রেমা-কালেঙ্গা থেকে ফিরে: ফুরফুরে সকাল। লতা-পাতার ফাঁক গলে উঁকি দিচ্ছে রোদ।
বাংলোয় চার্জ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। চার্জার পোর্টই নেই। ল্যাপটপে ছিল খানিকটা, তা দিয়ে হয়ে যাবে এই ভরসায় লিখতে বসা। লেখা প্রায় শেষের দিকে, ঠিক এই মুহূর্তে বিধিবাম। চার্জ এক পার্সেন্টে এসে ঠেকেছে!
অগত্যা পিঠে ঝুলিয়ে দৌড়। পরনে ঘরের পোশাক, খালি পা। বাংলো থেকে রেঞ্জ অফিসের দূরত্ব হেঁটে গেলে মিনিট দশেক। ওখানেই আপাতত সব মুশকিলে আসান।
রেঞ্জ অফিস ঢুকেই নাক বরাবর রুমটি দাপ্তরিক কাজের। এক কোনায় শেলফের মাঝে রাখা আইপিএস, নিচে বিশাল বপু দুই ব্যাটারি। শেলফের উপরের তাকে পাতা হলো ল্যাপটপ। আইপিএস লাগিয়ে একদিকে চার্জ, একদিকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লেখা চলছে। এভাবে সোয়া ঘণ্টার প্রয়াসে অফিসে লেখা পাঠিয়ে তবে শান্তি!
হয়তো ভাবছেন, আইফোন সিক্সের যুগে কোথায় গিয়ে পড়লাম! না, যুগ-আইফোন সবই ঠিক আছে, ছিলাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রেম-কালেঙ্গায়। এ অভয়ারণ্যসহ পাশ্ববর্তী অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পিডিবি (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) বা পল্লী বিদ্যুৎ নেই। তবে বিদ্যুতের আলোতেই আলোকিত সমগ্র এলাকা। আর এ বিদ্যুৎ হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ।
রেমা-কালেঙ্গার পথে দু’ধারের বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটের চালে বা ছাদে চোখ পড়বে ছোট-বড় সোলার প্যানেল। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ থেকে ৫০ ওয়াটের সোলার প্যানেলের সংখ্যাই বেশি। যা দিয়ে ২টি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব থেকে শুরু করে ৫টি বাল্ব, টেলিভিশন ও মোবাইল ফোনের ব্যাটারি চার্জ দেওয়া যায়।
বনের প্রবেশমুখেই রেঞ্জ অফিস। এটিও সৌরবিদ্যুতে চলে। সহকারী রেঞ্জার শামসুল আলম মজুমদার জানান, অফিসের সোলার প্যানেলটি দিয়ে ৪টি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব, ১টি টেলিভিশন, ১টি কম্পিউটার ও কয়েকটি মোবাইল ফোনের ব্যাটারি চার্জ দেওয়া যায়।
লেখা শুরু হয়েছিল বাংলো দিয়ে। এটির বিদ্যুত সাশ্রয়ী বাল্বগুলোও সৌরবিদ্যুতের আলোয় জ্বলে।
এছাড়া রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য সংলগ্ন কালেঙ্গা গ্রাম, মন্নাননগর, মুঙ্গালিয়া বাড়ি, ছনবাড়ি, ডেবনাবাড়ি, বড়জুষ, হিমেলিয়া, আদর্শগ্রাম, নালক্ষেত, গুন্ডম বাড়ি, হিমেলিয়া বাজার, কালেঙ্গা শিবিরসহ চারপাশের এলাকাজুড়ে প্রায় সব বাড়িতেই সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে।
এসব সোলার প্যানেলের বেশিরভাগই ‘গ্রামীণ শক্তি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকভেদে নগদ ও কিস্তি, দুইভাবে সোলার প্যানেল সরবরাহ করে থাকে। ফলে কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও সৌরবিদ্যুৎ পেতে গ্রাহকদের আর্থিকভাবে তেমন বেগ পেতে হয় না।
কালেঙ্গা গ্রামের নিরালা হাটির তাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তিনি ২০ ওয়াটের সোলার প্যানেলটি তিন বছরের কিস্তিতে নিয়েছেন। প্রতি মাসে চারশো এক টাকা কিস্তি দিতে হয়।
সহজলভ্য ও কিস্তির সুবিধা পাওয়ায় এলাকার প্রায় প্রত্যেকেই সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কথা হয় সৌর প্যানেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীণ শক্তি’র চুনারুঘাট রিজিওনাল ম্যানেজার আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে।
আশরাফুল বাংলানিউজকে জানান, কালেঙ্গা ও চারপাশের গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ নেই। তাই এলাকাবাসী তাদের সরবরাহ করা সোলার প্যানেলই ব্যবহার করেন। নগদ ও কিস্তি, দুইভাবে তারা সোলার প্যানেল সরবরাহ করে থাকেন। ১০ ওয়াট থেকে শুরু করে ৮৫ ওয়াট পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়। যা দিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ২টি বাল্ব থেকে শুরু করে ৭টি বাল্ব, ব্যাটারি চার্জ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়।
কিস্তির বিষয়টিও বুঝিয়ে বললেন, কিস্তির ক্ষেত্রে এক বছর, দুই বছর ও তিন বছর মেয়াদি ব্যবস্থা রয়েছে। এক্ষেত্রে এক বছরের জন্য প্যানেলের মোট দামের শতকরা ২৫ শতাংশ, দুই বছরের জন্য ২০ শতাংশ ও তিন বছরের জন্য ১৫ শতাংশ টাকা অগ্রিম দিতে হয়। বাকি টাকা পরিশোধ করতে হয় প্রতি মাসে কিস্তিতে।
আশরাফুল আরও জানান, কালেঙ্গা এলাকায় তাদের প্রায় দুই হাজার গ্রাহকসহ চুনারুঘাট উপজেলায় ৪টি কার্যালয়ের অধীনে প্রায় ১০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৫
এসএস/টিআই
** যে রাস্তায় অটোরিকশা হয়ে যায় সিন্দাবাদের জাহাজ!
** পাখির ডাকে রাত, পাখির ডাকে দিন
** বন্যপ্রাণীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অভয়াশ্রম
** পাহাড়ের ভাঁজে অরণ্যের দিনরাত্রি