ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

মৌমাছি বাঁচলে বাঁচবে মানুষ!

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৫
মৌমাছি বাঁচলে বাঁচবে মানুষ!

ঢাকা: আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে মৌমাছির গুরুত্ব যে কত বেশি, তা আমরা হিসাবেই রাখি না। কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে মৌমাছিকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে।



মানুষের খাদ্য সরবরাহে বিশ্বে মৌমাছির গুরুত্ব যে কত, তা আমরা সাধারণ মানুষেরা খোঁজই রাখিনা।

কুর্জ  সিগাট ইউটিউবে একটি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করে দেখিয়ে দিয়েছেন, পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখা কতটা জরুরি!

এই ভিডিও ক্লিপে দেখানো হয়েছে, মূলত প্যারাসাইট (পরজীবী প্রাণী), ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, কীটনাশক এবং মানুষের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে মৌমাছি।

মৌমাছি একগাছ থেকে আরেক গাছে পরাগায়ন কিংবা স্বপরাগায়নে সহায়তা করে। তারা ফুল থেকে রেণু নিয়ে (পায়ে-শরীরে রেণু লেপ্টে থেকে) অন্য ফুলে কিংবা একই ফুলে স্বপরাগায়নে বড় ভূমিকা রাখে। এতে করে নতুন গাছগাছালির জন্ম হয় এবং বৃদ্ধি পেয়ে পৃথিবী নামে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য রক্ষা হয়।

এ ছাড়া মৌমাছির কলোনি (উপনিবেশ-বাসস্থান) থেকে প্রাপ্ত মধু মানুষের জন্য মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। মধু অনেক রোগের হাত থেকে বাঁচায় মানুষকে।

এদিকে, গবেষকরা বলছেন, মৌমাছি ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করেছে। এর অন্যতম একটি কারণ কলোনি তৈরির সুযোগ পাচ্ছে না মৌমাছি। কলোনি ধ্বংস হয়ে গেলে মৌমাছির মৃত্যুও হতে পারে। এতে করে মৌমাছির সংখ্যা দিন দিন কমে যেতে পারে।

এ ছাড়া মৌমাছির শরীরে প্যারাসাইট মাইট (উঁকুন জাতীয় পরজীবী প্রাণী), ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক মৌমাছির শরীরে বাসা বাঁধে।   এদের কারণেও মৌমাছির মৃত্যু হয়।

আরো একটি কারণে মৌমাছির মৃত্যু হয়। তাহলো কীটনাশক ব্যবহারে। গাছে, ফলে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মৌমাছি মানুষের চোখের অন্তরালে মারা যাচ্ছে, মানুষ যা তাদের বোধে আনছে না।  

২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কৃষি দফতরের সহযোগিতায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় মৌমাছির ওপর পরিসংখ্যান চালায়। এতে দেখা যায়, গত নয় বছর ধরে ৪২ শতাংশ মৌমাছি তাদের বাসস্থান (কলোনি-উপনিবেশ) হারিয়েছে।

পরিসংখ্যান জানায়, সাধারণত গ্রীষ্মকালে মৌমাছি বেশি করে তার কলোনি হারায়।

এ বিষয়ে ডিসকভারি চ্যানেল জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাৎসরিক গবেষণাতে জানা যায়, ২০০৭ সালে ৩২ শতাংশ মৌমাছি তাদের কলোনি হারায়। এরপর ২০০৮ সালে ৩৬ শতাংশ মৌমাছি তাদের কলোনি হারায়। ২০০৯ সালে এ হার ২৯ শতাংশ এবং ২০১৫ সালের এপ্রিলে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ শতাংশে।

গবেষকরা মনে করছেন, ধীরে ধীরে মৌমাছি লুপ্ত হওয়ার বিষয়টি কৃষি-প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াছে।

মৌমাছির উপনিবেশ হারানোর হার বরং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতেই বেশি। মূলত, মধু আহরণের জন্য কলোনি থেকে বিতাড়ন মৌমাছির অস্তিত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ দাঁড়িয়েছে। কারণ, আরেকটি কলোনি তৈরির আগেই অনেক মৌমাছির মৃত্যু হয়।

এ ছাড়া ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী প্রাণীর কারণেও অনেক মৌমাছির প্রাণহানি ঘটে। সেই সঙ্গে কীটনাশক তো আছেই।

গবেষকরা বলছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, গাছগাছালির বংশবৃদ্ধি এবং মানুষের খাদ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে মৌমাছিকে লুপ্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে হবে। তা না হলে মৌমাছি না বাঁচলে মানুষের অস্তিত্বও এই গ্রহে বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।



বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৫
এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।