সৈয়দপুর (নীলফামারী): পরিবারে অভাব লেগেই থাকতো সারা বছর। সংসার চালাতে বেশ কষ্ট হতো দিলীপ রায়ের।
বাড়ির পাশে নদী-নালা আর আর পুকুর থাকায় হাঁস পালনে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তার। বর্তমানে হাঁস পালন করেই স্বাবলম্বী তিনি। সেই সঙ্গে ঘুচেছে সংসারের অভাব-অনটন।
নীলফামারীর সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী বাঙালিপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার মাস্টারপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশে পুকুরে ও খেত-খামারে সাড়ে তিনশ’ হাঁস সাঁতরে বেড়াচ্ছে। এ দৃশ্য যে কারো নজর আকৃষ্ট করবে।
দিলীপ রায় চীনা ‘জেনডিং’ প্রজাতির এসব হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করেছেন বগুড়ার সান্তাহার থেকে। প্রতিটি বাচ্চা হাঁসের দাম পড়ে ৩৫ টাকা করে। জেনডিং প্রজাতির এ হাঁস দ্রুত বড় হয়। এদের খাদ্য চাহিদা কম এবং পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেয়। এ জাতের পুরুষ হাঁস কালো রঙের, গলায় চকচকে সবুজ পালক থাকে। আর স্ত্রী হাসি দেখতে ধুসর রঙের, পুরো শরীরে কালো কালো দাগ আছে। এসব হাঁস দেশি হাঁস থেকে সহজেই আলাদা করা যায়।
প্রায় নয় বছর ধরে এ হাঁস পালন করছেন দিলীপ রায়। সাড়ে চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে ডিম দেওয়া শুরু করে এরা। সাড়ে তিনশ’ হাঁস প্রতিদিন গড়ে দুইশ’ ডিম দেয়। প্রতিটি ৭/৮ টাকা করে ১ হাজার ৬০০ টাকা আয় করেন।
প্রতিদিনের খাবারের জন্য হাঁসের খাদ্য গম, ভুট্টা, সয়াবিন, প্রোটিন, খৈল, শামুক, ধানের গুড়া কিনতে খরচ হয় পাঁচশ’ টাকা। দেখাশোনার জন্য শরৎ (৪৫) নামে একজনকে কাজ দিয়েছেন। তাকে প্রতিদিন দুইশ’ টাকা করে দিতে হয়। মাঝে-মধ্যে হাঁসের ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা খাতে কিছু ব্যয় হয়। সব ব্যয় বাদ দিলে মুনাফা থাকে ৮/৯শ টাকা। এই টাকায় ছেলে-মেয়ের লেখাপড়াসহ সংসারের কাজে লাগান তিনি।
দিলীপ রায়ের স্ত্রী মুক্তা রায়, এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। বড় মেয়ে রংপুর কারমাইকেল কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে সৈয়দপুরের লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।
পৈত্রিক সূত্রে দিলীপ রায় পেয়েছেন মাত্র দেড় বিঘা জমি। এ জমি হালচাষ করে সংসার না চলায় হাঁস পালনে ঝুঁকে পড়েন তিনি। হাঁস রাখার জন্য ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে ছোট পুকুরের পানির উপরে তৈরি করেন বাঁশের তৈরি ঘর।
সকাল ৮টার দিকে ঘর থেকে হাঁস বের করে দেওয়া হয়। সারাদিন শরৎ হাঁসগুলোর সঙ্গে থাকেন। নদী-পুকুরে এগুলো সাঁতরে বেড়ায়। অনেক সময় পরিত্যক্ত খেতে-খামারে ঘুরে বেড়ায়। দিন শেষে ফিরে এলে হাঁসগুলোকে খাবার দেওয়া হয়।
সৈয়দপুর- পার্বতীপুর সড়কের পাশে কদমতলীতে এ হাঁসের খামার। হাঁসচাষ দেখতে আসেন পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। তার সফলতায় এলাকার বেশ কয়েকজন হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ হয়ে হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করে এ কাজে নেমে পড়েছেন।
দিলীপ রায়ের স্ত্রী মুক্তা রায় জানান, হাঁস পালনে প্রতিদিন নগদ টাকা পাওয়া যায়। ডিম ও হাঁস বিক্রি করার পাশাপাশি হাঁসের বিষ্টাও বিক্রি হয়ে থাকে। হাঁসের ঘর পরিষ্কার করার পর বিষ্টা নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। এসব বিষ্টা নিজের জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করেন। কেউ কেউ মাছের খাদ্য ও জমিতে ব্যবহারের জন্য প্রতিবস্তা (২৫ কেজি) ৫০/৬০ টাকায় কিনে নিয়ে যান। এতে আরও কিছু বাড়তি আয় হয়।
সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, হাঁস পালন লাভজনক হওয়ায় অনেকেই খামার গড়ে তুলেছেন এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
এমজেড/