ঢাকা: বন্ধু মানেই মনের মিল। আবার মনের মিল না হলেও বন্ধুত্ব হয়।
বন্ধুত্বের এমন অনেক গল্প লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। ০২ আগস্ট (রোববার) বিশ্ব বন্ধু দিবস উপলক্ষে আমরা জানবো ইতিহাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বন্ধুত্বের গল্প।
এমিলি ডিকিনসন ও থমাস ওয়েন্টওর্থ হিগিনসন
লেখক, সাহিত্য সমালোচক ও মন্ত্রী থমাস ওয়েন্টওর্থ হিগিনসন ছিলেন আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম অত্যন্ত প্রভাবশালী কবি এমিলি ডিকিনসনের গুরু। তিনি এমিলির লেখা সম্পাদনা করতেন। ১৯৬২ সালে হিগিনসন মাসিক আটলান্টিকে উঠতি লেখকদের অনুপ্রেরণা যোগাতে ‘লেটার টু এ ইয়ং কন্ট্রিবিউটর’ নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধটি পড়ার পর এমিলি ডিকিনসন তাকে নিজের কয়েকটি কবিতাসহ একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে সেগুলোর সমালোচনা করতে বলেন, পরামর্শ চান ও প্রয়োজনবোধে সম্পাদনা করারও অনুরোধ করেন। সে থেকেই শুরু হয় তাদের বন্ধুত্ব। যা টিকে ছিল এমিলির মৃত্যু পর্যন্ত। হিগিনসন রীতিমতো এমিলির লেখার ভক্ত হয়ে ওঠেন ও নিয়মিত তাকে পরামর্শ দিতেন। এমিলির মৃত্যুর পর পাঠক দুনিয়ায় তার কাব্যিক দক্ষতা প্রকাশ পায়। হিগিনসন ও সহলেখক মেবল লুমিস এমিলি ডিকসনের কবিতার প্রথম ভলিউম সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন।
ইউলিসিস এস . গ্র্যান্ট ও জেমস লংস্ট্রিট
দুজনই ছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীর জেনারেল। যুক্তরাষ্ট্র মিলিটারি একাডেমিতে তারা ছিলেন একসঙ্গে। স্নাতক শেষ করে গ্র্যান্ট ও লংস্ট্রিট ফোর্থ ইউ. এস পদাতিক সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মেক্সিকান যুদ্ধে তারা একসঙ্গেই ছিলেন। গৃহযুদ্ধের সময়ও তারা বিপক্ষের সঙ্গে এক জোট হয়ে যুদ্ধ করেছেন।
লংস্ট্রিটের মতে, তাদের দু’জনের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল ১৮৩৯ সালে একাডেমি ক্যাডেট হিসেবে কাজ করার সময়। গৃহযুদ্ধের সময় লংস্ট্রিট খুব দ্রুত সেনা কর্মকর্তা রবার্ট ই. লির বিশ্বাসভাজন মিত্রদের একজনে পরিণত হন। লি তাকে ‘ওল্ড ওয়ার হর্স’ বলে ডাকতেন। পরে লংস্ট্রিট গ্রান্টকে প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে দেখে লিকে মধ্য ভার্জিনিয়ার এপোমেটোক্সে আত্মসমর্পণ করার জন্য বোঝাতে শুরু করেন। গ্র্যান্ট ন্যয্য শর্ত দেবেন এ বিশ্বাসে লংস্ট্রিট এ কাজটি করেন। যুদ্ধের পর গ্র্যান্ট ও লংস্ট্রিটের বন্ধুত্ব আবার পূনরুজ্জীবিত হয়। লংস্ট্রিট মধ্য ফ্রান্সের অর্লিন্সে যান ও পুরোনো বন্ধু জেনারেল গ্র্যান্টের অনুমোদনে রিপাবলিকান পার্টির বিশেষ সদস্যপদ নেন। পালাক্রমে পরে গ্রান্ট প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ালে লংস্ট্রিট তাকে সাহায্য করেন।
টম জোনস ও লেডি রোথেস
১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল। টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার পর নাবিক থমাস উইলিয়াম জোনস ও ১৯ শতকের লন্ডনের প্রভাবশালী সম্ভ্রান্ত নারী লুসি নোয়েল মার্থা ওরফে লেডি রোথেস ছিলেন একই যাত্রীবাহী লাইফবোটে। থমাস ছিলেন এই বোটের দায়িত্বে। যখন যাত্রী নেওয়ার কথা হচ্ছিলো তখন থমাস শুধু লেডি রোথের নাম বলেছিলেন। লেডি রোথেসের সাহায্য ছাড়া তার পক্ষে কার্পেথিয়াতে পৌঁছানো কঠিন ছিল। কারণ, থমাস ছাড়া লেডি রোথেস ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি নৌ সংক্রান্ত যেকোনো বিষয় জানতেন।
ল্যারি ফ্লিন্ট ও জেরি ফলওয়েল
দু’জনেই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ল্যারি ফ্লিন্ট আমেরিকান প্রকাশক ও লেরি ফ্লিন্ট পাব্লিকেশনের প্রেসিডেন্ট। ২০০৩ সালে এরিনা ম্যাগাজিন তাকে ৫০ জন ক্ষমতাশীল ব্যক্তিদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। অন্যদিকে, রক্ষণশীল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক জেরি ফলওয়েল ছিলেন একজন ব্যাপ্টিস্ট ধর্মযাজক। সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দু’টি মানুষের বন্ধুত্ব হলো কী করে তা আশ্চর্যজনক। তাদের প্রথম দেখা হয় ১৯৯৭ সালে। ধর্ম ও রাজনীতি বিষয়ে তাদের দু’জনের অভিমতই আলাদা। কিন্তু তা হলেও বড়দিনের কার্ড দেওয়া-নেওয়া থেকে শুরু করে ডায়েট টিপস, সবই নিজেদের মধ্যে বিনিময় করছেন তারা।
স্যামুয়েল বেকেট ও আন্দ্রে দ্য জায়ান্ট
একজন আইরিশ ঔপন্যাসিক ও এক ফরাসি রেসলার একসঙ্গে বারে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। একটু বেখাপ্পা লাগলেও এটাই সত্যিই। ১৯৫৩ সালে নাট্যকার, কবি ও নোবেল পুরস্কারজয়ী স্যামুয়েল বেকেট প্যারিসের কাছে জমি কেনার পর ফ্রান্সে যান। স্থানীয়দের সহযোগিতায় সেখানে একটি বাড়িও তৈরি করেন। স্থানীয়দের মধ্যে বুলগেরিয়ার বরিস রুসিমল্ফ নামে একজন ছিলেন তার কার্ড খেলার সঙ্গী। বরিসের ছেলে আন্দ্রে জাইগান্টিজমে (হরমোনের অতিবৃদ্ধিজনিত রোগ) ভুগছিলেন। মাত্র বারো বছর বয়সেই তার উচ্চতা ছিল ছয় ফুট তিন ইঞ্চি ও ওজন ছিল ১শ ১০ কেজি। ফলে আন্দ্রে স্কুল বাসে চড়তে পারতেন না। মানে তার জায়গা হতো না। বেকেট তখন আন্দ্রেকে নিজস্ব ট্রাকে করে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতেন। পরে আন্দ্রে একজন সফল রেসলার ও অভিনেতা হন। বেকেটের সঙ্গে আন্দ্রের স্কুলে যাওয়ার সময়টি ছিল অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ সময়ই তারা দু’জন ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতেন। আন্দ্রে হচ্ছেন একমাত্র ব্যক্তি জিনি ড্রাইভার হিসেবে একজন নোবেল বিজয়ীকে পেয়েছিলেন।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৫
এসএস
** ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব-১