ভার্চুয়াল জগতে অনেক কিছুই ভাইরাল। তবে এখানে প্রায়শই একটি বিষয়ের অভাব দেখা যায় তা হচ্ছে ভার্চু।
ফেসবুকে অসংখ্য প্রোফাইল পিক এখন সেজেছে সমকামিতার সাজে। যারা করেছেন তারা যে সবাই বুঝে করেননি তাতে সন্দেহ নেই। কারণ এই রংধনুর পতাকা তাদেরই প্রতীক যারা সমলিঙ্গে বিয়ে করেন।
রঙধনুর পতাকা সমকামীদের গর্বের পতাকা। এলজিবিটি- অর্থাৎ লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডারদের গর্বের পতাকা। এলজিবিটি কমিউনিটির বৈচিত্রময়তাই এই নানা রঙের সমাহারে প্রকাশ পায়। সমকামীদের অধিকারের প্রশ্নেও উত্তোলিত হয় এই পতাকা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাংশের এর উৎপত্তি হলেও এখন তা বিশ্বময় প্রচলিত।
আকাশে যে রঙধনু দেখে আমরা আপ্লুত হই এলজিবিটির পতাকা কিন্তু সেই রঙধনু নয়। বেনীআসহকলা নামে সাত রঙের সমাহার যে রঙধনু তা কেবল আকাশেই শোভা পায়। কিন্তু সমকামীদের রঙধনু পতাকার মূল অমিল হচ্ছে এতে সাতটি নয় আটটি রঙ। আর বলা বাহুল্য অষ্টম রঙটি গোলাপী। কাম বা যৌনতারই রঙ এই গোলাপী। যা নেই সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় সৃষ্ট যে রঙধনুতে। আর সমকামীদের রঙধনুতে নেই আকাশী রঙটিও। সেটিও প্রতিস্থাপিত আকর্ষক বা যাদুবিদ্যার প্রতীক ‘ফিরোজা’ দিয়ে।
তাহলে যারা সমকামীদের পতাকায় নিজেকে রাঙিয়ে রঙধনুর প্রতি অধিকারের কথা বলছেন তারা ভুল করছেন।
সমকামীদের পতাকার আট রঙের প্রথমটি বেগুনী যা চেতনার প্রতীক। পরেরটি নীল যা পবিত্রতা ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক, এরপর ফিরোজা যা আকর্ষক, পরের রঙটি সবুজ যা প্রকৃতিকেই নির্দেশ করে, হলুদের ব্যবহার করে সূর্যালোকের প্রতীক তুলে ধরা হয়েছে, কমলা নিরাময় বা উপশমকে নির্দেশ করে। লাল তুলে ধরে জীবনকে আর কড়া গোলাপী কাম ও যৌনতার প্রতীক হয়ে পতাকায় স্থান পায়।
আরও একটি গভীর পার্থক্য রঙধনু ধনুকের মতো বাঁকা বলেই ওই নাম পেয়েছে কিন্তু সমকামীদের পতাকা রঙধনু নাম নিলেও প্রতিটি রঙের প্রলেপ আড়াআড়িভাবে বিস্তৃত।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে যারা ফেসবুকে নিজেদের ছবি রাঙিয়েছেন সমকামিতার রঙে তারা আসলে কি নিজেদের সমকামী বলে ঘোষণা দিচ্ছেন?
কোথা থেকে ছড়ালো এই রঙধনু। তার গোড়ার কথা হচ্ছে- গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গোটা আমেরিকাতেই সমলিঙ্গে বিয়ের অধিকার নিশ্চিত করে রায় দেয়। এরপর সমকামী অধিকারের প্রতি সম্মতি জানিয়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইটহাউসে বিশেষ আলো ফেলে সমকামি পতাকার রঙে সাজানো হয়। আর সমকামীরা তাদের নিজেদের ছবি সমকামী পতাকার রঙের বাহারে সাজিয়ে ফেসবুক টুইটারে পোস্ট দিতে থাকে। তারও আগে গত ২৫ জুন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবাগ নিজেকে এই রঙে রাঙিয়ে প্রোফাইল ছবি প্রকাশ করেন আর বিশেষ সফটওয়ার দিয়ে তাতে সবাইকে সমকামীদের রঙধনুর সাজে সাজার আহবান জানান।
সেখান থেকেই ভাইরাল হয়ে ওঠে এই ছবি। পৃথিবীর অপর প্রান্তে তা ছড়িয়ে পড়া মূহূর্তের অপেক্ষা মাত্র। আর যায় কোথায়? বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যেও শুরু হয় নিজেদের সমকামের রঙে সাজানোর প্রবণতা।
কেউ কেউ হয়তো বুঝে শুনে সমকামীদের সঙ্গে সম-উচ্ছ্বাস দেখাতেই নিজেদের রাঙিয়েছেন। আর এক দল রাঙিয়েছেন স্রেফ না বুঝে।
আর কেউ রঙধনুতে তারও অধিকার আছে, স্রেফ সমকামীদের একারই নয়, এই বলে নিজেকে রাঙিয়েছেন।
কিন্তু মনে রাখতে হবে সমকামীদের রঙধনু আর আকাশে মেঘ ও সূর্যের খেলায় সৃষ্ট রঙধনু এক নয়। তবে যারা সমকামীদের সমর্থন জানিয়ে নিজেদের রাঙিয়েছেন তারা স্রেফ হুজুগেই মেতেছেন আর কিছু নয়।
বাংলাদেশ সময় ২০০৭ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৫
এমএমকে