী মেলা

শরিফুল ইসলাম, জেলাপ্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৪৫, মে ১৫, ২০১১
নড়াইলে শেষ হল মাসব্যাপী নিশিনাথ তলার বৈশাখী মেলা

নড়াইলে শেষ হল মাসব্যাপী নিশিনাথ তলার বৈশাখী মেলা। অধিবাস, পূজা, নামকির্ত্তন, লীলাকির্ত্তন, মহানামযজ্ঞর মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী চলে প্রতিবছর এ মেলা।

শ্রী শ্রী নিশিনাথ তলা উদযাপন কমিটির আয়োজনে পুরো বৈশাখ মাসের প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে মেলা বসে।

বাঙালি মানেই উৎসব আর অনুষ্ঠান। বাঙালি সংস্কৃতির একটি অন্যতম উপাদান মেলা। নড়াইলবাসীর কাছে এই উৎসব মুখরতার অন্যতম একটি বড় অংশ হচ্ছে বৈশাখ মাস। আর বৈশাখ মানে নড়াইলবাসীর কাছে এক অন্যরকম একটি মাস। তেমনি একটি মেলার নাম নড়াইলের ‘নিশিনাথ’ তলার বৈশাখী মেলা। এ মেলা চলে আসছে প্রায় চার’শত বছরের অধিক সময় ধরে। দেশের মেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন মেলা নিশিনাথ তলার বৈশাখী মেলা। এ মেলা ধর্মীয় বিষয়ভিত্তিক হলেও ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে প্রতিবছর এখানে। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এ মেলার অসম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট ক্ষুণ্ন হয়নি কখনও। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিশিনাথ ঠাকুরের ভক্তরা আসেন তাকে স্মরণ করার জন্য।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নড়াইল শহর থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে একটি বটগাছ (বাবা নিশিনাথের বটগাছ) কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই মেলা। এই বটতলায় পূজারীদের ভীড়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই মেলার নামকরন হয়েছে ‘নিশিনাথ তলার বৈশাখী মেলা’। তবে এই বটগাছ ও নিশিনাথের মন্দিরে পূজা অর্চনা শুরু হয় তারও অনেক আগে থেকে। এই মেলার সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, ‘নিশিনাথ’ সনাতন ধর্মের একজন প্রতিষ্ঠিত দেবতা। নিশিনাথের আরেক নাম শিব। এই দেবতার পূজা ও ধ্যানের কথা পুরাতন সনাতন শাস্ত্র গ্রন্থে পাওয়া যায়। জনশ্রুতি রয়েছে, অনেকেই এই দেবতা (বাবা নিশিনাথ) কে গভীর রাতে ঐ গাছ থেকে নেমে খড়ম পায়ে হাঁটতে হাঁটতে পার্শ্ববর্তী চিত্রা নদীর বাঁধা ঘাটে স্নান করতে দেখেছেন। শুরুতে নিশিনাথতলার এই স্থানটি ইংরেজ আমলের জমিদারদের দখলে ছিল। এই স্থানের অলৌকিকত্ব অনুভব করে জমিদাররা প্রায় দু’শতাধিক বছর আগে নিশিনাথ ঠাকুরের নামে নড়াইল-নোয়াপাড়া সড়কের পাশে ওই বটগাছ তলায় একটি মন্দির তৈরি করে দেন। বিশাল এই বটগাছে দেবতা ‘নিশিনাথ ঠাকুর’ বসবাস করেন বলে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আজও বিশ্বাস করেন।

সনাতন ধর্মাবলম্বী পূজারীরা নিজের মনবাসনা পূর্ণ করার জন্য নারী-পুরুষ সকলেই জল, দুধ, তেল, সিদুর দিয়ে পূজা করে থাকেন। অনেকে মনবাসনা পূরনের লক্ষে গাছের ডালে ছোট বড় ইট বেঁধে রেখে  যায়। মনবাসনা পূর্ণ হলে তারা ফিরে এসে সে ইট খুলে দেবতা নিশিনাথ ঠাকুরের নামে মন্দিরে সাধ্যমত পূজা দিয়ে যান। উৎসব মুখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে বৈশাখ মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় নিশিনাথ তলার মাসব্যাপী বৈশাখী মেলা।

বাংলাদেশ সময় ২০২০, মে ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।