ঢাকা: বন্ধু মানেই মনের মিল। আবার মনের মিল না হলেও বন্ধুত্ব হয়।
বন্ধুত্বের এমন অনেক গল্প লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। ০২ আগস্ট (রোববার) বিশ্ব বন্ধু দিবসের এই দিনে আমরা জানবো ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বন্ধুত্বের গল্প।
হ্যারি হুডিনি ও আর্থার কোনান ডয়েল
জাদুকর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর হ্যারি হুডিনি ক্যারিয়ারের অর্ধেকটা সময়ই ব্যয় করেছেন অলৌকিক সব বিষয় নিয়ে। এদিকে, লেখক কোনান ডয়েলও অলৌকিকতায় বিশ্বাস করতেন। হয়তো এ কারণেই তাদের দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিলো। মূলত হুডিনির মা মারা যাওয়ার পর মৃত আত্মা ও মনোবিজ্ঞানের প্রতি তার অন্যরকম কৌতুহল জাগে। ডয়েলের প্রতি হুডিনির বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয় যখন ডয়েলের স্ত্রী প্রেত গবেষণার এক বৈঠকে উপস্থিত লেখার মাধ্যমে হুডিনির মৃত মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এ ঘটনার পর হুডিনি সায়েন্টিফিক আমেরিকান প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আধাত্মিক ক্ষমতা প্রদর্শনকারীদের মধ্যে নগদ পুরস্কার প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বের অনেক অমিমাংসিত রহস্যের মতো হুডিনি ও আর্থারের বন্ধুত্বও রহস্যই থেকে গেছে।
মেরিলিন মনরো ও এলা ফিটজেরাল্ড
১৯৫৫ সালে হলিউডের মোকাম্বো নাইটক্লাবে অসাধারণ পারফরমেন্সের পর জ্যাজ কুইন এলা ফিটজেরাল্ডের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। তবে তিনি কখনওই এখানে পারফর্ম করতে পারতেন না যদি মেরিলিন মনরো তার পাশে না থাকতেন। নাইট ক্লাবের মালিক এলার শো বুক করতে চাননি। যাই হোক, পরে মনরোর সাহায্যে তিনি সেখানে পারফর্ম করেন। তিনি এলাকে কথা দেন, যখন এলা পারফরর্ম করবেন তখন সে নিজে সামনের টেবিলে থাকবেন। এরপর থেকে আর এলাকে দ্বিতীয় শ্রেণির জ্যাজ ক্লাবে গাইতে হয়নি। সেই থেকেই তাদের ঘনিষ্টতা তৈরি হয়। এলা মেরিলিনের কাছে যেমন ঋণী ছিলেন, তেমনি মেরিলিন শুধু এলার সঙ্গীতের ভক্তই ছিলেন না, তার থেকে মেরিলিন শিখেছিলেন কীভাবে গান গাইতে হয়।
হেলেন কেলার ও মার্ক টোয়েন
বন্ধুত্বে নেই কোনো বয়সের তারতম্য। বিখ্যাত লেখিকা ও রাজনৈতিক কর্মী হেলেন কেলার ছিলেন মার্কিন রম্য লেখক ও সাহিত্যিক মার্ক টোয়েনের ভালো বন্ধু। মার্ক টোয়েন হেলেন কেলারের ৪৫ বছরের বড় ছিলেন। ১৮৯৪ সালে যখন তাদের দেখা হয় তখন হেলেন কেলার ছিলেন টোয়েনের মেয়ে জিন ক্লেমেনের বয়সী। তখন হেলেন কেলারের বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর আর টোয়েন ততদিনে ৫০-এ পা রেখেছেন। টোয়েনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত টিকে ছিল তাদের বন্ধুত্ব। হেলেন কেলারের মতে, অন্ধত্ব বিষয়টি কেমন হতে পারে তা টোয়েন বুঝতেন। তিনি কখনও অামাকে এ বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে ফেলেননি ও আমাকে অসহায়বোধ করতে দেননি। ১৮৯২ সালে হেলেন কেলারের ‘দ্য ফ্রস্ট কিং’ গল্পটিকে মার্গারেট ক্যানবির ‘ফ্রস্ট ফেইরি’র রচনা চুরি বলে অভিযুক্ত করা হলে তিনি পারকিন্স স্কুল ছাড়েন। তখন টোয়েন তার পক্ষ নেন ও চিঠিতে হেলেন কেলারকে তার লেখার প্রশংসা করেন।
রিচার্ড ফ্রান্সিস বার্টন ও জিয়াকোমেতি প্রোজারস
নৃবিজ্ঞানী ও উনিশ দশকের এ পরিব্রাজক ব্যক্তিগত জীবনে কারও সঙ্গেই সেভাবে মিশতেন না। এমনকি নিজের পরিবারের সঙ্গেও তেমন খোলামেলা ছিলেন না তিনি। কিন্তু তার একটি বন্ধুত্ব সবাইকে রীতিমতো অবাক করেছে। ঊনিশ শতকের এক অদ্ভূত স্বভাবের নারী জিয়াকোমেতি প্রোজারস লন্ডনের ক্যাবগুলোর ওপর কী কারণে এত ক্ষেপে ছিলেন কে জানে! ড্রাইভাররা তার কাছে পুরো ভাড়া চাওয়ার আগেই গাড়ি থামাতে বলতেন। যদি কোনো ড্রাইভার বেশি ভাড়া তুলতে কয়েক ফুট বেশি এগুতো আর পুরো ভাড়া চাইতো, তাহলেই সেরেছে। সোজা আদালত। তিনি পঞ্চাশজন ড্রাইভারদের এভাবে ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ও এ বিষয়ে তার বন্ধু বার্টন তাকে পরামর্শ দিতেন।
টি এস এলিয়ট ও গ্রচো মার্ক্স
কবি, নাট্যকার সাহিত্য সমালোচক ও বিংশ শতকের অন্যতম প্রতিভাশালী কবি টি এস এলিয়ট ও হাস্যরসাত্মক অভিনেতা গ্রচো মার্ক্সে বন্ধুত্বটি হয়েছিল চিঠির মাধ্যমে। এলিয়ট ‘মার্ক্স ব্রাদার্সের’ বিশাল ভক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৬১ সালে গ্রচো মার্ক্সকে তার অটোগ্রাফ সমেত একটি ছবি চেয়ে চিঠি লেখেন। গ্রাচো অবিলম্বে তার চিঠির উত্তর দেন। এরপর তারা তিন বছর চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করেন এবং এক অপরের কাজে উৎসাহ ও প্রশংসা যোগান। পরে ১৯৬৪ সালে তাদের প্রথম সামনা-সামনি দেখা হয়। দেখা হওয়ার পর মার্ক্স এলিয়টের লেখা ও কবিতা নিয়ে কথা বলায় আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু এলিয়ট মার্ক্স ব্রাদার্সের পুরোনো ছবি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু এলিয়ট যা জানতে চাইলেন তা মার্ক্স সেগুলো মনে করতে পারেননি। এরপর এলিয়ট আর আগ্রহী হননি মার্ক্সের মুখে নিজের কবিতা শুনতে। এ ঘটনার পর তাদের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
বায়লাদেশ সময়: ০৩৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৫
এসএস