ঢাকা: বিজ্ঞানীরা ভয়ঙ্কর সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন। তারা বলছেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে শুরু হবে ‘মিনি বরফ যুগ’।
এ সময় সূর্য কিছুটা অন্ধকারে ঢেকে যাবে। এতে করেই পৃথিবীতে শুরু হবে বরফ যুগ।
সূর্যের গবেষণা বিষয়ক একটি মডেল বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ সৌরচক্রের কর্মকাণ্ড ৬০ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমির সভায় অধ্যাপক ভ্যালেন্টিনা ও তার গবেষক দল এ তথ্য তুলে ধরেন।
তারা বলছেন, অতীতেও এ রকম ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ১৬৪৫ সালেও একইভাবে সূর্যের সৌরচক্রের কার্যক্রম হ্রাস পেয়েছিল এবং তা ১৭১৫ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল। এ সময় পৃথিবীতে বরফ যুগের কাল ছিল। ১৮৪৩ সালে সর্বপ্রথম বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেন, ১০ থেকে ১২ বছরের একটি চক্রের মধ্যে সূর্যে অস্থিরতা তৈরি হয়।
বিজ্ঞানবিষয়ক অনলাইন সংস্থা ফিজিকস.ওআরজি ও যুক্তরাজ্যের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট শনিবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
গবেষণারা জানাচ্ছেন, ১৭২ বছর ধরে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ চালানো হচ্ছে। কিন্তু এই প্রথম ১০ থেকে ১২ বছরের পর্যবেক্ষণের মধ্যে সূর্যের কর্মকাণ্ডে অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের নতুন এক তত্ত্বের মডেলের মাধ্যমে এ তথ্য উদঘাটন করা হয়। সূর্যের প্রতিটি চক্রে কেন এ অসঙ্গতি, তা এই মডেলে ব্যাখ্যা করা হয়নি।
তবে সৌর পদার্থবিদেরা বলছেন, সূর্যের ভেতরে থাকা উত্তপ্ত তরল আরো গভীরে চলে যাচ্ছে। সে কারণে সূর্যের আচরণে অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে গবেষক দল প্রধান ঝারকোভা বলেন, সূর্য থেকে আসা দুটি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের উপাদানের মধ্যে ভিন্নতা পাওয়া গেছে। ১০ থেকে ১২ বছরের পর্যবেক্ষণে এ তারতম্য ধরা পড়েছে। অথচ এর আগে ১৭২ বছর ধরে এই তরঙ্গের উপাদানে কোনো তারতম্য ধরা পড়েনি।
তিনি বলেন, তড়িৎচুম্বকীয় এই তরঙ্গ সূর্যের উত্তর ও দক্ষিণাংশ থেকে নির্গত হয়।
গবেষক ঝারকোভা বলেন, এই দুটি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা সূর্যের সৌরচক্রে তারতম্য লক্ষ করেছি। এই তরঙ্গ থেকেই আমরা সূর্যের প্রকৃত তথ্য জানতে পারি। আমাদের বিশ্লেষণ ৯৭ শতাংশই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ঝারকোভা এবং তার সহযোগী বিজ্ঞানীরা তাদের মডেল বিশ্লেষণে ‘প্রিন্সিপ্যাল কম্পোনেন্ট অ্যানালাইসিস’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের উপাদান পর্যবেক্ষণ করেন। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্র্র্র্নিয়া রাজ্যের উইলকক্স সোলার ওবজারভেটরি থেকে এ পর্যবেক্ষণ চালান। এই গবেষক দল ১৯৭৬ সাল থেকে ২০০৮ সালের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ পর্যবেক্ষণের তথ্যও বিশ্লেষণ করেন। এ সময় গবেষক দল সূর্যে পরিলক্ষিত কালোদাগের (স্পট) সংখ্যা, সৌরচক্রের তথ্যও বিশ্লেষণ করেন।
সব তথ্যই তাদের অনুমানের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে বলে জানান বিজ্ঞানী ঝারকোভা।
তিনি জানান, সৌরচক্র-২৫ -এর মাধ্যমে তারা জানতে পারেন, সূর্যের উত্তর ও দক্ষিণাংশের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গে তারতম্য বেড়েছে। এটা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এবং ২০২২ সাল নাগাদ তা চরমে পৌঁছাবে। সৌরচক্র-২৬ হবে ২০৩০ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে। এই সময় এই তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ দুটির মধ্যে আর সমন্বয় হবে না। সূর্যের কর্মকাণ্ডের অসঙ্গতি ব্যাপক হওয়ার কারণে এই পার্থক্য ঘটবে।
বিজ্ঞানী ঝারকোভা বলেন, এই তরঙ্গ দুটি একে অপরের প্রতিফলক বা আয়নার মতো। এই তরঙ্গের মধ্যে যত বেশি সমন্বয় ও সঙ্গতি থাকবে, সৌর কর্মকাণ্ড তত বেশি সুশৃঙ্খল হবে। আর তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ দুটির মধ্যে যত বেশি অসামঞ্জস্য বা অসঙ্গতি থাকবে, বুঝতে হবে সূর্যের ভেতরে তত বেশি অসঙ্গতি ঘটছে।
তিনি বলেন, ৩৭০ বছর আগেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।
তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পৃথিবীতে বরফ যুগ শুরু হওয়ার পাশাপাশি আর কী কী হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যার তথ্য সম্পর্কে জানা যায়নি। সেই সঙ্গে এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ কী হতে পারে, সে বিষয়েও তারা কিছু জানিয়েছেন কিনা তা সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করেনি।
ধারণা করা যায়, ২০৩০ সাল নাগাদ সূর্য কিছুটা অন্ধকারে ঢেকে গেলে পৃথিবীতে মিনি বরফ যুগের শুরু হবে। সেই সঙ্গে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পৃথিবী থেকে অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ হয়ত হারিয়ে যাবে। পৃথিবীর জীবনচক্রে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
এবি