ঢাকা: আজ থেকে দুইশো কোটি বছর আগে মহাবিশ্ব থেকে যে পরিমাণ শক্তি (এনার্জি) উৎপন্ন হতো, বর্তমানে এর অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে।
সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখলে, এটি তেমন কোনো বড় বিষয় নয়।
সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপগুলো দিয়ে মহাবিশ্বের শক্তি (এনার্জি অব দ্য ইউনিভার্স) পরিমাপে নেমেছিলেন। বিশ্লেষণ শেষে এমনই উপসংহার টানলেন তারা।
শোনা যাক গ্যালাক্সি অ্যান্ড ম্যাস অ্যাসেম্বলির (গ্যামা) প্রধান ড. সাইমন ড্রাইভারের মুখে, এ পরীক্ষায় আমরা অসংখ্য শক্তিশালী মহাশূন্য ও ভূপৃষ্ঠভিত্তিক টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছি। প্রায় দুই লাখেরও বেশি নক্ষত্র ও ছায়াপথের উপর পরীক্ষা চালিয়েছি আমরা।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, ১৩শ ৮০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাংয়ের পর থেকে আজ অব্দি অনেক নক্ষত্রের শক্তি তার ভরের সমান থেকে গেছে। এ নক্ষত্রগুলো যখন জ্বলে ওঠে তখন আইনস্টাইনের সূত্র E=mc2 [শক্তি (E)= ভর (m) x আলোর গতি (c)] অনুযায়ী এর ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
তখন এই শক্তিরা মহাশূন্যের নানা জায়গায় আঘাত আঘাত করার মধ্য দিয়ে জন্ম দেয় নতুন শক্তির। এরা বিভিন্ন ছায়াপথ বা আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থানের মধ্য দিয়ে পরিভ্রমণের সময় ধূলিকণার মাধ্যমে শোষিত হয়। এভাবেই দিন দিন কমে যাচ্ছে মহাবিশ্বের শক্তি।
জোতির্বিজ্ঞানীরা অবশ্য বিষয়টি আগেই আলোচনায় এনেছিলেন। তাদের মতে, ১৯৯০ সালের শেষ দিক থেকেই নক্ষত্ররাজিরা স্তিমিত হতে শুরু করেছে।
এ বিষয়ে নাসারও প্রায় একই মত। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির সঙ্গে এ মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি এক যৌথ গবেষণার পর জানিয়েছে, মহাবিশ্বের শক্তি প্রায় ২১ রকম ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মাধ্যমে নিঃশেষিত হচ্ছে।
হিট ডেথের ব্যাপারটিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। সহজে বললে, ভবিষ্যতে কোনো একসময় (যদি অন্য কোনো কারণে মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে না যায়) এন্ট্রপির মান সর্বোচ্চ হয়ে যাবে। এক কথায় এনট্রপি হচ্ছে, অপচয় হওয়ে যাওয়া শক্তি। এর মানে, তখন আমাদের মহাবিশ্বে ব্যবহারযোগ্য আর কোনো তাপশক্তি থাকবে না। এটিকে বলা হয় মহাবিশ্বের তাপীয় মৃত্যু (হিট ডেথ থিওরি)।
মহাবিশ্বের এই ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়াকে ড. সাইমন অবশ্য দারুণভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, মহাবিশ্ব এখন সোফায় বসে গায়ে চাদর জড়িয়ে অনন্ত তন্দ্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৫
এসএস